বাগেরহাট: টানা অবরোধে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মৎস্য আড়ৎগুলোর (বিক্রয় কেন্দ্র) কেনাবেচায় ধস নেমেছে। ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন মৎস্য চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
বিএনপির ডাকে ৫ জানুয়ারি থেকে চলা অনির্দিষ্টকালের অবরোধের কারণে পরিবহন সংকট চরমে উঠেছে। এ অবস্থায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বৃহৎ মৎস্য আড়ৎগুলোতে সাদা মাছের বেচাকেনা নেমে এসেছে অর্ধেকেরও নিচে।
এই এলাকায় চিংড়ি ব্যতিত চাষ করা সব ধরনের মাছই (পাঙ্গাস, রুই, কাতল, ট্যাংরা, সরপুটিসহ বিভিন্ন মাছ) সাদা মাছ নামে পরিচিত।
এই অঞ্চলের সাদা মাছের সবচেয়ে বড় বিক্রয় কেন্দ্র হলো-বাগেরহাট সদর উপজেলার বারাকপুর ও জেলার ফকিরহাট উপজেলার ফলতিতা মৎস্য আড়ৎ।
এখানকার মাছ ব্যবসায়ী ও চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিন কমপক্ষে দুইশ’ টন মাছ কেনাবেচা হয়ে থাকে এখানে। এ দু’টি আড়ৎ থেকে মাছ সরবরাহ করা হয় ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার মোকামে।
কিন্তু অবরোধে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঝুঁকি থাকায় অনেক ক্ষেত্রে পরিবহন মালিকরা রাস্তায় গাড়ি বের করতে চান না। ফলে অনেক ব্যবসায়ী মাছ একস্থান থেকে অন্যস্থানে সরবরাহ করতে পরছেন না। ফলে কমে গেছে মাছের দাম। এতে মাছ চাষি ও ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।
ফলতিতা মৎস্য আড়তের ব্যবসায়ী শাহ্ জালাল বাংলানিউজকে বলেন, চট্টগ্রাম ও ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছে মাছ সরবরাহ করি। কিন্তু অবরোধের কারণে নিয়মিত গাড়ি না চলাচল করায় মাছ বাইরে পাঠানো যাচ্ছে না। রাজনৈতিক দলগুলো হরতাল অবরোধ দিলেই আমাদের দারুন সমস্যায় পড়তে হয়।
মামা ভাগ্নে মৎস্য আড়তের সত্ত্বাধিকারী আবুল কালাম বাংলানিউজকে বলেন, অবরোধের কারণে মাছ ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অবরোধের কারণে মাছের নায্যমূল্য না পাওয়ার আশঙ্কায় অনেকে খামার থেকে মাছ শিকার বন্ধ রেখেছেন। তাই আড়ৎগুলোতে অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে মাছের আমদানি।
বারাকপুর আড়তে মাছ বিক্রি করতে আসা চাষি আল মামুন জানান, ধার-দেনা করে মাছ চাষ করেছিলাম। মাছের দাম অনেক কমে গেছে। তাই বিক্রি করে লোকসান গুণতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, অবরোধ চলতে থাকলে আমারা বাঁচবো কিভাবে?
সুন্দরবন মৎস্য আড়তের সত্ত্বাধিকারী ও বারাকপুর মৎস্য আড়ৎ সমিতির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, টানা অবরোধের কারণে বাইরের ব্যবসায়ীরা এখানে আসতে পারছেন না। চাষিরাও মাছের নায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এইভাবে অবরোধ চলতে থাকলে লক্ষাধিক চাষি ও ব্যবসায়ী ক্ষতির শিকার হবেন।
বারাকপুর মৎস্য আড়ৎ সমিতির সভাপতি সৈয়দ জাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বারাকপুর মৎস্য আড়তে সাধারণত প্রতিদিন অন্তত এক থেকে দেড় কোটি টাকার সাদা মাছের কেনাবেচা হতো। কিন্তু বিএনপির অবরোধ শুরু হওয়ার পর তা ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকায় নেমে এসেছে।
সব মিলিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় মাছের এই আড়ৎ দু’টিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। তাই মাছ চাষ ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের রক্ষার্থে রাজনৈতিক দলগুলোকে এ ধরনের কর্মসূচি থেকে সরে আসার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২০১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৫