ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

উদ্বিগ্ন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৫
উদ্বিগ্ন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

ঢাকা: সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগকে না জানিয়ে রোহিঙ্গা এলাকায় উন্নয়নমূলক কাজে অর্থায়ন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

রোববার (১১ জানুয়ারি) বিকেল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কূটনৈতিক ব্রিফিংয়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও দাতাসংস্থাদের কাছে এ উদ্বেগ জানানো হয়েছে।



একই সঙ্গে ভবিষ্যতে এ এলাকায় অর্থায়নের আগে প্রচলিত আইন অনুযায়ী সব তথ্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও মন্ত্রণালয়কে অবগত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি বৈঠকে রোহিঙ্গা নিয়ে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখার আহ্বানও জানানো হয়।

বিকেল ৩টায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ কূটনৈতিক ব্রিফ্রিংয়ে আয়োজন করা হয়। প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী এ ব্রিফ্রিংয়ে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকারের নেওয়া জাতীয় কৌশল পত্রের আলোকে গত এক বছরের বিভিন্ন পদক্ষেপগুলো বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও দাতাসংস্থার প্রতিনিধিদের কাছে তুলে ধরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

স্পেন, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, ফ্রাস, আইওএম, যুক্তরাষ্ট্র, ডেনমার্কসহ সংশ্লিষ্ট মিশনগুলোর রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও প্রধানরা ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে কূটনৈতিকদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক। এ সময়ে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে কূটনৈতিকদের হালনাগাদ তথ্য দেওয়া হয়েছে বলে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান পররাষ্ট্র সচিব।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পাবর্ত্য অঞ্চলে বিভিন্ন দূতাবাস নিজ দাতাসংস্থার মাধ্যমে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের পূর্নবাসনে কাজ করে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগকে না জানিয়েই চলছে এ কার্যক্রম। বিষয়টি নিয়ে সরকারের উদ্বেগের কথাই জানানো হয়েছে কূটনৈতিকদের।

২০১২ সালে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা যুক্তরাজ্য ভিত্তিক মুসলিম এইড, হল্যান্ড ভিত্তিক এসিএফ এবং ফান্সের এমএসএফ এর কার্যক্রম কক্সবাজার এলাকায় বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ দাতা সংস্থাগুলো শুধুমাত্র রোহিঙ্গা এলাকাতেই কাজ করতে বেশি আগ্রহী বলে অভিযোগ আনা হয়। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে দাতা সংস্থাগুলোর কাজ করার অনুমুতি না থাকলেও তারা সেখানে তাদের বিশুদ্ধ খাবার পানি ও পরিচ্ছন্ন পয়নিষ্কাশনে অর্থায়ন করছিল।

দাতা সংস্থাদের অর্থায়নে আরো স্বচ্ছতা ও তাদের কার্যক্রমে দায়বদ্ধতা আনতে ফরেন ডোনেশন রেগুলেশন প্রণয়ন করেছে সরকার। এছাড়া জাতিসংঘে মানবাধিকার কমিশনে ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ অধিবেশনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলোকে রোহিঙ্গা সহায়তা দেওয়ার অনুমতি দেওয়ার সুপারিশ করেছিলো যুক্তরাষ্ট্র। তবে বাংলাদেশ তা নাকচ করে দেয়।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অগ্রগতির বিষয়টি তুলে ধরা হয়। মিয়ানমারের শর্ত অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের হালনাগাদ তথ্য কূটনৈতিকদের দেওয়া হয়।

প্রথম পর্যায়ে কুতুপালং ও নোয়াপাড়া উদ্বাস্তু শিবিরে অবস্থানরত দুই হাজার ৪১৫ জনকে প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে ব্রিফিংয়ে জানানো হয়।

উদ্বাস্তু শিবিরের প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গার মধ্যে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এ ক’জনকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য ছাড়পত্র দিয়েছে।

দীর্ঘ নয় বছর বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে সম্মত হয়েছে মিয়ানমার। ২০১৪ সালের ৩১ আগস্ট বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যকার বৈঠকে এ বিষয়ে সম্মত হয়েছে মিয়ানমার। ২০০৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। জাতিগত ও রাজনৈতিক সংঘাতের কারণে প্রায় দুই দশক আগে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ শুরু করে।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারের কুতুপালং ও নয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরে নিবন্ধিত ৩২ হাজার রোহিঙ্গা রয়েছে। এর বাইরে আরও প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছে। বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে রোহিঙ্গারা বিদেশে যাচ্ছে, সেখানে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে তারা দেশের দুর্নামও বাড়াচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ০২২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।