ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মুজাহিদের আপিল শুনানি শুরু বুধবার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৫
মুজাহিদের আপিল শুনানি শুরু বুধবার আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ

ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের আপিল মামলার শুনানি শুরুর জন্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় এসেছে।

বুধবার (১৪ জানুয়ারি) বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৪ সদস্যের বেঞ্চে এ শুনানি শুরু হবে।

বেঞ্চের অপর তিন বিচারক হচ্ছেন বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
 
মঙ্গলবার (১৩ জানুয়ারি) প্রকাশিত আপিল বিভাগের বুধবারের কার্যতালিকার ৪ নম্বরে এ শুনানি রাখা হয়েছে।

গত বছরের ৩ ডিসেম্বর শুনানি শুরুর এ দিন ধার্য করেছিলেন প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ।

শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও আসামিপক্ষে খন্দকার মাহবুব হোসেন নেতৃত্ব দেবেন।

মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে ২০১৩ সালের ১১ আগস্ট আপিল বিভাগে আপিল করেন তিনি। মুজাহিদের পক্ষে আপিল বিভাগে আপিল আবেদনটি করেন তার আইনজীবীরা। ওই বছরের ১৭ জুলাই মুজাহিদকে এ মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।

ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে ১১৫টি যুক্তি নিয়ে আপিল করেন মুজাহিদ। মূল আপিল ৯৫ পৃষ্ঠার, এর সঙ্গে ৩ হাজার ৮০০ পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট দাখিল করা হয়।

মুজাহিদকে নির্দোষ দাবি করে ট্রাইব্যুনালের সাজা বাতিল করে খালাস চেয়ে পুরো রায়ের বিরুদ্ধে এ আপিল করা হয়। ট্রাইব্যুনাল যেসব কারণে সাজা দিয়েছেন, তার আইনগত ও ঘটনাগত ভিত্তি নেই বলেও আপিলে দাবি করেন তিনি।

২০১৩ সালের ১৭ জুলাই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের ট্রাইব্যুনাল।

মুজাহিদের বিরুদ্ধে আনা ৭টি অভিযোগের মধ্যে ৫টি প্রমাণিত হয়েছে এবং ২টি প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পারেননি বলে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১, ৩, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে এবং ২ ও ৪ নম্বর অভিযোগ প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পারেননি। প্রমাণিত ১ নম্বর অভিযোগকে ৬ এর সঙ্গে সংযুক্ত করে এ দু’টি অভিযোগে সমন্বিতভাবে ও ৭ নম্বর অভিযোগে মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড, ৫ নম্বর অভিযোগে যাবজ্জীবন এবং ৩ নম্বর অভিযোগে ৫ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। প্রমাণিত না হওয়া ২ ও ৪ নম্বর অভিযোগে খালাস পেয়েছেন মুজাহিদ।

১ নম্বর অভিযোগে ছিল, শহীদ সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেন হত্যা ও ৬ নম্বর অভিযোগে ছিল সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটিতে থাকা নেতা হিসেবে গণহত্যা সংঘটিত করা, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করা, হত্যা, নির্যাতন, বিতাড়ন ইত্যাদির ঘটনা।

প্রথম অভিযোগে শহীদ সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেন হত্যার ঘটনায়ও তার সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি (উর্ধ্বতন নেতৃত্ব) দায় ছিল বলে উল্লেখ করা হয় রায়ে। ৭ নম্বর অভিযোগে ছিল, ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার বকচর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ ও গণহত্যার ঘটনা। এসব অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে উল্লেখ করে মুজাহিদকে ফাঁসির আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এসব অভিযোগ প্রসিকিউশন সুষ্পষ্টভাবে প্রমাণ করতে পেরেছেন বলে ট্রাইব্যুনালের রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রমাণিত ৫ নম্বর অভিযোগে ঢাকার নাখালপাড়ায় পুরোনো এমপি হোস্টেলে শহীদ সুরকার আলতাফ মাহমুদসহ কয়েকজন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার দায়ে মুজাহিদকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এছাড়া প্রমাণিত ৩ নম্বর অভিযোগে ফরিদপুর জেলার কোতোয়ালি থানার গোয়ালচামট এলাকার (রথখোলা) মৃত রমেশ চন্দ্র নাথের পুত্র রণজিৎ নাথ ওরফে বাবু নাথকে আটক ও নির্যাতনের দায়ে ৫ বছরের কারাদণ্ডাদেশ পেয়েছেন মুজাহিদ।

অন্যদিকে প্রমাণিত না হওয়া ২ নম্বর অভিযোগে ফরিদপুর জেলার চরভদ্রাসন থানায় বিভিন্ন গ্রামে হিন্দুদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও গণহত্যার অভিযোগ এবং ৪ নম্বর অভিযোগে কোতোয়ালি থানার গোয়ালচামট এলাকার মোঃ আবু ইউসুফ ওরফে পাখিকে আটক ও নির্যাতনের অভিযোগ থেকে খালাস পান মুজাহিদ।

ট্রাইব্যুনাল থেকে রায় ঘোষিত ১৫টির মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এ পর্যন্ত এসেছিল ১০টি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা। এর মধ্যে সাজা ঘোষিত দুই যুদ্ধাপরাধী দণ্ড ভোগরত অবস্থায় মারা যাওয়ায় তাদের আপিল মামলার শুনানি হবে না।

অন্য আটটি আপিল মামলার তিনটির চূড়ান্ত রায় ঘোষিত হয়েছে। এসব রায়ের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল থেকে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার সাজা বাড়িয়ে ফাঁসির আদেশ দেন আপিল বিভাগ, যা কার্যকর হয়েছে।

অন্যদিকে ট্রাইব্যুনাল থেকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডাদেশ পেলেও জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। জামায়াতের অপর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল রাখা হয়েছে। এ দুই আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় এখনও প্রকাশিত হয়নি।
 
৯০ বছরের কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম ও আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা সাবেক মন্ত্রী আব্দুল আলীম আপিল বিভাগে আপিল করলেও দণ্ড ভোগরত অবস্থায় স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে তাদের। ফলে তাদের আপিল অকার্যকর ঘোষণা করা হয়েছে।

এ দু’জনের আপিল শুনানি না হওয়ায় আপিল দায়েরের ক্রমানুসারে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মুজাহিদের আপিল মামলার শুনানি।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরী, জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলী এবং আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা ও জামায়াতের সাবেক রোকন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোবারক হোসেনের চার আপিল মামলার শুনানি শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে।

সর্বশেষ রায় ঘোষিত ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম ও জাতীয় পার্টির সাবেক প্রতিমন্ত্রী সাবেক এমপি সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার তাদের রায় ঘোষণার একমাসের মধ্যে আপিল করার সুযোগ পাবেন।

অন্য তিনটি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত ৪ আসামি জামায়াতের সাবেক রোকন (সদস্য) আবুল কালাম আজাদ বাচ্চু রাজাকার,  বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকারী জামায়াত নেতা আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মাঈনুদ্দিন এবং ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র ও পৌর বিএনপির সহ সভাপতি পলাতক জাহিদ হোসেন খোকন রাজাকার পলাতক থাকায় আপিল করেননি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।