কমলাপুর স্টেশন থেকে: ‘গতকাইলকার ট্রেন আইজ আসপে নাকি বাহে?’ ৩০ ঘণ্টার বেশি সময় পরিবার নিয়ে কমলাপুরে স্টেশনে বিরক্তিকর অপেক্ষার পর স্টেশন মাস্টারের উদ্দেশ্যে প্রশ্নটা রাখলেন রংপুর এক্সপ্রেস-এর যাত্রী নেয়ামত উল্লাহ।
শুক্রবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় কমলাপুর স্টেশন থেকে ছাড়ার কথা ছিলো ট্রেনটি।
তবে সন্ধ্যার মধ্যে ট্রেনটি কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছাতে পারে- স্টেশন থেকে এমন আশার বাণী শোনানো হচ্ছে যাত্রীদের। কর্তৃপক্ষের এমন কথায় যাত্রীরা আস্থা রাখতে পারছেন না। তাদের বক্তব্য, স্টেশন থেকে একেকবার একেক তথ্য দেওয়া হচ্ছে। এতে বিভ্রান্ত হচ্ছেন যাত্রীরা।
লাগাতার অবরোধে নিরুপায় যাত্রীদের ট্রেনই এখন বড় ভরসা। শনিবার কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, প্লাটফর্মে শত শত যাত্রী বসে রয়েছেন ট্রেনের অপেক্ষায়। দিন পেরুলেও ট্রেনের খবর নেই। স্টেশনেই কাটছে অনেক যাত্রীর সকাল-দুপুর-রাত।
শুক্রবারের লালমনি এক্সপ্রেস রাত ১১টা ১০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও শনিবার দুপুরে কমলাপুর স্টেশন থেকে জানানো হয়, ট্রেনটি এখনো গাইবান্ধা রয়েছে। শুক্রবারের এ ট্রেনটি শনিবার কবে কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছাবে তার সঠিক সময়ও বলতে পারছেন না স্টেশনের কর্মকর্তারা।
লালমনি এক্সপ্রেসের যাত্রী কবির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, হামাক পরিবার নিয়া রাত থেইকা বইসা আছি। এখন স্টেশনে অফিসাররা কয় ট্রেন আইজকা আসে কিনা ঠিক নাই।
কমলাপুর স্টেশনে থেকে আরও দেখা গেছে, শুক্রবার রাত ৭টা ৪০ মিনিটে দিনাজপুরগামী দ্রুতযান এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে ছাড়ার কথা থাকলেও শনিবার দুপুরে কমলাপুর স্টেশনে জানানো হয় ট্রেনটি এখনো ফুলবাড়িয়া।
শুক্রবার সকাল ১০টার দিনাজপুরগামী একতা এক্সপ্রেস ছেড়েছে শনিবার দুপুর পৌনে ৩টায়।
শুক্রবার রাত ১১টা ২০মিনিটে রাজশাহীগামী পদ্মা এক্সপ্রেস কমলাপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও শনিবার সকাল থেকে জানানো হয় ট্রেনটি দুপুর আড়াইটায় ছাড়বে। দুপুর আড়াইটায় প্লাটফর্মে গিয়ে দেখা গেছে, ট্রেনটি কমলাপুর স্টেশনেই আসেনি।
খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস শনিবার সকাল ৬টা ২০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও এটি সন্ধ্যা ৫টায় ছাড়বে বলে জানানো হয়। চট্টগ্রাম মহানগর প্রভাতী সকাল ৭টা ৪০ মিনিটের পরিবর্তে দুপুর ২টায় ছাড়ার কথা রয়েছে। তবে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত স্টেশন থেকে ট্রেনটি ছেড়ে যায়নি।
এছাড়া বিভিন্ন আন্তঃনগর ট্রেন নির্ধারিত সময়ের ৪ থেকে ৩০ ঘণ্টা পর স্টেশন থেকে ছেড়েছে।
ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে কমলাপুর স্টেশনের ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী বাংলানিউজকে বলেন, সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে বিভিন্ন জায়গায় ট্রেনের গতি কমানো হচ্ছে। এ কারণে দূরপাল্লার ট্রেনের শিডিউলে বিঘ্ন ঘটেছে।
তবে তিনি দাবি করেন, নির্ধারিত সময়ে ট্রেন না ছাড়তে পারলেও ট্রেন চলাচল বন্ধ নেই। সব ট্রেনই চলছে।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এতে যাত্রীরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। যাত্রীদের অভিযোগ, শিডিউল বিপর্যয়ের জন্য কর্তৃপক্ষই দায়ী। ইচ্ছা করলে কর্তৃপক্ষ শিডিউল বিপর্যয় দেড় থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে নিয়ে আসতে পারেন। অবশ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, যাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই ট্রেন ধীর গতিতে চলছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৭, ২০১৪