ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ঐতিহাসিক পার্বত্য চুক্তির ১৮ বছর

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০১৫
ঐতিহাসিক পার্বত্য চুক্তির ১৮ বছর ছবি: সংগৃহীত

খাগড়াছড়ি: ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তিচুক্তির ১৮ বছর পূর্তি হচ্ছে বুধবার (০২ ডিসেম্বর)।

পাহাড়ি জনগণের অধিকার আদায়ের কথা বলে ১৯৭২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতৃত্বে পাহাড়ে শুরু হয় সশস্ত্র আন্দোলন।

প্রায় দুই দশকের বেশি সময় ধরে রক্তস্নাত সবুজ পাহাড়ে অস্ত্রের ঝনঝনানি, বারুদের গন্ধ আর চরম অশান্ত পরিস্থিতির পর সংগঠনটি ১৯৯৭ সালের এই দিনে সরকারের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদিত হয় জেএসএসের।

চুক্তিতে সরকারের পক্ষে স্বাক্ষর করেন তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের পক্ষে স্বাক্ষর করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও বর্তমান আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)।

চুক্তি স্বাক্ষরের পর ১০ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আনুষ্ঠনিকভাবে অস্ত্র সমর্পণ করেন সন্তু লারমা। আর খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামসহ চারটি স্থানে অস্ত্র সমর্পণ করেন শান্তি বাহিনীর এক হাজার ৯৬৮ জন সদস্য। পাহাড়ে আসে শান্তির বারতা। শুরু হয় চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া।

কিন্তু আঠারো বছর পেরিয়ে গেলেও চুক্তির বহু ধারা আজও বাস্তবায়িত হয়নি বলে অভিযোগ জনসংহতি সমিতির। ফলে চুক্তির অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে এখনো অবিশ্বাস, দূরত্ব আর হতাশা বিরাজ করছে। অবশ্য সরকার বরাবরই বলে আসছে, চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে তারা অঙ্গীকারাবদ্ধ।

পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী বলেন, সরকার সংকট নিরসনের জন্য চুক্তি করেছে। তাই চুক্তি নিয়ে হতাশার কিছু নেই। তিনি বলেন, পার্বত্য চুক্তির ৪টি খণ্ডে মোট ৭২টি ধারা রয়েছে। তার মধ্যে ৪৮টি ধারা সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত। ১৫টি ধারা আংশিক বাস্তবায়িত এবং ৯টি ধারা বাস্তবায়নের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

এছাড়াও চুক্তি অনুযায়ী খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদে ৩০টি, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে ৩০টি এবং বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদে ২৮টি দফতর ও বিভাগ হস্তান্তর করা হয়েছে।

এছাড়া ভূমি, বন ও পুলিশ প্রশাসন হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় রয়েছে। চুক্তির আলোকে পার্বত্য অঞ্চল থেকে ২৩৮টি সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।   

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) সভাপতি ও সুধাসিন্ধু খীসার অভিযোগ, দীর্ঘ ১৮ বছর পার হয়ে গেছে, এখনো চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের কোনো অগ্রণী ভূমিকা দেখছি না। সরকার জুম্ম জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে।

তবে খাগড়াছড়ি আসনের সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার মতে, চুক্তি বরখেলাপ করার কোনো সুযোগ নেই। যদি সরকার চুক্তি বাস্তবায়নে আন্তরিক না হতো তাহলে চুক্তি মতে যে বিভাগগুলো হস্তান্তর করার কথা সেগুলো নিয়ে ভাবতো না। শুধু বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা না করে চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারকে সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি।

খাগড়াছড়িতে সফররত জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, সরকার নাগরিকদের সঙ্গে চুক্তি বাস্তবায়নে অঙ্গীকার করেছে। কিন্তু দীর্ঘ ১৮ বছর পার হয়ে গেলেও সেই চুক্তি বাস্তবায়ন না করে সরকার প্রতারণা করছে। এটি নাগরিকদের মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করে। আর যখন মর্যাদা ক্ষুন্ন হয় তখন সেটি মানবাধিকার লঙ্ঘন। সময়ক্ষেপণ না করে দ্রুত চুক্তি বাস্তবায়ন করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষেরও প্রত্যাশা- সরকার দ্রুত পাহাড়ে শান্তি স্থাপন ও চুক্তি বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেবে।

বাংলাদেশ সময়: ০০৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১৫
এসএইচ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।