ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের আপিল মামলার শুনানি শুরু
হয়নি।
আসামি পক্ষের আইনজীবীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৪ সদস্যের বেঞ্চ তাদের আদেশে বলেন:‘নট টুডে’ ।
এর আগে মঙ্গলবার শুনানির জন্য মামলাটি কার্যতালিকায় আসে।
আদালতে আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন তুহিন সময়ের আবেদন করেন। জ্যেষ্ঠ আইনজীবী উপস্থিত নেই বলে উল্লেখ করে তিনি এই আবেদন করেন।
গত বছরের ৩ ডিসেম্বর শুনানি শুরুর এ দিন ধার্য করেছিলেন প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ।
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও আসামিপক্ষে খন্দকার মাহবুব হোসেন নেতৃত্ব দেওয়ার কথা রয়েছে।
মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে ২০১৩ সালের ১১ আগস্ট আপিল বিভাগে আপিল করে আসামিপক্ষ। মুজাহিদের পক্ষে আপিল বিভাগে আপিল আবেদনটি করেন তার আইনজীবীরা। ওই বছরের ১৭ জুলাই মুজাহিদকে এ মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।
ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে ১১৫টি যুক্তি নিয়ে আপিল করেন মুজাহিদ। মূল আপিল ৯৫ পৃষ্ঠার, এর সঙ্গে ৩ হাজার ৮০০ পৃষ্ঠার ডকুমেন্টও দাখিল করা হয়।
মুজাহিদকে নির্দোষ দাবি করে ট্রাইব্যুনালের সাজা বাতিল করে খালাস চেয়ে পুরো রায়ের বিরুদ্ধে এ আপিল করা হয়। ট্রাইব্যুনাল যেসব কারণে সাজা দিয়েছেন, তার আইনগত ও ঘটনাগত ভিত্তি নেই বলেও আপিলে দাবি করেন তিনি।
২০১৩ সালের ১৭ জুলাই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের ট্রাইব্যুনাল।
মুজাহিদের বিরুদ্ধে আনা ৭টি অভিযোগের মধ্যে ৫টি প্রমাণিত হয়েছে এবং ২টি প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পারেননি বলে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে ১, ৩, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে এবং ২ ও ৪ নম্বর অভিযোগ প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে পারেননি। প্রমাণিত ১ নম্বর অভিযোগকে ৬ এর সঙ্গে সংযুক্ত করে এ দু’টি অভিযোগে সমন্বিতভাবে ও ৭ নম্বর অভিযোগে মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড, ৫ নম্বর অভিযোগে যাবজ্জীবন এবং ৩ নম্বর অভিযোগে ৫ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। প্রমাণিত না হওয়া ২ ও ৪ নম্বর অভিযোগে খালাস পেয়েছেন মুজাহিদ।
ট্রাইব্যুনাল থেকে রায় ঘোষিত ১৫টির মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এ পর্যন্ত এসেছিল ১০টি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা। এর মধ্যে সাজা ঘোষিত দুই যুদ্ধাপরাধী দণ্ড ভোগরত অবস্থায় মারা যাওয়ায় তাদের আপিল মামলার শুনানি হবে না।
অন্য আটটি আপিল মামলার তিনটির চূড়ান্ত রায় ঘোষিত হয়েছে। এসব রায়ের মধ্যে ট্রাইব্যুনাল থেকে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার সাজা বাড়িয়ে ফাঁসির আদেশ দেন আপিল বিভাগ, যা কার্যকর হয়েছে।
অন্যদিকে ট্রাইব্যুনাল থেকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডাদেশ পেলেও জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। জামায়াতের অপর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল রাখা হয়েছে। এ দুই আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় এখনও প্রকাশিত হয়নি।
৯০ বছরের কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম ও আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা সাবেক মন্ত্রী আব্দুল আলীম আপিল বিভাগে আপিল করলেও দণ্ড ভোগরত অবস্থায় স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে তাদের। ফলে তাদের আপিল অকার্যকর ঘোষণা করা হয়েছে।
এ দু’জনের আপিল শুনানি না হওয়ায় আপিল দায়েরের ক্রমানুসারে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মুজাহিদের আপিল মামলার শুনানি।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কাদের সাকা চৌধুরী, জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলী এবং আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা ও জামায়াতের সাবেক রোকন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোবারক হোসেনের চারটি পৃথক আপিল মামলা শুনানি শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে।
সর্বশেষ রায় ঘোষিত ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম ও জাতীয় পার্টির সাবেক প্রতিমন্ত্রী সাবেক এমপি সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার তাদের রায় ঘোষণার একমাসের মধ্যে আপিল করার সুযোগ পাবেন।
অন্য তিনটি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত ৪ আসামি জামায়াতের সাবেক রোকন (সদস্য) আবুল কালাম আজাদ বাচ্চু রাজাকার, বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকারী জামায়াত নেতা আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মাঈনুদ্দিন এবং ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র ও পৌর বিএনপির সহ সভাপতি পলাতক জাহিদ হোসেন খোকন রাজাকার পলাতক থাকায় আপিল করেননি।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৫