ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

এক পুকুরে বহুতল মার্কেট, অন্য পুকুরে কফি হাউস!

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০১৫
এক পুকুরে বহুতল মার্কেট, অন্য পুকুরে কফি হাউস! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খাগড়াছড়ি: বুক ভরে শ্বাস নিতে শহরবাসী, কিংবা সকাল-বিকেল যাদের হাঁটার অভ্যাস তারা আসতেন এখানে। পুকুর দু’টির পাড়ে দাঁড়িয়ে, হেঁটে বা বসে কাটাতেন অবসর সময়, দূর করতেন ক্লান্তি।



কিন্তু প্রশাসনের বাণিজ্যিক স্বার্থের বলি হয়ে স্মৃতির পাতায় ঠাঁই নিয়েছে একটি পুকুর। অপরটির বিলুপ্তির ব্যবস্থাও সম্পন্নপ্রায়।

প্রাকৃতিক বিনোদনের উৎস খাগড়াছড়ি শহরের পুকুর দু’টি ভরাট করে একটিতে গড়ে তোলা হচ্ছে বহুতল মার্কেট, অন্যটিতে কফিশপ।

খাগড়াছড়ি শহরের জগন্নাথ মন্দির সংলগ্ন পুকুরটি ট্রাকে-ট্রাকে মাটি ফেলে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে আগেই।

এখন আয়োজন চলছে শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত পানবাজার পুকুরের শেষকৃত্যের। এ পুকুরটি ভরাট করে ‘পৌর কফি হাউস’ করার উদ্যোগ নিয়েছে খাগড়াছড়ি পৌরসভা।

তবে পৌরসভা কর্তৃপক্ষের দাবি, জনস্বার্থেই জগন্নাথ মন্দির পুকুরে বহুতল ভবন এবং ‍পানবাজার পুকুরে কফি হাউস তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শহরের কেন্দ্রস্থলে অবিস্থত পুকুর দু’টি ভরাট করে এসব স্থাপনা করার সিদ্ধান্ত এককভাবে নিয়েছেন খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র রফিকুল আলম। তার এ সিদ্ধান্ত মনোঃপূত না  হলেও মেয়রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস নেই কারো। এমনকি এসব বিষয় নিয়ে মুখ খুলছেন না কেউ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শহরের কেন্দ্রে ০.৩১ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত পানবাজার পুকুর। সেখানে পৌর কফি হাউস নির্মাণ করছে পৌরসভা। ইতোমধ্যে কাজের প্রায় অর্ধেক সম্পন্ন হয়েছে।

এর আগে জগন্নাথ মন্দির সংলগ্ন পুকুরটিতে বহুতল মার্কেট নির্মাণের লক্ষ্যে মাটি ফেলে ভরাট করা হয়। খাগড়াছড়ির সবচেয়ে পুরনো মন্দির জগন্নাথ মন্দির সংলগ্ন ০.৫২ একর জায়গাজুড়ে ছিল এ পুকুরটি। বহুতল ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে ভরাট করা জায়গার চারপাশে সীমানা পিলার করা হয়েছে। এছাড়া রাস্তার জন্য পুকুর সংলগ্ন স্থাপনা ভেঙে ৬ ফুট জায়গাও দখলে নিয়েছে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ।

তবে এসব উদ্যোগে খুশি নন শহরবাসী। কারণ, খাগড়াছড়ি মূল শহরে মোট ৩টি পুকুর রয়েছে। যেগুলো শহরের আগুন থেকে নিরাপত্তার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মেয়রের একক সিদ্ধান্তের কাছে সবাই অসহায়।

স্থানীয় উন্নয়নকর্মী ও গবেষক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, জনবহুল জায়গায় সামাজিক নিরাপত্তার জন্য পুকুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ পুকুরগুলো প্রাকৃতিকভাবে ব্যবহার করলে সবার উপকারে আসবে।

খাগড়াছড়ি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার মো. আব্দুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, অতীতেও আগুন থেকে শহর রক্ষায় পুকুরগুলো ভূমিকা রেখেছে। তিনি পুকুর রক্ষার দাবি জানান।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাছির উদ্দিন আহম্মেদ জানান, এর আগেও পুকুরগুলো ভরাটের চেষ্টা করা হয়েছিল। তখন তারা আন্দোলন করে তা বন্ধ করেছেন। এখন নতুন করে এগুলো ভরাট করা হচ্ছে। ভরাট করা পুকুরে স্থাপনা নির্মাণ না করে পুনঃখনন করে পুকুর হিসেবে রাখার দাবি জানান তিনি।
 
খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র রফিকুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, পৌর এলাকায় জায়গার কর্তৃত্ব পৌর প্রশাসনের। এখানে অন্য কারোর কথা বলার সুযোগ নেই। জনস্বার্থে পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। আর জায়গা নিয়ে সমস্যা নিরসনের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তি করবে।

তবে খাগড়াছড়ি বাজার ফান্ডের আহ্বায়ক ও জেলা পরিষদ সদস্য নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, পার্বত্য জেলা পরিষদে বাজার ফান্ড হস্তান্তর চুক্তি অনুযায়ী সব বাজার, ভূমি ও সম্পত্তি বাজার ফান্ডের। এখানে পৌরসভার একক কর্তৃত্বের সুযোগ নেই।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী জানান, পৌরসভা কিসের ভিত্তিতে বাজার ফান্ডের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করছে তা  খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গত ২৬ অক্টোবর পার্বত্য জেলা পরিষদের মাসিক সভায় ভরাট করা দু’টি পুকুরসহ আরো কিছু জায়গা পৌর মেয়র অবৈধভাবে দখল করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। পরে  বৈঠক থেকে বিষয়টি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে জানানোর সিদ্ধান্ত হয়।

স্থানীয়দের প্রত্যাশা, শহরের পুকুর দু’টি দখলমুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ উদ্যোগ এবং পুকুরগুলোর সামাজিক ব্যবহারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

বাংলাদেশ সময়: ০১৪১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৫
এসআর/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।