ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

৪ ডিসেম্বর ফুলছড়ি মুক্ত দিবস

মোমেনুর রশিদ সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০১৫
৪ ডিসেম্বর ফুলছড়ি মুক্ত দিবস ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

গাইবান্ধা: ৪ ডিসেম্বর গাইবান্ধার ফুলছড়ি হানাদারমুক্ত দিবস। সম্মুখ যুদ্ধে পাঁচ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের এই দিনে ফুলছড়িতে উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা।

 
 
দিবসটি উপলক্ষে আলোচনা সভা, শহীদদের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও মিলাদ মাহফিলে আয়োজন করেছে ফুলছড়ি ও সাঘাটার মুক্তিযোদ্ধারা।
       
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল তৎকালীন ফুলছড়ি সিও অফিসের (বর্তমান উপজেলা পরিষদ কার্যালয়) চার কিলোমিটার দূরে তিস্তামুখ রেলওয়ে ফেরিঘাট এলাকায় ঘাঁটি স্থাপন করে।
 
এই ক্যাম্প থেকে তারা আশপাশের হিন্দু সম্প্রদায়, আওয়ামী লীগ সমর্থক ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের  লোকজনের বাড়িতে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও নারী নির্যাতন শুরু করে। পাক বাহিনীর অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে এলাকার ছাত্র-যুবক সীমান্ত এলাকা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসে জুন মাসের প্রথম দিকে।
 
১১ নং সেক্টরের কোম্পানি কমান্ডার রোস্তম আলী খন্দকারের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ফুলছড়ির গলনারচরে ক্যাম্প স্থাপন করে। পরে পার্শ্ববর্তী সাঘাটা পুলিশ স্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযান চালায়।  
 
এছাড়া, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করতে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার গৌতম চন্দ্র মোদকের নেতৃত্বে এক পর্যায়ে ৩ ডিসেম্বর গভীর রাতে মুক্তিযোদ্ধা সামছুল আলম, নাজিম উদ্দিন, আব্দুল জলিল তোতা, এনামুল হকসহ অন্য মুক্তিযোদ্ধারা চার ভাগে বিভক্ত হয়ে ফুলছড়ি থানার আশপাশে অবস্থান নেয়।
 
পরদিন ৪ ডিসেম্বর ভোরে গেরিলা কমান্ডার সামছুল আলমের দলটি সর্বপ্রথম ফুলছড়ি থানা (পুলিশ স্টেশন) আক্রমণ করে উপর্যুপরি গ্রেনেড হামলা ও গুলিবর্ষণ শুরু করলে অপর তিনটি দলের মুক্তিযোদ্ধারাও চারিদিক থেকে গোলা বর্ষণের মাধ্যমে পাকিস্তানি সেনাশিবিরের দিকে এগুতে থাকে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ফুলছড়ি থানার পুলিশ সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পন করে।  
 
মুক্তিযোদ্ধারা থানার অস্ত্রাগারের সব অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিজেদের আয়ত্বে নিয়ে নেয়। এ সময় পাকিস্তানি সেনাদের একটি দল ক্যাম্প থেকে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের উপর দিয়ে উত্তরদিকে পালিয়ে যাওয়ার সময় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এনামুলের দলের মুখোমুখি হয়।  
 
এতে উভয় পক্ষের মধ্যে সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয়। ঘণ্টাব্যাপী সংগঠিত এ যুদ্ধে ২৫ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। পাঁচ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ওই দিনই (৪ ডিসেম্বর) ফুলছড়ি উপজেলা ও তিস্তামুখ রেলওয়ে ফেরিঘাট হানাদার মুক্ত হয়।  
 
শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন- আফজাল হোসেন, কবেজ আলী, যাহেদুর রহমান বাদল, ওসমান গণী ও আব্দুস সোবহান।  
 
ফুলছড়ি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার গৌতম চন্দ্র মোদক বাংলানিউজকে বলেন, ৫ ডিসেম্বর সকালে পাঁচ বীরের মরদেহ গরুর গাড়িতে করে সাঘাটা থানার সগুনা ইউনিয়নের খামার ধনারুহা স্কুলের দক্ষিণ-পশ্চিমে নিয়ে এসে সমাহিত করা হয়। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে পাঁচ বীর শহীদের সম্মানে সগুনা ইউনিয়নের নাম পরিবর্তন করে মুক্তিনগর ইউনিয়ন রাখা হয়। এছাড়া, শহীদদের সম্মানে তাদের কবরের পাশে নির্মিত হয়েছে স্মৃতি সৌধ ও মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০১৫     
এমজেড

** ৪ ডিসেম্বর কামালপুর মুক্ত দিবস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।