ঢাকা: নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উত্তরা ফ্ল্যাট প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় দাম বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।
রোববার (১১ জানুয়ারি) বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি’র ৭ম বৈঠক এ সিদ্ধান্ত হয়।
উত্তরা ফ্ল্যাট প্রকল্পের কাজ যথা সময় শেষ না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে কমিটি সভাপতি মো. দবিরুল ইসলাম বলেন, সংসদীয় কমিটির সুপারিশগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন না করায় নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে না। আগামীতে প্রকল্পের কাজ যেন নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় সে ব্যাপারে মন্ত্রণালয়কে সর্তক করা হয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ফ্ল্যাট প্রকল্পে দাম বাড়ানোর ফলে ফ্ল্যাটপ্রাপ্তদের বাড়তি টাকা গুনতে হবে।
উত্তরা ফ্ল্যাট প্রকল্পে ৯টি লটে (এক লট সমান ৩টি ভবন) কাজ করার কার্যাদেশ দেয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
প্রকল্পের ‘এ’ ব্লকে এক হাজার ২৫০ বর্গফুট আয়তনের ছয় হাজার ৬৩৬টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করার কথা। এই ছয় হাজার ৬৩৬টি ফ্ল্যাট লটারি করে সাধারণ মানুষকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাদ্দপ্রাপ্তদের সবাইকে জামানতের তিন লাখ এবং প্রথম কিস্তির ছয় লাখ ৭১ হাজার মিলিয়ে মোট নয় লাখ ৭১ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে গত বছর ৩১ মে’র মধ্যে।
ফ্ল্যাটের নির্মাণকাজ শেষ করার কথা ছিলো ২০১৪ সালের মধ্যে, আর বরাদ্দপ্রাপ্তদের বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ২০১৬ সালের মধ্যে।
এনা-ডুঙ্গা এ এইচ কনস্ট্রাকশন ফার্মের সঙ্গে রাজউকের চুক্তি হয় ২০১১ সালে ২০ ডিসেম্বর। এনা প্রপার্টিজের সঙ্গে কোরিয়ার অপর একটি প্রতিষ্ঠান ডিডিজে যৌথভাবে ‘এনা-ডিডিজে কনস্ট্রাকশন ফার্ম’ নামে এই প্রকল্পে আরও পাঁচটি লটে ১০টি ভবন তৈরির কাজ নিলেও এনা ও ডুঙ্গা বাড়তি অর্থ বরাদ্দের দাবি করে কাজ বন্ধ রাখে। পরে তাদের সাথে করা চুক্তি বাতিল হয়। এখন কিছু অংশের কাজ করছে রাজউক ও পিডব্লিউডি। অন্যগুলোর জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিলো।
রাজউক সূত্রে জানা গেছে, চুক্তিবদ্ধ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজের বিষয়ে মৌখিক ও লিখিতভাবে কয়েক দফা তাগিদ দেওয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী তাদের মাঠপর্যায়ে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, মালামাল ও কারিগরি জনবল নিয়োজিত করার কথাও বলা হয়। কিন্তু তারা তাদের সেই চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়ন করেনি।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সরকারি আবাসন পরিদপ্তরের আওতাভুক্ত সকল ধরণের সরকারি কোয়ার্টারের বরাদ্দ প্রদান সংক্রান্ত তথ্যের কম্পিউটারাইজড ডাটাবেইজ তৈরির নির্দেশ দিয়েছে কমিটি। এছাড়া সরকারি কোয়ার্টারে সাবলেট/ভাড়া রোধের উপায় খুঁজে বের করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন কোয়ার্টার তৈরি প্রস্তাব করা হয়। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সমস্যা সমাধানে আরও বেশি পরিমাণে ফ্ল্যাট নির্মাণের পরামর্শ প্রদান করে কমিটি।
রাস্তা, খাল, জলাশয় এবং খাস জমিতে নির্মিত ৩৫টি স্থাপনার রাজউক অনুমোদিত নকশা দাখিলের জন্য ভবন মালিকদের নিকট পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। নকশা প্রাপ্তির পর রাজউক কর্তৃক স্থাপনাসমূহ পরীক্ষাপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানানো হয় বৈঠকে।
কমিটি টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন এবং বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে প্রয়োজনে ইজতেমা ময়দানের পাশে জমি অধিগ্রহণের পরামর্শ প্রদান করে এবং ইজতেমা ময়দান থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের সুপারিশ করে।
কমিটি সরকারি আবাসন পরিদপ্তরের বিরুদ্ধে বরাদ্দ গ্রহণকারী কর্তৃক দায়েরকৃত মামলাসমূহ দ্রুত নিষ্পত্তিতে আইনজীবী নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ প্রদান করে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, এ, কে, এম ফজলুল হক, আবু সালেহ মোহাম্মদ সাঈদ (দুলাল) এবং নূর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরী।
এছাড়াও গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দিন আব্দুল্লাহসহ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৪