ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দেশের পতাকা বেঁচতে মাদারীপুরের কিশোর ঢাকায়

হাসিবুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০১৫
দেশের পতাকা বেঁচতে মাদারীপুরের কিশোর ঢাকায় ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: পরিবারের আর্থিক টানাপোড়েন নেই। নেই মা-বাবার অর্থ রোজগারের তাগাদাও।

তবু চার বছর ধরে জাতীয় পতাকা বেঁচতে প্রতি ডিসেম্বরে ঢাকায় চলে আসে মাদারীপুরের কিশোর ফয়সাল আহমেদ। তাহলে কেন এই ক্ষণিকের জন্য ‘বিক্রেতা’ হওয়া? অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফয়সালের সোজা কথা, ‘দ্যাশের পতাকা ব্যাচতে ভালো লাগে। ভালো লাগে দেইখাই আহি। ’

রোববার (৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ের সামনের সড়কে বাংলানিউজের কথা হচ্ছিল তার সঙ্গে। বিভিন্ন আকারের বেশ কিছু পতাকা স্ট্যান্ডে বেঁধে ছোট ছোট পায়ে কাকরাইলের দিকে যাচ্ছিল সে।

কাছে গিয়ে কথা বলতেই মুচকি হাসি ১৫ বছর বয়সী এ কিশোরের। বাড়ি মাদারীপুরের প্রত্যন্ত বাবলাতলা গ্রামে। পড়াশোনা স্থানীয় চর বাচামারা বাবলাতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে।

মাদারীপুর থেকে ঢাকায় এসে পতাকা বিক্রি প্রসঙ্গে কথা বলতেই তার উত্তর, ‘ভালো লাগে দেইখাই আহি, বাপ মা পাডাইতে চায় না। তাও নিজেই চইলা আহি। দ্যাশের পতাকা ব্যাচতেও ভালো লাগে। ’
 
পরিবারের তো অর্থ যোগাড়ের তাগাদা নেই। তবু কেন পতাকা বিক্রি? কিশোর ফয়সালের গলায় নির্ভেজাল আবেগ, ‘আমাগের বড়িতে ট্যাহা পয়সার সমেস্যা নাই, আমরা গরিব না। কিন্ত দ্যাশের পতাকা যহন আমাত্তে লোকজন কেনে তহন মনডা শান্তি পায়। ’
 
দশ টাকা থেকে শুরু করে আড়াইশ’ টাকা পর্যন্ত দামে বিভিন্ন আকারের পতাকা ও মাথার ব্যান্ড বিক্রি করছে ফয়সাল। কেবল রোববার নয়, সারা ডিসেম্বর এই পতাকা বিক্রি করবে সে। আর এই পতাকা ফেরি করে যাচ্ছে চার বছর ধরেই। অর্থাৎ প্রতি ডিসেম্বরেই দেশপ্রেমের পতাকা ফেরি করতে সবুজ গ্রামের নির্মল পরিবেশ ছেড়ে ইট-কাঠের নগরীতে চলে আসে সে।
 
আলাপে ফয়সাল বোঝাতে চায়, পতাকা বিক্রি করে কিছু অর্থ উপার্জনের চেয়ে তার কাছে বড় হচ্ছে দেশের প্রতি, পতাকার প্রতি ভালোবাসা। প্রতিবছর ভাষার মাস, স্বাধীনতার মাস কিংবা বিজয়ের মাস এলেই রাজধানীজুড়ে জাতীয় পতাকা বিক্রেতাদের আনাগোনা বেড়ে যায়।

ফয়সালের কথা, মৌসুমী এ পতাকা বিক্রেতারা কেবল বিক্রির জন্য নয়, আসেন পতাকা ও দেশের প্রতি অগাধ ভালোবাসা থেকেও।
 
বাংলানিউজের যখন আলাপ হচ্ছিল তখন ফয়সালের কাছ থেকে ছোট পতাকা কিনলেন একটি কোম্পানির ভ্যান চালক আব্দুল্লাহ। তিনি জানালেন, প্রতিবছরই পতাকা কিনে ভ্যানের সামনে টাঙান। কেবল তাই-ই নয়, পাবনা থেকে রাজধানীতে আসা ভ্যান চালক আব্দুল্লাহ বাড়িতে যাওয়ার সময়ও পতাকা কিনে নিয়ে যান তার সন্তানদের জন্য।

ফয়সাল-আব্দুল্লাহরা বোঝাতে চান, এ দেশের মানুষ লাল-সবুজের পতাকার প্রতি অকৃত্রিম প্রেম থেকেই বিজয়ের মাসে বাড়ির আঙিনায়, গাড়ির সামনে কিংবা দোকানের সম্মুখে টাঙিয়ে রাখেন ভালোবাসার এই নিদর্শন।
 
বাংলাদেশ সময়: ০২৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৫
এইচআর/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।