ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘ট্যাকা তো দিতাছি ছেবা-ছুবা তো পাইন্যা’

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০১৫
‘ট্যাকা তো দিতাছি ছেবা-ছুবা তো পাইন্যা’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ‘ট্যাকা-টুকা তো দিতাছি, মাগার ছেবার মান তো দেখত্যায়াছি না। ট্যাকা নিয়া কী করত্যাছে, কিছুই তো বুঝব্যার পারত্যাছি না’।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনের ওপর এভাবেই ক্ষোভ ঝাড়লেন পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী মুহাম্মদ হারুন।
 
সোমবার (৩০ নভেম্বর) দুপুর ১টার দিকে নগর ভবনে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে এসে বাংলানিউজকে এসব কথা বলেন এই ব্যবসায়ী। হারুনের পাশেই দাঁড়িয়ে থেকে আরেক ব্যবসায়ী মো. রফিক মিয়া কথায় সায় দেন।
 
দ্য এগ্রো লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী হারুন ‘ঢাকাইয়া’ ভাষায় আরও বলেন, কী সেবা দেওয়া হচ্ছে, নগর ভবনের পাশে দাঁড়ালেই তো বোঝা যায়। এখানে ঢোকা যায় না প্রস্রাবের গন্ধে, দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না, এটাই কি সেবার নমুনা! কিন্তু প্রতিবছর ট্যাক্স বাড়ানোর তালেই আছে।
 
তিনি বলেন, আমার ট্রেড লাইসেন্সের মেয়াদ পার হওয়ায় আমাকে দুই হাজার টাকা জরিমনা করা হয়েছে। আবার এখানে এসে শুনছি, নতুন করে উৎসে কর নাকি দিতে হবে। ট্যাক্স, উৎসে কর এবং জরিমনাসহ ১০ হাজার টাকা লাগছে। এই টাকা দিয়ে কী হচ্ছে! এলাকায় মশার যন্ত্রণায় থাকতে পারি না, পচা দুর্গন্ধে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে পারি না। নির্বাচিত সিটি করপোরেশনের এসব কেমন সেবার নমুনা!
 
অপর ব্যবসায়ী মো. রফিক মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, গত বছর এতো টাকা দেওয়া লাগতো না। এবার এসেই শুনছি ১৫ শতাংশ উৎসে কর দিতে হবে। যদি ট্যাক্স, জরিমানা দিতেই সব চলে যায় ব্যবসা করবো কিভাবে।
 
এই দু’জনকেই আবার দেখা যায়- নগর ভবনের পূর্বপাশে ব্যাংকের সামনে সিরিয়ালের বাইরে দালাল ধরে ফরম পূরণ করছেন। দালালরা তাদের ট্যাক্স কমিয়ে ধরে নিজেদের পকেটে নিচ্ছেন বাড়তি অর্থ। প্রথমে চোখের সামনে এসব দেখে, পরবর্তীতে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ব্যবসায়ী হারুনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কী করবো ভাই- লাইনে থাকলে অনেক সময় লাগতো। তাছাড়া তাকে (দালালকে) কিছু দিলাম। তারও কিছু হলো, আমার কাজটিও দ্রুত শেষ করতে পারলাম।
 
‌যেভাবে ট্যাক্স ধরছে তাতে ব্যবসা করাই কঠিন, এটি কমানোর প্রসঙ্গ তুললে বলেন, ‘ট্যাকা তো দিত্যাছি ছেবা-ছুবা তো পাইন্যা। এতো দিয়ে কী হইবো, তাই কিসু কমাইয়া লইত্যাছি’।
 
এদিকে, নগর ভবনে ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, মেয়র সাহেব আসার পর দু’টি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। যার মধ্যে দক্ষিণের পাঁচটি জোনে রাস্তা-ঘাট উন্নয়ন, নর্দমা পরিষ্কারসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ রয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি ২০১৭ সালের জুনের আগেই শেষ হবে। প্রকল্প অনুমোদনের পর এখন টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে।
 
এ প্রকল্পের আওতায় রয়েছে ১৬২ কিলোমিটার রাস্তা, ১৮৭ কিলোমিটার নর্দমা, ২৫ কিলোমিটার ফুটপাথ।
 
আরেকটি প্রকল্প সিটি করপোরেশনের অধিভুক্ত হওয়া কামরাঙ্গীর চরকে নিয়ে। এখানে ৫ কিলোমিটার রাস্তা, ৫ কিলোমিটার নর্দমা এবং ৩ কিলোমিটার ফুটপাথ। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এক বছরের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে জানান দক্ষিণের পরিকল্পনা ও নকশা শাখার এক কর্মকর্তা। ঢাকা দক্ষিণে মোট ৯৫৫ কিলোমিটার রাস্তা আছে। এসব রাস্তার বেশ কিছু সংস্কার খুবই প্রয়োজন বলে জানান ওই কর্মকর্তা। কিন্তু এসব কাজ কতদূর এগিয়ে যায় এটিই এখন দেখার বিষয়, জানান তিনি।
 
কমিশন নেওয়ার অভিযোগ মেয়রের বিরুদ্ধে:
মেয়রের বিরুদ্ধে কমিশন নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে নগর ভবনের একাধিক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, আপনারাই ভালো জানেন। তবে শুনেছি সে নাকি কমিশন ছাড়া ফাইলে স্বাক্ষরই করেন না। গত কয়েক মাস ধরেই নগর ভবনে অনেকেই এটি নিয়ে বলাবলি করছেন।
 
সোমবার (৩০ নভেম্বর) ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনকে বেলা সাড়ে ১১টায় অফিসে আসতে দেখা যায়। কার্যালয়ে ঢুকেই বেলা ১টা ০৬ মিনিটে বেরিয়ে যান তিনি। এই সময়ে কোনো সাধারণ নাগরিককে প্রবেশ করতে দেখা যায়নি।

 ** ডিএসসিসি’র দিনের বর্জ্য ৩৫শ’ টন, অপসারণ ১৮শ’ টন
** নাগরিকদের জন্য মেয়রের সময় মাসে ৬ ঘণ্টা!

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৫
এসএম/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।