ঢাকা: অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য বন্ধ হয়ে আছে সৌদি আরবের শ্রমবাজার। বছরে লাখো শ্রমিকের কর্মসংস্থান হওয়া দেশটিতে হাজার শ্রমিক পাঠিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে বাংলাদেশকে।
অনেক কূটনৈতিক যোগাযোগের পর লক্ষাধিক অবৈধ বাংলাদেশি শ্রমিককে বৈধ এবং আকামা পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়া হলেও বাংলাদেশ থেকে পুরোদমে শ্রমিক নেওয়া শুরু করেনি দেশটি। তাই, বন্ধ থাকা এ বাজারটি উন্মুক্ত করার প্রত্যাশা নিয়ে আবারও সৌদি আরব যাচ্ছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
প্রবাসীকল্যাণ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শনিবার (১৭ জানুয়ারি) চারদিনের এক সরকারি সফরে সৌদি আরব যাচ্ছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী। দেশটির শ্রমমন্ত্রী ড. আদেল ফাকিহের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন তিনি। এরপর তিনি ২৪ জানুয়ারি দেশে ফিরে আসবেন।
এ বৈঠকে সৌদির শ্রমবাজারে আরো বেশি সংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিক প্রবেশের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এ ছাড়া মক্কা ও দাম্মাম প্রদেশের গভর্নরদের সঙ্গেও মন্ত্রীর সাক্ষাতের কথা রয়েছে।
রিয়াদ দূতাবাসের একটি সূত্র বাংলানিউজকে বলেন, সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে সৌদি আরব পৌঁছাবেন।
এ বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী বাংলানিউজকে বলেন, সৌদি আরব বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য একটি বৃহৎ বাজার। বর্তমানে বাজারটি বন্ধ না হলেও দেশটিতে শ্রমিক যাওয়া কমে এসেছে। এবারের সফরে দেশটির শ্রমমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ থেকে আরো শ্রমিক নিতে অনুরোধ জানানো হবে।
তিনি দক্ষ ও আধা-দক্ষ সব শ্রমিক দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত। সে বিষয়টিও জানানো হবে। শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে স্বল্প অভিবাসন ব্যয়ের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে জানান মন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের ১৪ লাখেরও বেশি শ্রমিক বিদেশ যাওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন। এ বিষয়টিও সৌদি সরকারকে জানানো হবে; যাতে করে তারা তাদের প্রয়োজন মতো যে কোনো সময় শ্রমিক নিতে পারে।
এ সফরে দুদেশের মধ্যে কোনো চুক্তি স্বাক্ষর হবে না বলেও জানান প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
সূত্র জানায়, রোববার (১৮ জানুয়ারি) সৌদি শ্রমমন্ত্রীর সঙ্গে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। সফরকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব আবুল কালাম আজাদ, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব খন্দকার মো. এফতেখার হায়দার, বিএমইটি'র মহাপরিচালক (ডিজি) বেগম শামছুন্নাহার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পশ্চিমাঞ্চলীয় অনুবিভাগের মহাপরিচালক নাজমুল ইসলাম মন্ত্রীর সফর সঙ্গী হবেন।
এদিকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, অনেকদিন ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদি আরব সফরের বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, সৌদি আরব শ্রমিকদের বৃহত্তম একটি বাজার। অনেকদিন ধরে সেখানে শ্রমিক যাওয়া প্রায় বন্ধই বলা যায়। তাই, আমাদের লক্ষ্য যে কোনো মূল্যে স্বল্প অভিবাসন ব্যয়ে বাজারটিতে শ্রমিক প্রবেশ করানো। সৌদি সরকার যেভাবে যেমন শ্রমিক চাইবে, আমরা সেভাবেই শ্রমিক পাঠাবো। তবে শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং অভিবাসন ব্যয়ের বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
দেশটিতে নারী শ্রমিক পাঠানোর বিষয়েও আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি।
২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশি কর্মী নেওয়া একেবারে কমিয়ে দেয় সৌদি আরব। এমনকী বাংলাদেশের নাগরিকদের কাজের জন্য নতুন ভিসা, আকামা নবায়ন ও পরিবর্তনও বন্ধ করা হয়। তবে ২০১৩ সালে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির কয়েক দফা সফরের পর আকামা পরিবর্তন ও অ্যামনেস্টির সুযোগ পায় সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
দেশটির ৬টি মেঘাসিটি নির্মাণের কাজে কয়েক লাখ বাংলাদেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন বলেও সে সময় প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রীকে আশস্ত করেছিলেন সৌদি শ্রমমন্ত্রী।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৪/আপডেটেড: ১৬১৬ ঘণ্টা