ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সড়কের দু’টি আইন

প্রস্তুত বিআরটিএ, পিছিয়ে আরটিএ

সাব্বির আহমদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০১৫
প্রস্তুত বিআরটিএ, পিছিয়ে আরটিএ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: সড়ক পরিবহনে শৃঙ্খলা এবং আধুনিক আইন প্রণয়নের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে দু’টি আইন করা হচ্ছে।

একটির নাম দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ আইন। আরেকটি পরিবহন আইন-আরটিএ।

এর মধ্যে বিআরটিএ আইন মন্ত্রিসভায় পাস হয়ে এখন সংসদে উত্থাপনের অপেক্ষায়। ইতোপূর্বে আইনটির খসড়ায় ত্রুটি নিয়ে সমালোচনা হওয়ায় তা কমিটির বৈঠকে এসেছে। এ নিয়ে মঙ্গলবার (০৮ ডিসেম্বর) দ্বিতীয় দফায় আবারও বৈঠক করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

এদিকে, আরটিএ আইনটি এখনও অনেকখানি পিছিয়ে। এটিকে খসড়া আকারে প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে এ নিয়েও স্টেক হোল্ডারদের মতামত না নেওয়ায় আপত্তি তুলেছেন কেউ কেউ। সব মিলিয়ে আইনটি এখনও মন্ত্রিসভায় পাঠানো যায়নি।

শীতকালীন অধিবেশনে পাস হওয়ার জন্য প্রস্তুত বিআরটিএ আইনের বিভিন্ন ত্রুটি এবং এতে স্টেক হোল্ডারদের মতামত যুক্ত করার জন্য মাসখানেক আগে একটি সভা করেছিল বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিচার্স সেন্টার (পিপিআরসি)।

পিপিআরসি’র চেয়ারম্যান অর্থনতিবিদ ও শিক্ষাবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদিত বিআরটিএ আইনে কিছু ঘাটতি ও দুর্বলতা রয়েছে। এটি সংশোধন না করে পাস করা হলে সরকারের একটি বিরাট মহৎ উদ্যোগ ব্যর্থ হবে। সড়ক দুর্ঘটনাও কমানো সম্ভব হবে না। ফলে বিষয়টি একটু চিন্তার।

তিনি বলেন, আইনে যান্ত্রিক যানের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সড়কে অযান্ত্রিক যানও চলাচল করে। যে বিষয়টি অবশ্যই যুক্ত করা প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, স্বল্প জনবল দিয়ে বিআরটিএ’র পক্ষে কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। তাই আউট সোসিংয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন।

এছাড়া চেয়ারম্যানের নিয়োগের বিধান পরিবর্তনের সুপারিশ করেন তিনি। এ নিয়ে স্টেক হোল্ডারদের মতামতসহ একটি প্রস্তাবনা সংসদীয় কমিটির কাছে তারা দিয়েছেন বলেও বাংলানিউজকে জানান হোসেন জিল্লুর রহমান।
 
এরপর দ্বিতীয় দফায় ৮ ডিসেম্বর বৈঠকে বসে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। নতুন আইনে নানা বিধান সংযুক্তির পাশাপাশি পরিবহন খাত নিয়ন্ত্রণে বিআরটি'র ক্ষমতা বাড়ানোরও প্রস্তাব করা হয়।

এ প্রসঙ্গে আরটিএ সচিব শওকত আলী বাংলানিউজকে জানান, বিআরটিএ আইনটি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। এখন তা স্থায়ী কমিটির হাতে রয়েছে। এরপরেই সংসদে পাস হওয়ার জন্য উঠবে। আর আরটিএ আইনটি ড্রাফ্ট আকারেই আছে। এটি এখনও মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়নি।
 
বিআরটিএ এবং আরটিএ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বাংলাদেশ বাস-ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক তালুকদার সোহেল বলেন, লক্ষ্য করলে দেখা যাবে- নতুন বিআরটিএ ও আরটিএ আইনের ৯৯ শতাংশ বিধি অনুযায়ী হবে বলে একটি ধূম্রজাল সৃষ্টি করা হয়েছে। এ বিধিগুলো কী তা পরিষ্কার যেমন নয়; তেমনি বিধিগুলো কোনো স্টেক হোল্ডার দিয়েও তৈরি হয়নি।

তাহলে কার জন্য আইন? প্রশ্ন রাখেন তিনি।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সরকার যে আইন করতে যাচ্ছে তাতে যাত্রী সাধারণের কোনো মতামত নেওয়া হয়নি এবং এটি জনবান্ধবও নয়। এজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়ে অবহিত করেছি।

তিনি আরও বলেন, স্মারকলিপিতে আমরা তুলে ধরেছি- এ আইন দেশের যাত্রী সাধারণের কল্যাণের জন্য করা হয়েছে বলা হলেও তাতে যাত্রী সাধারণের নিরাপদ ও আরামদায়ক যাতায়াতের বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি। এমনকি যাত্রীর সংজ্ঞাই নির্ধারণ করা হয়নি আইনে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সঙ্গে কারিগরি বিষয় জড়িত। এজন্য এখানে কারিগরি দক্ষতা সম্পন্ন ও জ্ঞান-ভিত্তিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন চেয়ারম্যান ও কর্মকর্তা থাকবেন এমন প্রত্যাশা থাকলেও আইনে তা রাখা হয়নি।

দেশে এখন যে আইনে সড়ক পরিবহন ও চালক যাত্রী মালিকদের বিষয় বলা হয়েছে সেটি প্রায় ৭৫ বছর পুরনো মোটর ভেহিক্যাল অর্ডিন্যান্স-১৯৮৩।

আইনটির বিষয়ে দীর্ঘদিন থেকে আধুনিকায়নের জন্য বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছিল। এছাড়াও সড়ক দুঘটনা রোধে আইনটির আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০২০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৫
এসএ/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।