ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

৪ ডিসেম্বর কামালপুর মুক্ত দিবস

গোলাম রাব্বানী নাদিম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০১৫
৪ ডিসেম্বর কামালপুর মুক্ত দিবস ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

জামালপুর: ৪ ডিসেম্বর কামালপুর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এদিনে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পরাজিত হয় পাকসেনারা।

শত্রুমুক্ত হয় ১১ নম্বর সেক্টরের জামালপুরের বকশীগঞ্জের ধানুয়া কামালপুর রণাঙ্গণ।

মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে জানা যায়, ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে এ অঞ্চলে ১১ নম্বর সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ পরিচালিত হয়। আর ১১ নম্বর সেক্টরের দায়িত্ব পালন করেন মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যতম বীর সেনা কর্নেল আবু তাহের বীরউত্তম।

বকশীগঞ্জের ধানুয়া কামালপুর থেকে দুই কিলোমিটার অদূরে ভারতের মহেন্দ্রগঞ্জে ১১ নম্বর সেক্টরের সদর দপ্তর ছিল। যুদ্ধ পরিচালনার সুবিধার্থে ১১ নম্বর সেক্টরকে আট ভাগে সাব সেক্টরে বিভক্ত করা ছিল।
সাব সেক্টর গুলো হচ্ছে,  মহেন্দ্রগঞ্জ, মানকারচর, পুরাকাশিয়া, ডালু, বাগমারা, শিববাড়ী, রংড়া, ও মহেশখোলা।

পাকিস্তানিরা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্ভাব্য পথগুলো বন্ধ করার জন্য সীমান্তে শক্তিশালী ঘাঁটি তৈরি করে। তাই ১১ নম্বর সেক্টরের দুই কিলোমিটার অদূরেই ছিল কামালপুর একটি শক্তিশালী দুর্ভেদ্য সুরতি পাকসেনাদের ঘাঁটি। কারণ কামালপুরের যোগাযোগ বিস্তৃত ছিল বকশীগঞ্জ শেরপুর জামালপুর টাঙ্গাইল হয়ে ঢাকা পর্যন্ত। তাই এ সেক্টর পাকিস্তানিদের কাছে যেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল তেমনি মুক্তিযোদ্ধাদের দিক থেকেও ছিল গুরুত্বপূর্ণ।

১১ নম্বর সেক্টরে নিয়মিত বাহিনীর ৩ হাজার ও ১৯ হাজার গণবাহিনীসহ মোট মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন ২২ হাজার। এ সেক্টরে ১২ মে থেকে ২৮ নভেন্বর পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকসেনাদের বিভিন্ন সময়ে ৫২ বার সম্মুখ যুদ্ধ হয়েছে। এসব যুদ্ধে ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিনসহ মোট ১৯৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। নিহত হয়েছেন ৪৯৭ জন পাকসেনা।

১৩ নভেম্বর কর্নেল আবু তাহেরের নেতৃত্বে কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট মিজান, ক্যাপ্টেন মান্নান, মুক্তিযোদ্ধা সাইদ কোম্পানি ও ভারতীয় বাহিনীর দু’টি কোম্পানি আর্টিলারীর সাহায্যে রাতে কামালপুর শত্রু ক্যাম্পে পরিকল্পনা মাফিক আক্রমণ করা হয়। এ সম্মুখ যুদ্ধে কামালপুরে একজন মেজরসহ দুই কোম্পানি পাকসেনা নিহত হন।

১৪ নভেম্বর পাকসেনাদের একটি মর্টার সেলের আঘাতে সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবু তাহেরের বাম পায় গুরুতর জখম হয়। বাকি ক’দিনের জন্য সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন উইং কমান্ডার হামিদুলাহ খান। সামরিক অভিযানের পূর্ব পরিকল্পনানুযায়ী ২৪ নভেম্বর থেকে কামালপুর পাকসেনা ক্যাম্প অবরোধ করে রাখেন মুক্তিযোদ্ধারা।

৩ ডিসেম্বর যৌথকমান্ডের সিদ্ধান্ত মতে অবরুদ্ধ পাকসেনা ক্যাম্পে একটি চিঠি পাঠানো হয়। বকশীগঞ্জের বৈষ্ণব পাড়ার অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা বশীর আহমদ বীরপ্রতীক মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঐতিহাসিক সেই চিঠি নিয়ে পাকসেনা ক্যাম্পে হাজির হন। চিঠিতে লেখা ছিল তোমাদের চারদিকে যৌথবাহিনী ঘেরাও করে রেখেছে। বাঁচতে চাইলে আত্মসর্মপণ কর, তা না হলে মৃত্যু অবধারিত।

এ চিঠি পেয়ে অগ্নিমূর্তি ধারণ করেন পাকসেনা কমান্ডার আহসান মালিক। কিন্তু অবস্থা বেগতিক দেখে অবরুদ্ধ কমান্ডার বীর বশিরকে না মেরে আটকে রেখে নির্যাতন করেন। অন্যদিকে বশিরের ফিরতে বিলম্ব হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। সবার ধারণা বশিরকে মেরে ফেলেছে পাকসেনারা। তাই আক্রমণের জন্য সবাই প্রস্তুত।
 
আক্রমণের আগে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে আরেকটি চিঠি দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা সঞ্জুকে পাঠানো হয় পাকসেনা ক্যাম্পে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বীরদর্পে দ্বিতীয় চিঠি নিয়ে সঞ্জু শত্রু ক্যাম্পে যান। সেই চিঠিতেও লেখা ছিল উপায় নেই বাচঁতে হলে আত্মসর্মপণ করতে হবে। অবশেষে গ্যারিসন অফিসার আহসান মালিকসহ বেলুচ, পাঠান ও পাঞ্জাবী সৈন্যের ১৬২ জনের একটি দল আনুষ্ঠানিকভাবে যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসর্মপণ করে।

নয় মাস যুদ্ধের পর শত্রু মুক্ত হয় বকশীগঞ্জের ধানুয়া কামালপুর। বীর মুক্তিযোদ্ধা বশির ও সঞ্জু বাংলার লাল সবুজের বিজয়ী পতাকা উত্তোলন করেন কামালপুরের মাটিতে। এরপর থেকে প্রতিবছর ধানুয়া কামালপুর এদিনে মুক্তদিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

দিবসটি পালন উপলক্ষে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।

কামালপুর মুক্ত দিবস উপলক্ষে ৪ ডিসেম্বর কামালপুরে আসছেন মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক এমপি, ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহাজাহান খান, পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মীর্জা আজম, সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ ও জাতীয় পার্টির সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী এম এ সাত্তার।

এছাড়া আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে জামালপুরের জেলা প্রশাসক শাহাবুদ্দিন খান, পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট বাকী বিল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)  নার্গিস পারভীন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বিজয় উপস্থিত থাকবেন।

কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মাহাবুবুল আলম চিশতির সভাপতিত্বে কামালপুর মুক্ত দিবসে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অবঃ) হেলাল মোর্শেদ খান বীরবিক্রম।

সন্ধ্যায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৫
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।