ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বর্ণাঢ্য আয়োজনে চলছে খেলাঘর জাতীয় সম্মেলন

অ্যাক্টিং আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৫
বর্ণাঢ্য আয়োজনে চলছে খেলাঘর জাতীয় সম্মেলন ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: বর্ণাঢ্য আয়োজনে দেশের বৃহত্তম জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের দু’দিনব্যাপী ‘জাতীয় সম্মেলন-২০১৫’ শুক্রবার (১৬ জানুয়ারি) শুরু হয়েছে।

সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।



এ সময় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। হাজার বছর ধরে এ ভূখণ্ডে হিন্দু-মুসলিম,বৌদ্ধ,খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের সুমহান ঐতিহ্য। মূল্যবান এ ঐতিহ্যকে লালন করতে শিশু-কিশোরদের মাঝে শৈশব থেকে অসাম্প্রদায়িক চেতনা, নিজস্ব সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী চেতনার বীজ বুনতে হবে। যাতে তাদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সহমর্মিতা, দেশপ্রেম ও ভালোবাসা গড়ে ওঠে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন সোনার বাংলা গড়তে সোনার মানুষ চাই। সোনার মানুষ বলতে তিনি সৎ, যোগ্য, চরিত্রবান ও মেধাবীদের বুঝিয়েছেন।

নতুন প্রজন্মের শিশু-কিশোররা তাদের আচার-আচরণ, চিন্তা-কর্ম এবং জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে নিজেদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন রাষ্ট্রপতি।

স্বাধীনতা পূর্ববর্তী অবস্থার কথা তুলে ধরে শিশু-কিশোরদের উদ্দেশে মো. আবদুল হামিদ বলেন, তোমাদের এ বয়সে আমরা ছিলাম পরাধীন দেশের নাগরিক। আমাদের না ছিল কথা বলার স্বাধীনতা, না ছিল মত প্রকাশের স্বাধীনতা।

‘সংস্কৃতি চর্চাও ছিল রীতিমতো কঠোর শৃঙ্খলে আবদ্ধ। তোমরা আজ তা থেকে মুক্ত। তোমাদের চিন্তার স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সংস্কৃতি চর্চার স্বাধীনতা, চলাফেরার স্বাধীনতা আজ সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত। তোমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। তাই তোমাদের সামনে আজ অমিত সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত। পাঠ্য বইয়ের বাইরেও ছবি আঁকা, আবৃত্তি, নাচ, গান, অভিনয়, গল্প বলাসহ বিভিন্ন সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের চর্চা করতে হবে’—শিশুদের উৎসাহিত করে বলেন তিনি।

তথ্য-প্রযুক্তিতে শিশুদের মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে মো. আবদুল হামিদ বলেন, তথ্য-প্রযুক্তির প্রসারে সারা বিশ্ব আজ হাতের মুঠোয়। এ যেন আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপ। ছোঁয়া দিলেই জ্ঞানের দৈত্য এসে হাজির। কম্পিউটারে একটা ক্লিকে বিশ্বের সব তথ্য মুহূর্তে তোমাদের সামনে হাজির হচ্ছে। তোমরা তা থেকে সহজেই জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। আমাদের সময় এ ছিল কল্পনাতীত, অবিশ্বাস্য। এ দিক থেকেও তোমরা সৌভাগ্যবান। আমি চাই, তোমরা এ প্রযুক্তিকে ভাল কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখবে।

শিশুদের গ্রামে যাওয়ার উপদেশ দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, তোমরা যারা আজ শহরে বড় হচ্ছো, তোমাদের অনেকেরই দাদা-নানার বাড়ি কিন্তু গ্রামে। ছুটি পেলে তোমরা অবশ্যই তাদের কাছে ছুটে যাবে। দেখবে তোমাদের পেয়ে তারা কত আনন্দিত হন।

গ্রামের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের স্বাদ নিতে শিশুদের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এই সব না দেখলে তোমরা গ্রামবাংলার প্রকৃত রূপ থেকে বঞ্চিত হবে, বঞ্চিত হবে বাংলার প্রাণ থেকে। কারণ এগুলোই আমাদের শিকড়, বেঁচে থাকার মূল উপজীব্য।
 
খেলাঘর আসরের প্রশংসা করে রাষ্ট্রপতি বলেন, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর শিশু-কিশোরদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে অসাম্প্রদায়িক চেতনা, নিজস্ব সংস্কৃতি, সুকুমার বৃত্তির চর্চা ও সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করছে। এটা খুবই প্রশংসার।

খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর চেয়ারম্যান অধ্যাপিকা পান্না কায়সারের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বরেণ্য বুদ্ধিজীবী বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।

বক্তব্য দেন, সংগঠনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মতিন ভূঁইয়া প্রমুখ। শিশু বক্তার বক্তব্য দেন সৈয়দা রাইসা মাহজাবিন।

সভাপতির বক্তব্যে পান্না কায়সার বলেন, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর আস্ফালন, মৌলবাদ, দেশদ্রোহিতা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড একদিন খেলাঘরের শিশুরাই রুখে দেবে। সোনার বাংলা বিনির্মাণে তারাই হবে যোগ্য উত্তরসূরী।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক সামসুজ্জামান খান বলেন, একটি দেশের মানদণ্ড নির্ভর করে সে দেশের শিশুরা কতোটুকু ভালো কাজে পারদর্শী তার ওপর।

শিশুদের সৎপথে চলতে ও যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে খেলাঘর অসামান্য ভূমিকা রাখছে বলেও মনে করেন তিনি।

এর আগে শান্তির পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্ম গড়ে তোল’ স্লোগানে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি আবদুল হামিদ।

এ সময় শিশুরা জাতীয় সংগীতের পাশাপাশি ‘আমরা তো সৈনিক শান্তির সৈনিক-অক্ষয় উজ্জ্বল সূর্য/ খেলাঘর আমরা, আমরা খেলাঘর’ সহ বিভিন্ন গান পরিবেশন করে।

উদ্বোধন শেষে খেলাঘর আসরের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক টিমের পরিবেশনায় ১৫ মিনিটের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন রাষ্ট্রপতি।

দুইদিনের জাতীয় সম্মেলনে দেশের ৪০টি জেলা ও আঞ্চলিক কমিটি এবং প্রায় চার শতাধিক শাখা আসরের সহস্রাধিক প্রতিনিধি-পর্যবেক্ষক অংশ নিচ্ছেন।

শিশু-কিশোরদের অভিভাবক-শুভানুধ্যায়ীরা ছাড়াও অংশ নিয়েছেন সর্বভারতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন ‘সব পেয়েছি’ আসরের ছয় জন সংগঠকও।

শনিবার (১৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন।

বিশেষ অতিথি থাকবেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুছ এবং শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।

সমাপনী অনুষ্ঠানে খ্যাতিমান শিল্পী মুর্তজা বশিরকে শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার স্মৃতিপদক দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।