ঢাকা: সরকারি কর্মকর্তা ও সামরিক বাহিনীর জন্য প্রস্তাবিত বেতন কাঠামোর সঙ্গে দেশের সাংবাদিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা এবং সমন্বয়ের জন্য নতুন ওয়েজবোর্ড গঠনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)।
মঙ্গলবার (১৩ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত বিএফইউজে’র ফেডারেল নির্বাহী পরিষদের সভায় এ আহবান জানানো হয়।
বিএফইউজে সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুলের সভাপতিত্বে সভায় মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া, কোষাধ্যক্ষ খায়রুজ্জামান কামাল তাদের রিপোর্ট উপস্থাপন করেন। সারাদেশের অঞ্চলভিত্তিক গণমাধ্যমচিত্র তুলে ধরেন ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, যশোর, বগুড়া, দিনাজপুর ও নারায়নগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা।
বিএফইউজে’র মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সভায় বলা হয়, যেহেতু সরকারি কর্মকর্তা, সামরিক বাহিনী ও কর্মকর্তা এবং সাংবাদিক-কর্মচারীরা একই সমাজে বসবাস করেন, একই বাজার ব্যবস্থার মধ্যে দিনযাপন করেন সেহেতু সবার আয়ের মধ্যে একটি সমন্বয় থাকা প্রয়োজন। সম্প্রতি সরকারি কর্মকর্তা ও সামরিক বাহিনীর জন্য প্রস্তাবিত বেতন কাঠামো ঘোষণার প্রেক্ষিতে দেশের গণমাধ্যমকর্মীদের বর্তমান বেতন-ভাতা পর্যালোচনা করে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই অবিলম্বে বেতন বোর্ড গঠন করে আগামী জুনের মধ্যেই যাতে বোর্ডের সুপারিশ কার্যকর করা যায়, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
সভায় দেশের অনেক সংবাদপত্রে ৮ম ওয়েজবোর্ডের সুপারিশ কার্যকর না করায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সভায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত বেতন-ভাতা না দেওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে শ্রম আইন না মেনে চাকরিচ্যুতির নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।
সভায় সাংবাদিক-শ্রমিক কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করে শ্রম আইন সংশোধনেরও দাবি জানানো হয়।
সভায় সাগর-রুনিসহ সকল সাংবাদিক হত্যার বিচার দাবি করা হয়। সভায় বলা হয়, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাসহ মন্ত্রীরা এসব হত্যাকাণ্ডের বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন, তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সহায়তা দিতে একটি উপ-কমিটি করা হয়। এ উপ-কমিটি সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচারে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে সকল ধরনের সহযোগিতা দেবে বলে নিশ্চিত করা হয়।
সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের আন্তরিক সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মন্ত্রণালয় পর্যায়ে ধীরগতির কারণে গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট কিছু সিদ্ধান্ত দ্রুত কার্যকর না করায় গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে।
সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয়, ১৯৭৪ সালের আইন সংস্কারের জন্য সকল প্রস্তাবনা জমা দেওয়ার পরেও গত ১৪ মাসে এ বিষয়ে মাত্র একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাতে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। এ আইনটি সংশোধন করে কার্যকর করা গেলে ইলেকট্রনিক মাধ্যমের কর্মীদের জন্য ওয়েজবোর্ড গঠনের জটিলতার অবসান হয়।
সভায় বলা হয়, ৮ম ওয়েজবোর্ডের অসঙ্গতি দূর করার জন্য প্রস্তাবনা গ্রহণ করার ৮ মাসেও কোনো অগ্রগতি নেই। অথচ মন্ত্রী বলেছিলেন, দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট আইন হলেও এখনও ট্রাস্টি বোর্ড করা হয়নি। প্রেস কাউন্সিল ও প্রেস ইন্সটিটিউট দীর্ঘদিন চলছে বোর্ড ছাড়া। এ সকল প্রতিষ্ঠানে সম্পাদক, সাংবাদিকদের মতপ্রকাশের জায়গাটিকে রুদ্ধ রেখে মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের নিযোগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা একক ক্ষমতাবলে প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করছেন। প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনায় গণমাধ্যমকর্মীদের অংশগ্রহণের অধিকার হরণ করা হয়েছে। সভায় এ সকল কাজে আরও গতি আনার জন্য মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহবান জানানো হয়।
তবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর প্রতিশ্রুত সময়ের অনেক পরে হলেও সম্প্রচার নীতিমালা বিষয়ক কমিটি গঠনের জন্য সভায় ধন্যবাদ জানিয়ে বলা হয়, নিশ্চয়ই উপযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত এ কমিটি উপযুক্ত সময়ে একটি উপযুক্ত পরামর্শ দেবে। কমিটিতে বিএফইউজে’র প্রতিনিধিত্ব করার জন্য একজন উপযুক্ত প্রতিনিধি মনোনীত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৫