ময়মনসিংহ: ‘রংপুরের বুড়িমারি যামু না। ওইখানে মানুষরে মানুষ পেট্রোল বোমা ছুইড়া পুইড়া মাইরা ফেলে।
মোবাইল ফোনের ওই প্রান্ত থেকে আসা একটি ‘খ্যাপের’ প্রস্তাবে ফিরিয়ে দিতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন গাড়ি চালক মো. শেখ সোহেল (৩২)। ময়মনসিংহ শহরের আউটার স্টেডিয়াম এলাকার বাসিন্দা সোহেল ১০ বছর ধরে ভাড়াগাড়ি চালান।
শুক্রবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে শহরের টাউন হল মাইক্রোবাস স্ট্যান্ডে নিজের প্রাইভেটকারের ভেতরে অলস বসে থাকা অবস্থায় আলাপ হয় সোহেলের সঙ্গে। প্রায় শতাধিক প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও হায়েস গাড়ি রয়েছে স্ট্যান্ডে। কিন্তু চলমান হরতাল-অবরোধে মালিকরা এসব গাড়ি রাস্তায় নামাতে সাহস পাচ্ছেন না।
সোহেল জানান, আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা নিয়ে ময়মনসিংহ জেলার মধ্যে স্বল্প সংখ্যক প্রাইভেটকার চললেও হায়েস ও মাইক্রোবাস চালকরা গাড়ি চালাতে সাহস পাচ্ছেন না।
নিজেদের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে সোহেল বলেন, ‘হরতাল-অবরোধে বেকার হয়ে পড়েছে অনেক চালক। মালিকদের কাছ থেকে অনেকে টাকা ধার কইরা কইরা চলতাছে। অনেকে রিস্ক নিয়া শুক্রবার বের হইছে। কী করবো, আমগোর মতো গরিবের পেটে যে খাওন নাই। ’
‘বৃহস্পতিবারের হরতালে স্ট্যান্ড থেইক্ক্যা কোনো গাড়িও বাইর হয় নাই’, যোগ করেন চালক সোহেল।
আলাপচারিতায় হরতাল ও অবরোধের মধ্যকার পার্থক্য বিষয়ে কথা উঠলে সোহেল বলেন, ‘অবরোধে কিছু কিছু গাড়ি চলে। জেলার মধ্যেই ছোট ছোট জায়গায় চিপায়-চুপায় যাওয়া যায়। আর হরতাল থাকলে গাড়ি লইয়্যা বাইর হওয়া যাইবো না। হরতালে মিছিল থেইক্কা গাড়ি ভাঙচুর করে, পেট্রোল বোমা মারে। আর অবরোধে আউলি থেইক্কা চোরাগোপ্তা হামলা করে গাড়ি ভাঙে। তহন মালিকের কাছে বহা (বকা) খাইতে অয়। ’
হরতাল-অবরোধে দেশের দুই নেত্রীর কোনো ক্ষতি হয় না উল্লেখ করে তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘তারা দুইজনেই মজা লুটে। একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে খালি কতা কয়। আর আমগোর মতো গরিবের কাম শেষ। ’
এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে চার সদস্যের ছোট সংসার সোহেলের। থাকেন ভাড়া বাসায়। বড় ছেলে হাসিবুল হাসান শান্ত পড়ছে শহরের প্রগ্রেসিভ স্কুলে, পঞ্চম শ্রেণিতে। আর ছোট মেয়ে সিনথিয়া নতুন কুঁড়ি স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী।
চালক সোহেলের নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মতো অবস্থা। কিন্তু এভাবে হরতাল-অবরোধ চলতে থাকলে তার সংসার কীভাবে চলবে, এ নিয়ে তার দুশ্চিন্তার শেষ নেই।
তিনি বলেন, ‘বাসায় চাউল-ডাইল নাই। দুই সন্তানরে স্কুলে ভর্তি করলেও বই, খাতা-কলম এখনো কেনা হয়নি। অবরোধ-হরতালে গাড়ি চালাইতে পারি না। টাকাডা পামু কোত্থেকে?’
রাজনৈতিক সহিংসতায় পেটে টান পড়ার পাশাপাশি সন্তানদের নিয়েও সারাক্ষণ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় থাকতে হয় জানিয়ে সোহেল আরও বলেন, ‘বাচ্চা-কাচ্চারে স্কুলে পাঠাইলেও চিন্তা। কখন কোথায় কী ঘইট্যা যায়! আমগোর মতো গরিব মরলেও তো বিচার অয় না। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৫