ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পলাশবাড়ীর পান বাজার

প্রতিদিন বিক্রি হয় ৮ লাখ টাকার পান

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০১৫
প্রতিদিন বিক্রি হয় ৮ লাখ টাকার পান ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

গাইবান্ধা: গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলা পান চাষের জন্য বিখ্যাত। উপজেলার দু’টি হাট থেকে প্রতিদিন পাইকারিভাবে বিক্রি হয় ৮ লাখ টাকার পান।

লাভজনক হওয়ায় তাই পান চাষ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে জেলার গোবিন্দগঞ্জ ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলায়।

পলাশবাড়ী উপজেলার পলাশবাড়ী-ঘোড়াঘাট মহাসড়কের পাশে ছোট শিমুলতলায় ও রংপুর-বগুড়া মহাসড়কের পাশে কোমরপুরে সপ্তাহে ছয় দিন বসে পান বিক্রির হাট। এর মধ্যে ছোট শিমুলতলায় রোববার ও কোমরপুরে বৃহস্পতিবার পান বিক্রির হাট বসে না।

প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে হাটে পান বিক্রি। এখান থেকে পান কিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করেন ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয়রা জানান, দুই পাইকারি হাটে প্রতিদিন প্রায় ৮ লাখ টাকার পান বিক্রি হয়। সপ্তাহে ছয়দিন চালু থাকায় হাট দু’টিতে মাসে প্রায় ২ কোটি টাকার পান বিক্রি হয়।  

সোমবার (৩০ নভেম্বর) সকালে ছোট শিমুলতলা হাটে আসেন ঢাকার শ্যামবাজারের পান ব্যবসায়ী আইয়ুব আলী। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, পলাশবাড়ীর পানের সুনাম রয়েছে। পান ‘বিড়া’ হিসেবে ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে। ৮০টি পানে এক বিড়া গণনা করা হয়। সে হিসেবে এ হাটে প্রতি বিড়া ১০০ টাকা হিসেবে ১ হাজার বিড়া পান কিনেছি।

উপজেলা সদরের শিমুলিয়া গ্রামের পানচাষি সৈয়দ আলী বাংলানিউজকে বলেন, পলাশবাড়ী সদর ইউনিয়নের শিমুলতলা, কালুগাড়ি, হিজলগাড়ি, শিমুলিয়া, হরিনমারী, গোয়ালপাড়া, নূরপুর, হোসেনপুর ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর, ঝাপড়, দিগদাড়ী, বরিশাল ইউনিয়নের রামপুর, দুবলাগাড়ি, ভবানীপুর গ্রামে পান চাষ বেশি হয়ে থাকে।

শিমুলতলা গ্রামের পানচাষি রাজা মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, বছরের সব সময়ই পান চাষ হয়। এক বিঘা জমিতে পানের বরজ তৈরিতে খরচ হয় ৬০-৭০ হাজার টাকা।

কালুগাড়ি গ্রামের পানচাষি আবুল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, চাষ শুরুর ৩/৪ মাসের মাথায় পান তোলা যায়। পান গাছ দীর্ঘজীবী হওয়ায় একটি গাছ থেকে ১০/১২ বছর পান তোলা যায়।   এক বিঘা জমিতে পান চাষে এক বছরে খরচ হয় এক লাখ টাকা। বছরে পান বিক্রি হয় ৪/৫ লাখ টাকার।

পলাশবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আজিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, উপজেলায় ৬১ হেক্টর জমিতে ছোট-বড় প্রায় এক হাজার বরজে পান চাষ হচ্ছে। পানচাষিদের প্রকৃত সংখ্যা নিরুপণে পরিসংখ্যান চলছে। অন্যান্য ফসলের মতো পানের ফলন বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হচ্ছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, পান গাছে পচন রোধে চাষিরা বিভিন্ন নিষিদ্ধ কীটনাশক ব্যবহার করছেন, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। চলমান কর্মশালাগুলোতে এ বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। কীটনাশকের ব্যবহার কমানো ও কীটনাশক ছাড়া পানের সংক্রমণ রোধে প্রযুক্তিগত দিক-নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে চাষিদের। পাশাপাশি রুটিন মাফিক প্রতিটি ইউনিয়নে গিয়ে পানখেত পরিদর্শন করা হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তোফাজ্জল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, উপজেলার প্রান্তিক পানচাষিদের সঙ্গে বসে এ খাতে সমস্যা-সম্ভাবনাগুলো চিহ্নিত করে তাদের চলমান প্রচেষ্টাকে সামনে এগিয়ে নিতে কাজ চলছে।  

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আ ক ম রুহুল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, পান একটি অর্থকরী ফসল। পান বর্তমানে ইউরোপে রফতানি হচ্ছে। কৃষি বিভাগ এ ব্যাপারে আগে তেমন উদ্যোগী না হলেও বর্তমানে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।

পলাশবাড়ী ছাড়াও জেলার গোবিন্দগঞ্জে ২৩ হেক্টর ও সুন্দরগঞ্জে ১০ হেক্টর জমিতে পানের চাষ হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০১২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১৫    
এমজেড/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।