ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দিনটি বাংলা একাডেমির

আদিত্য আরাফাত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১৫
দিনটি বাংলা একাডেমির ছবি: পিয়াস/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: অসময়ে এক পশলা বৃষ্টি কি আর উৎসবে বাধা হতে পারে? পারে না। বরং বৃষ্টিই হার মানে উৎসবের কাছে।



বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) গোটা দিনটাই ছিলো বাংলা একাডেমির। প্রতিষ্ঠার ছয় দশক পূর্তিতে হীরক জয়ন্তী উৎসবের আয়োজন করে বাঙালি জাতিসত্তা ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের প্রতীক হয়ে ওঠা এ প্রতিষ্ঠানটি।

কে না এসেছেন এদিন বাংলা একাডেমিতে! ভারতের চেন্নাইয়ের বিশিষ্ট লেখক-গবেষক ভি. বি গনেশন, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির সভাপতি শাঁওলী মিত্র, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ, কলকাতার সভাপতি বারিদবরণ ঘোষ ছিলেন উৎসবে। আর এপারের কবি-লেখক হিসেবে পরিচিত সব মুখতো ছিলেনই।

বাংলা একাডেমির প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম শিল্প-সাহিত্যপ্রেমী বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও এসে স্মৃতি রোমন্থন করেছেন। উৎসবের বিকেলে একাডেমির এদিক থেকে ওদিক ঘুরেছেন আপনমনে। দেখেছেন, ছয় দশকে কত এগিয়ে গেছে তাদের হাতে গড়া এ প্রতিষ্ঠানটি।

এদিন একাডেমির রবীন্দ্র-চত্বরে খোলা আকাশে বাংলা একাডেমির সদস্য-ফেলো-কবি-লেখক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মিলন মেলায় পরিণত হয় হীরক জয়ন্তী উৎসব।
একাডেমি জুড়েই ফুল আর আলপনা। পুরো প্রাঙ্গণে স্লো ভলিউমে চলছে রবীন্দ্র সংগীতের মিউজিক।

এমন আয়োজন চলাকালীন কথা হয় পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির সভাপতি শাঁওলী মিত্রের সঙ্গে। 'কেমন লাগছে?' জিজ্ঞেস করতেই বাংলানিউজকে বললেন, 'অসাধারণ। সুন্দর। নির্মল। এমন আয়োজনে অভিভ‍ূত। আনন্দিত। '

একসময়ের জনপ্রিয় এ বাঙালি মঞ্চ কাঁপানো অভিনেত্রী বলেন, এপার আর ওপার হলেও আমরা বাঙালি। ’ বললেন, 'ঢাকায় আসা হলেও বাংলা একাডেমিতে আজই প্রথম পা। '

একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, এখানে এসে যে খুশি লাগছে তা বোঝাতে পারবো না। এ প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকের সৃষ্টি। ২১শে ফেব্রুয়ারির আন্দোলনের ফসল।

সব্যসাচী সৈয়দ শামসুল হক বলেন, একজন লেখক হিসেবে বাংলা একাডেমি আমার সমস্ত আকাশ দখল করে আছে। এ একাডেমি আমাদের গর্ব।

রবীন্দ্র-চত্বরে খোলা বিকেলের আকাশে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি রীতিমত আড্ডামুখর হয়ে ওঠে। অংশ নেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সংস্কৃতি সচিব আকতারী মমতাজ, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, সৈয়দ শামসুল হক, সৈয়দ হাসান ইমাম, ড. গোলাম মুরশিদ, বিচারপতি কাজী এবাদুল হক, ভাষাসংগ্রামী রওশন আরা বাচ্চু, অধ্যাপক এবিএম হোসেন, ড. মনিরুজ্জামান, অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল কাইউম, ড. নিয়াজ জামান, এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, ড. বিপ্লব বালা, পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট চিত্রসমালোচক প্রণবরঞ্জন রায়, মোনায়েম সরকার, আনোয়ারা সৈয়দ হক, মাহবুব তালুকদার, অধ্যাপক শাহীনুর রহমান, সংসদ সদস্য কবি কাজী রোজী, কবি আলতাফ হোসেন, কবি মোহাম্মদ সাদিক, শিল্পী ফকির আলমগীর, জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আলতাফ হোসেন অধ্যাপক মনসুর মুসা, রামেন্দু মজুমদার, নূহ উল আলম লেনিন, ভাষাবিজ্ঞানী জামিল চৌধুরী, কবি আবিদ আনোয়ার, শিশু সাহিত্যিক খালেক বিন জয়েনউদ্দিন, ফারুক নওয়াজ, আনজীর লিটন, প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম, কামরুল হাসান শায়ক, জসীম উদ্দিন প্রমুখ।

এরপর এরপর বিকেল ৫টায় আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে স্বাগত ভাষণে একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়ে প্রতিষ্ঠিত বাংলা একাডেমি ও বাংলাদেশ এক অভিন্ন নাম। বাংলা একাডেমি ষাট বছরে ঐতিহ্যের অনন্য বিস্তার ঘটিয়ে চলেছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গনের ব্যক্তিদের সঙ্গে বিদেশি অতিথিদের সম্মিলন একাডেমির পরিসরকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিস্তৃত করবে।

ভারতের চেন্নাইয়ের বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক ভি. বি গনেশন বলেন, তামিলনাড়ুর স্বামীনাথ আয়ার আর বাংলার আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের ঐতিহ্য-অনুসন্ধিৎসা আমাদের গভীর আগ্রহের বিষয়।

তিনি বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে এই বক্তৃতানুষ্ঠান আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের নামাঙ্কিত মিলনায়তনেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির সভাপতি বিশিষ্ট নাট্যজন শাঁওলী মিত্র বলেন, বাংলাদেশের বাংলা একাডেমি ও পশ্চিমবঙ্গের বাংলা আকাদেমি যৌথভাবে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে গবেষণা করতে পারে।

বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ, কলকাতার সভাপতি বারিদবরণ ঘোষ বলেন, বাংলাদেশের বাংলা একাডেমি সুদীর্ঘ ষাট বছর বাংলা ভাষা নিয়ে আন্দোলন করে চলেছে। এজন্য একাডেমি অভিনন্দনপ্রাপ্য। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন চর্যাপদ নিয়ে গবেষণায় বাংলাদেশের বাংলা একাডেমির সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।

সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, বাংলা একাডেমি আমাদের প্রাণের প্রতিষ্ঠান। পাকিস্তানি অন্ধকার সময়ে আমরা এই একাডেমিতে সাংস্কৃতিক সংগ্রাম পরিচালনা করেছি। এখন একাডেমি ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে অসাধারণ সব কাজ করে চলেছে।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বাংলা একাডমি প্রতিষ্ঠার দিন ১৯৫৫ সালে ঢাকায় থাকা সত্ত্বেও আমি অনিবার্য কারণে অংশ নিতে পারিনি। কিন্তু আজ একাডেমির হীরক জয়ন্তী উৎসবে এসে সে দুঃখ ঘুচে গেছে। একাডেমি বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব উচ্চাভিলাষী ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করেছে সেজন্য একাডেমির সারা বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের ধন্যবাদপ্রাপ্য।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, নজরুল-পৌত্রী অনিন্দিতা কাজী, বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান প্রমুখ। রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১৫
এডিএ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।