মাগুরা: বু’রে.. তুই ভালো করে লেখাপড়া কর। এবার বরুলের মেলায় তোর চুড়ি-ফিতা-লিপিস্টিক যা লাগে সব কিনে দেব।
গত মঙ্গলবার (৬ জানুয়ারি) রাতেও বাড়িতে একমাত্র আদরের ছোট বোন সাথীর সঙ্গে যশোর থেকে মোবাইল ফোনে এসব কথা বলেন অবরোধের আগুনে পুড়ে নিহত বাস শ্রমিক মুরাদ হোসেন মোল্লা (২০)।
ওই রাতেই তার গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিলে পুড়ে মারা যায় মুরাদ। এর সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্যু হয় তাকে অবলম্বন করে তার পরিবারের হাজারো স্বপ্ন।
জানা যায়, অন্যান্য দিনের মতোই কাজ শেষে বাসের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েন হেলপার মুরাদ মোল্যা। ভোরের দিকে পার্কিং করা গাড়িতে আগুন দিয়ে দুর্বৃত্তরা। এতে ঝলসে যায় মুরাদের শরীরের ৩৭ শতাংশ। রোববার (১১ জানুয়ারি) সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুরাদের মৃত্যু হয়।
সোমবার ভোরে মুরাদের মৃতদেহ গ্রামের বাড়ি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার উত্তর মৌশা গ্রামে পৌঁছায়। সকালে স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
মুরাদের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। বাবা-মা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে তাদের বোবা কান্নায়। সান্ত্বনা দিচ্ছেন আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা।
গরীর দিনমজুর তোরাব মোল্যার ছেলে মুরাদ। তারা তিন ভাই ও এক বোন ছাড়াও বাবা-মা ও দাদাকে নিয়ে সংসার। বাবা তোরাব মোল্যা বছরের কয়েক মাস অন্যের জমিতে শ্রমিকের কাজ করেন, বাকি সময় রিকশা চালান। মা নূরজাহান অন্যের বাড়িতে ঝিঁয়ের কাজ করেন। মাত্র সাত শতক জমির ওপর একটি ঝুঁপড়ি ঘরই তাদের সম্বল।
মুরাদের দাদা খালেক মোল্যা বাংলানিউজকে জানান, দারিদ্রের কারণে মাত্র ৮ বছর বয়সে ঘর ছাড়ে মুরাদ। যশোর গিয়ে বাসের হেলপার হিসেবে কাজ শুরু করে সে। গাড়িতেই চাকরি, গাড়িতেই খাওয়া, সেখানেই ঘুম। প্রথম অবস্থায় কোনো টাকা পয়সা না পেলেও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে গত কয়েক বছর ধরে আস্তে আস্তে কিছুটা অর্থের মুখ দেখতে শুরু করে সে। ছোট ভাই-বোনকে লেখাপড়া শেখানো, এক টুকরো জমি কিনে পাকা ঘর তৈরি এমন হাজারো স্বপ্ন ছিল তার। তাকে ঘিরেই একই স্বপ্ন দেখতো তার পরিবার।
তিনি আরো জানান, চালক হিসেবে মুরাদের আবেদন বিটিআরসিতে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কিন্তু রাজনীতির নামে আগুনে পুড়ে নিঃশেষ হয়ে গেছে মুরাদের সে স্বপ্ন।
মুরাদের ফুফু রিজিয়া বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমরা গরীব মানুষ। কাজ করব, খাব। কাজ না করলে আমাগের খাবার নেই। যে রাজনীতি গরীর মানুষের মুখের ভাত কেড়ে নেয়, জীবন কেড়ে নেয়। সে রাজনীতি দিয়ে আমাগের কি হবে?
স্থানীয় শ্রমিক নেতা সুজন মিয়া বাংলানিউজকে জানান, মুরাদই ছিল তার পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাকে হারিয়ে পরিবারটি অসহায় অবস্থায় পড়েছে। সরকার যেন উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিয়ে তার পরিবারটিকে বেঁচে থাকতে সহযোগিতা করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৫