যশোর: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধে মারাত্মক লোকসানের শিকার হচ্ছেন যশোরের গদখালির ফুল চাষীরা।
দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় টানা হরতাল-অবরোধের কারণে ফুলের বাজারে বেচা-কেনার ধস নেমেছে।
যশোরের গদখালি এলাকার ফুল চাষীরা বাংলানিউজকে জানান, ১ জানুয়ারি ইংরেজি নববর্ষের আগে থেকে জামায়াতের হরতালের কারণে ফুল চাষীদের আশার গুড়ে বালি পড়ে। এরপর ৫ জানুয়ারি থেকে চলছে বিএনপির ডাকা টানা অবরোধ।
ফুল চাষীরা জানান, প্রতিবছরের মতো ১ জানুয়ারিতে এ অঞ্চলের কৃষকদের দুই কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট ছিল। কিন্তু হরতালের কারণে বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে। এছাড়াও বিএনপির ডাকা টানা অবরোধে আরও দুই কোটি টাকার লোকসানের শিকার হয়েছেন ফুল চাষীরা।
গদখালি ফুল ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে জানান, যশোর জেলায় সাড়ে ৪ হাজার কৃষক ফুল চাষ করেন। এর মধ্যে ঝিকরগাছা ও গদখালিতে রয়েছেন সাড়ে তিন হাজার ফুল চাষী। এসব চাষীর উৎপাদিত ফুল গদখালির হাটে কেনাবেচা হয়। যা গোটা দেশের মোট ফুলের চাহিদার ৭০ ভাগ ফুল গদখালী থেকে সরবরাহ করা হয়। এসব ফুলের অর্ধেক পাঠানো হয় ঢাকা ও চট্টগ্রামে। বাকি অর্ধেক যায়, উত্তরাঞ্চলের জেলা রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, গোপালগঞ্জ ও বরিশাল এলাকায়।
তবে বিএনপির ডাকা অবরোধের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রামে কিছু ফুল পাঠানো হলেও অন্য কোনো এলাকায় ফুল সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ফুল চাষীরা ব্যাপক লোকসানের শিকার হচ্ছেন।
তিনি আরও জানান, বিশেষ দিন ছাড়াও স্বাভাবিক সময়ে স্থানীয় গদখালী ফুলহাটে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার ফুল বিক্রি হলেও অবরোধের বাজারে এক থেকে দেড় লাখ টাকার ফুল বেচাকেনা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১৩ জানুয়ারি) সরজমিনে গদখালির ফুলহাটে গিয়ে দেখা যায়, অন্য সময়ের তুলনায় ক্রেতা অনেক কম। ফলে ফুলের চাহিদা শূন্যের কোটায় নেমেছে। এরফলে প্রভাব পড়েছে ফুলের দামের ওপর।
ত্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অবরোধের বাজারে প্রতিটি গোলাপ ফুল বিক্রি হচ্ছে ১০ পয়সা। আগে যার দাম ছিল পিস প্রতি কমপক্ষে তিন টাকা। একইভাবে রজনীগন্ধার স্টিক ৩০ পয়সা, গ্লাডিউলাস ফুল ৪ থেকে ৫টাকা, জারবেরা প্রতি পিস ৪ থেকে ৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা আগের বাজার মূল্যের তুলনায় চার ভাগের একভাগ। এতে হতাশায় ভুগছেন ফুল চাষীরা।
ঝিকরগাছার পটুয়াপাড়ার ফুলচাষী সাহেব আলী বাংলানিউজকে জানান, তিনি এক একর জমিতে গোলাপের চাষ করেছেন। কিছুদিন আগেও পাইকারি বাজারে প্রতিপিস গোলাপ তিন টাকা হারে ১০০ গোলাপ ৩০০ টাকা বিক্রি হলেও মঙ্গবার (১৩ জানুয়ারি) গদখালির বাজারে ১০০ গোলাপ ফুলের দাম ছিল ১০ টাকা।
একই উপজেলার হাড়িয়া গ্রামের ফুলচাষী জয়নাল ৬০ শতক জমিতে গোলাপ ফুলের চাষ করেছেন জানিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, তিনি হরতাল-অবরোধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ফুলের জমিকেই তিনি সহায়-সম্বল হিসেবে মনে করলেও বর্তমান বাজার দাম দেখে তিনি ফুল উঠানো বন্ধ করেছেন। ফলে জমিতেই ফুল নষ্ট হচ্ছে।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি ও গদখালি ফুল ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি বাংলানিউজকে বলেন, গদখালির ফুল চাষিদের উৎপাদিত ফুল সংরক্ষণের জন্য সরকারের কৃষি বিভাগ ২০১২ সালে একটি কোল্ড স্টোরেজ স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে শর্ত ছিল, কোল্ড স্টোরেজ তৈরির মোট টাকার শতকরা ২০ ভাগ কৃষকদের দিতে হবে। নিজেদের উপকারের কথা ভেবে সে শর্তেও রাজি হয় চাষিরা। তবে গত তিন বছরে কৃষি বিভাগের লোকজন আর এলাকায় যায়নি।
অন্যদিকে, রাজধানী ঢাকায় পাইকারি ফুলের বাজার না থাকায় মাস্তান ও পুলিশ সদস্যদের চাঁদা দিতে যেয়ে হিমশিম খাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। এর প্রভাব পড়ছে প্রান্তিক চাষিদের ওপর জানিয়ে আব্দুর রহিম বলেন, রাজধানী ঢাকার শাহবাগ ও আগরগাঁও এলাকায় তারা হাট বসিয়ে ফুল বিক্রি করেন। ফলে ওইসব এলাকার মাস্তান ও পুলিশ সদস্যদের চাঁদা দেওয়া লাগে। ফলে সরকারিভাবে একটি পাইকারি হাট স্থাপনের ব্যবস্থা করলে ফুল চাষিরা উপকৃত হবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৭১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৫