ঢাকা: পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসে সন্দেহের ‘এক নম্বর’ তালিকায় থাকা মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের (বিজি প্রেস) খামখেয়ালিপনা আর গাফিলতিতে চরম বিরক্ত শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান।
তুলনামূলক নিচের পদের নতুন একজন কর্মকর্তাকে প্রশ্ন ফাঁস রোধে জাতীয় মনিটরিং কমিটির সভায় পাঠানো এবং বিজি প্রেসের অটোমেশনসহ নিরাপত্তা জোরদার না করায় উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং গণমাধ্যমকর্মীদের সামনেই ক্ষোভ ঝাড়েন শিক্ষাসচিব।
বুধবার সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে কমিটির দ্বিতীয় এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগের মধ্যে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠান ও প্রশ্ন ফাঁস রোধে গত ২৭ নভেম্বর একটি উচ্চ পর্যায়ের মনিটরিং কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে (প্রশাসন ও অর্থ) আহ্বায়ক করে এই কমিটিতে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রতিনিধিসহ ২৭ জন সদস্য রাখা হয়।
বিজি প্রেসে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ছাড়াও সরকারি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ছাপানো হয়। এখান থেকেই পাবলিক পরীক্ষা ছাড়াও নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ রয়েছে।
মনিটিরিং কমিটির দ্বিতীয় এই সভায় বিজি প্রেসের দিকে আঙ্গুল তুলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের প্রথম সন্দেহ প্রেস। প্রেসের জায়গাটায় আরো তৎপর হতে হবে, হাতের মুঠোয় রাখতে হবে।
মন্ত্রীর বক্তব্যের পর শিক্ষাসচিব জানতে চান বিজি প্রেসের পক্ষে কে এসেছেন?
এরপর বিজি প্রেসের সিনিয়র সহকারী পরিচালক আব্দুল মালেক নিজেকে উপস্থাপন করেন।
শিক্ষাসচিব বলেন, বলাই আছে এই মিটিংয়ে যুগ্মসচিব পদমর্যাদার একজনকে আসতে হবে।
মন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে শিক্ষাসচিব বলেন, ‘দেখেন স্যার এনাদের অবস্থা, তারা কেন গুরুত্ব দিচ্ছে না? দেখি নম্বর, দেখি কথা বলি... (বিজি প্রেসের শীর্ষ কর্মকর্তার উদ্দেশে)। ”
বিজি প্রেসের ওই কর্মকর্তা জানান, গত ৩০ তারিখ (ডিসেম্বর) তিনি বিজি প্রেসে যোগ দিয়েছেন।
তবে তিনি গত সভার সকল সিদ্ধান্ত তারা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এবং কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।
নতুন কর্মকর্তাকে পাঠানোয় আবারো ক্ষিপ্ত হয়ে শিক্ষাসচিব বিজি প্রেসের উদ্দেশে নির্দেশনামূলক বক্তব্য দিয়ে বলেন, বিজি প্রেস পুরো অটোমেটেড করতে হবে। এছাড়া মেশিনগুলো আপডেট করতে হবে।
এতে সর্বোচ্চ ২০ কোটি টাকা লাগবে জানিয়ে সচিব বলেন, এতে বিজি প্রেসে ২৬২/২৬৩ জন লোকের কাজ ১০/১২ জনে নামিয়ে আনা যাবে, প্রশ্ন ফাঁস এড়ানো যাবে।
সভায় এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সন্দেহের তালিকায় বিজি প্রেসের ১০/১২ জন নজরে আছে। মনিটরিং করে দেখলে বোঝা যাবে।
শিক্ষাসচিবের পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কোনোভাবে এর ব্যতয় হবে না। সকলে মনিটরিংয়ের মধ্যে আছে। বিজি প্রেস এলাকায় ৬ হাজার সিসি ক্যামেরা বসানো আছে। তাদের (বিসি প্রেস সংশ্লিষ্ট) চৌদ্দগুষ্টির তথ্য নিয়েছি।
আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে আটটি সাধারণসহ ১০ বের্ডে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে।
এই পরীক্ষার জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কিছু দৃশ্যমান ও কিছু অদৃশ্য কাজ করছি জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কিছু লোককে আইডেনটিফাই করেছি। সন্দেহের কোনো সূত্র থাকলে বাইরে থাকবে না।
জাতীয় মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও অর্থ) স্বপন কুমার সরকারের সভাপতিত্বে সভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ছাড়াও তথ্য মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি, র্যাব, পুলিশ এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
** প্রশ্ন ফাঁসকারীদের প্রতি চ্যালেঞ্জ পুলিশের
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৫