ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করতে যাচ্ছে ঢাবি

সাখাওয়াত আমিন, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০১৫
পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করতে যাচ্ছে ঢাবি ফাইল ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: স্থায়ীভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সম্পর্ক ছেদের বিষয়টি পাস হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটে।
 
উপাচার্যের (ভিসি) ঘোষণার পর অসন্ন সিন্ডিকেট সভাতেই বিষয়টি উত্থাপন করে তা পাস করিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া দ্রুতই শুরু হচ্ছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।



গত ১ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত বিজয় মিছিল শেষে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ঘোষণা দেন, পাকিস্তানের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর কোনো সম্পর্ক থাকবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ছাত্র বা শিক্ষক প্রতিনিধি আগামী সময়ে পাকিস্তানে যাবেন না।
 
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে আরেফিন সিদ্দিক বাংলানিউজকে বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে সর্বপ্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই গণহত্যা চালায় পাকিস্তানি বাহিনী। এরপর ২ ডিসেম্বর পুনরায় এ বিশ্ববিদ্যালয়েই গণহত্যা চালিয়ে শেষ করে তাদের মিশন। সুতরাং এ রকম একটি দেশের সঙ্গে ঢাবির সম্পর্ক রাখার কোনোই সুযোগ নেই।
 
‘তবে পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকায় তাদের কোনো শিক্ষার্থী বা প্রতিনিধি যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন তবে তাদের ক্ষেত্রে কোনো আপত্তি থাকবে না’।
 
এ জন্য উপাচার্য পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থায়ীভাবে ছিন্ন করার জন্য জোর দাবি জানান।

পাকিস্তানকে ‘নির্লজ্জ রাষ্ট্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান যে এ দেশে বর্বর হত্যাযজ্ঞ চালায় সে ব্যাপারটি বিশ্ববাসীর কাছে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। হামিদুর রহমান কমিশনের প্রতিবেদনেও বিষয়টি পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে। কিন্তু তারা এখন তা অস্বীকার করছে। সুতরাং এ ধরনের একটি রাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক আর একদিনও রাখার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।

উপাচার্য মনে করেন, কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকলে লাভের চেয়ে বরং ক্ষতির পরিমাণই বেশি হবে। কারণ বৈধ উপায়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এ দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে তাদের সুবিধা হবে।
 
এর আগে, বিভিন্ন বক্তব্যে পাকিস্তানকে ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ হিসেবেও উল্লেখ করে- সার্ক এবং জাতিসংঘ থেকেও স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবি জানান ঢাবি ভিসি।
 
সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর করা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দেয় পাকিস্তান।
 
২১ নভেম্বর রাতে এ দুই শীর্ষ মানবতাবিরোধী অপরাধীর ফাঁসি কার্যকর করার পরদিন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা গভীর উদ্বেগ ও পরিতাপের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি যে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতা সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী এবং আলী আহসান মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে যা দুর্ভাগ্যজনক। এ ঘটনায় পাকিস্তান খুবই বিরক্তি বোধ করে।
 
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করায় ২৩ নভেম্বর পাকিস্তানের হাইকমিশনার সুজা আলমকে তলব করে এর কড়া প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ।
 
এর পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ নভেম্বর পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে ডেকে গণহত্যার দায় সম্পূর্ণ অস্বীকার করে দেশটি।
 
এরপর থেকেই মূলত পাকিস্তানের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি উঠে দেশের নানা মহল থেকে।
 
সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম- মুক্তিযুদ্ধ ৭১, গণজাগরণ মঞ্চসহ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে অবিলম্বে পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছেদ করার জোর দাবি জানানো হয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৫
এসএ/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।