রংপুর: রংপুরের মিঠাপুকুরে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির দুর্বলতার কারণে স্বাধীনতাবিরোধীরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার মিঠাপুকুরে নারীদেরও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করা হচ্ছে- উল্লেখ করে সন্ত্রাসীদের নির্মূল করার ঘোষণা দিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক ও এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ।
শুক্রবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে মিঠাপুকুর উপজেলা বালিকা বিদ্যালয় মাঠে ‘সন্ত্রাস ও নাশকতা, অবরোধে আইন-শৃঙ্খলা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় তারা এ ঘোষণা দেন। সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন আইজিপি, আর বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন ৠাব ডিজি।
আইজিপি বলেন, রংপুরের মিঠাপুকুরে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিদের দুর্বলতার কারণে এখানে স্বাধীনতাবিরোধীরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। বেগম রোকেয়ার মিঠাপুকুরের নারীদেরও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করা হচ্ছে। স্বাধীনতাবিরোধীরা এখন পাকিস্তান বানানোর স্বপ্ন দেখছেন। তাদের সঙ্গে আপনারা (নারী) কেন?
মিঠাপুকুরের পাশাপাশি গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী, গোবিন্দগঞ্জেও সন্ত্রাসীরা ত্রাস সৃষ্টি করেছে বলে উল্লেখ করেন আইজিপি।
তিনি বলেন, আমরা এ সন্ত্রাসীদের নির্মূল করবোই। আজকে যারা হরতাল, অবরোধ, ভাঙচুর করছেন তারা এসব কীসের জন্য করছে? এটা তারা নিজেরাও জানেন না।
আইজিপি অভিযোগ করেন, অনেক রাজনৈতিক নেতা আইন সর্ম্পকে না জেনে কথা বলেন। সকলের মিছিল, মিটিং, সভা- সমাবেশ করার অধিকার আছে। এই সভা-সমাবেশ করার নামে আপনারা মানুষ হত্যা, বাসে আগুন, ভাঙচুর করবেন, আমরা তা কোনোভাবেই বরদাস্ত করবো না।
একেএম শহীদুল হক বলেন, জনগণ সরকারকে ভোট দিয়েছে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য। আপনারা জনগণের সেই মতামতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আগুন দিচ্ছেন, মানুষ হত্যা করে তাদের অধিকার হরণ করছেন।
আমরা নির্বাচিত সরকারের পক্ষে আছি। কোনো অশুভ শক্তির কাছে আমরা মাথা নত করবো না।
এ সময় টক-শো এবং এর অতিথিদেরও সমালোচনা করেন আইজিপি। তিনি বলেন, তারা না জেনে কথা বলেন, বিবেক হারিয়ে ফেলছেন। আমার প্রশ্ন টক-শোওয়ালাদের প্রতি, সমাবেশ করতে দিলে যদি হত্যা, ভাঙচুর,অগ্নিসংযোগ হতো, তখন টক-শোওয়ালারা কী করতেন?
আইজিপি দাবি করেন, ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে ষড়যন্ত্র ছিল বলে গোয়েন্দা তথ্য ছিল। খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল ৫ জানুয়ারির পর সমাবেশ করতে, কিন্তু তিনি প্রশাসনের কথা শোনেননি।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় র্যাব ডিজি বেনজীর আহমেদ বলেন, মিঠাপুকুরে দুর্বৃত্তরা পাঁচজনের প্রাণ নিয়েছে। তাদের মধ্যে একটি নিষ্পাপ শিশুও ছিল। হরতাল, অবরোধের নামে সারাদেশে ২৪ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০১৩ সালের মতো একটি গোষ্ঠী দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। মানুষ হত্যা করতে আগুন দিয়ে জ্বালাও-পোড়াও করছে। এছাড়া, সন্ত্রাসীরা গণতন্ত্র ধ্বংস করার জন্য দাঁড়িয়েছে। দেশ যখন এগিয়ে চলছে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে, তখনই এই গোষ্ঠীটি জ্বালাও-পোড়াও করে দেশকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা করছে।
র্যাব ডিজি বলেন, এ শত্রুদের নির্মূল করতে হবে। তাদের দেশে থাকার প্রয়োজন নেই।
এছাড়া, নির্ধারিত সময়ে দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে উল্লেখ করে র্যাব ডিজি সতর্ক করে বলেন, আমরা ২০১৩ সালে সন্ত্রাসীদের রুখে দিয়েছিলাম, এবারও রুখে দেবো।
তিনি স্মরণ করেন, কুড়িগ্রাম ছিলো মঙ্গাপ্রবণ এলাকা, এখন কোথাও মঙ্গা নেই।
সরকারের উন্নয়নের প্রশংসা করে তিনি বলেন, একাত্তর সালে দেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৭৫ ডলার, বর্তমান সরকারের আমলে তা দাঁড়িয়েছে ১২০০ ডলারে। আরও ২-৩ বছর এ সরকার দেশ চালাতে পারলে দেশের আরও উন্নতি হবে।
বেনজীর আহমেদ সতর্ক করে বলেন, আমরা কাউকে ছাড় দেবো না। দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে যা যা করা দরকার তাই করবো।
রংপুর জেলা প্রশাসক ফরিদ আহমদের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন জেলার পুলিশ সুপার আব্দুর রাজ্জাক, মিঠাপুকুর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শহিদার রহমান, জাগীরহাট কলেজের অধ্যক্ষ তোফাজ্জল হোসেন, মিঠাপুকুর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম, উপজেলা আ’লীগের সভাপতি মোজাম্মেল হক মিন্টু মিয়া, রংপুর জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি (ভারপ্রাপ্ত) হুমায়ুন কবির ও বিভাগীয় কমিশনার বিলুয়ার বখত।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৫