ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সালাউদ্দিন-নৌফেলের স্মরণে করিমপুরে স্মৃতিস্তম্ভের দাবি

রেজাউল করিম বিপুল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০১৫
সালাউদ্দিন-নৌফেলের স্মরণে করিমপুরে স্মৃতিস্তম্ভের দাবি কাজী সালাউদ্দিন আহম্মেদ ও মেজবাউদ্দিন নৌফেল

ফরিদপুর: ১৯৭১ সালের ০৯ ডিসেম্বর। স্বাধীনতা যুদ্ধে এ দিনটিতে ফরিদপুরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সম্মুখ যুদ্ধ হয় করিমপুরে।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে সেদিন দেশমাতৃকার জন্য বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধা কাজী সালাউদ্দিন আহম্মেদ ও মেজবাউদ্দিন নৌফেলসহ সাতজন।
 
ফরিদপুরবাসী প্রতিবছরই গভীর শোক ও শ্রদ্ধার সঙ্গে সেদিন দেশের জন্য জীবন দেওয়া বীর সন্তানদের স্মরণ করে। বুধবার (০৯ ডিসেম্বর) সকালে তাদের স্মরণে আলীপুর কবরস্থানে কোরানখানি, কবর জিয়ারত ও পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হবে।

১৯৭১ সালের এ দিনে যশোর থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর একটি বহর ফরিদপুর মুখে আসছিলো। বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুর প্রবেশে বাধা দিতে করিমপুর ব্রিজ এলাকায় বহরের নেতৃত্বে থাকা ক্যাপ্টেনের গাড়িতে প্রথম গুলি ছোড়েন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সালাউদ্দিন। সঙ্গে থাকা আরও ৩৫ সহযোদ্ধা গুলিবর্ষণ ও গ্রেনেড চার্জ শুরু করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী এ সংঘর্ষ চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত।

পরাজয় আসন্ন জেনে যশোর-খুলনা অঞ্চল থেকে পাকিস্তানি বাহিনী পিছু হটতে শুরু করে। পিছু হটে আসা পাকসেনাদের একটি ঢাকাগামী গাড়িতে সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা গ্রেনেড চার্জ করে উড়িয়ে দেন। ঘটনাটি ঘটে ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর ইউনিয়নের করিমপুর সেতুর কাছে।

কিছুক্ষণের মধ্যে সেনাবাহিনীর একটি বড় বহর ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছালে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হয়। এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা তিন-চার ভাগে বিভক্ত হয়ে পাল্টা গুলি করতে করতে পিছু হটে করিমপুর গ্রামে আশ্রয় নেন। হানাদার বাহিনী গ্রামটি ঘিরে ফেলে। গুলিবিদ্ধ সালাউদ্দিনসহ মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল যে বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন, পাকবাহিনী সেটি পুড়িয়ে দেয়। ওই বাড়িতেই পুড়ে শহীদ হন সালাউদ্দিন।

সেদিন যুদ্ধে কাজী সালাউদ্দিন ও নৌফেল ছাড়াও শহীদ হন- আব্দুল ওহাব, সোহরাব হোসেন, আব্দুল আওয়াল, আব্দুল হামিদ ও মজিবুর রহমান।

মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করার জন্য হত্যা করা হয় আরও চার গ্রামবাসীকে। গ্রামবাসীদের মধ্যে শহীদ হন- তিন সহোদর বাকেলউদ্দীন মন্ডল, হযরত আলী মন্ডল, হাশেম আলী মন্ডল ও ওই বাড়ির রাখাল আবু খাঁ। নিহত চার পরিবারের সদস্যরা এখনও মানবেতর জীবন যাপন করছেন বলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়।

তাদের সহযোগিতা ও রাজাকারদের বিচার এবং শহীদদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভের দাবি শহীদ পরিবার ও ফরিদপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের। বিজয়ের পর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের দেহাবশেষ উদ্ধার করে ফরিদপুরের আলীপুর গোরস্থানে দাফন করা হয়।

স্মৃতিফলক নির্মানের দাবি জানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও সালাউদ্দিনের ছোট ভাই কাজী তসলিম উদ্দিন বলেন, সেদিন বড়ভাই সালাউদ্দিনসহ সাত মুক্তিযোদ্ধা ও চার গ্রামবাসী জীবন দিয়েছিলেন। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিলো গ্রামটিতে। ১৭ ডিসেম্বর করিমপুর গ্রামে গিয়ে সালাউদ্দিন ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করা হয়। পরে তাকে আলীপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়।

তিনি বলেন, ফরিদপুরের বড় এ যুদ্ধে যারা জীবন দিয়েছিলেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মানের জন্য বর্তমান সরকার ও জেলা প্রশাসনের কাছে করিমপুরে একটি স্মৃতিস্তম্ভ করার দাবি জানাই। এতে শহীদ সালাউদ্দিনসহ যে মুক্তিযোদ্ধারা জীবন দিয়েছেন, তাদের অবদান মানুষ মনে রাখবে।

সেদিনের যুদ্ধে অংশ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমান বলেন, স্বাধীনতার ৪৪ বছর পেরিয়ে গেলেও জাতীর এই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোনো স্মৃতিফলক নির্মাণ না হওয়াটা দুঃখজনক। পাশাপাশি সেদিন মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য তিন সহোদরসহ যে চারগ্রামবাসী শহীদ হয়েছিলেন তারাও কোনো স্বীকৃতি পাননি।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি আজ দেশ শাসনে, তাই এখনই সময় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কাজ করার।

যত দ্রুত সম্ভব করিমপুরে স্মৃতিফলক নির্মানের দাবি জানান তিনি।

তাদের দাবি, স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ হলে শহীদ সন্তানদের সাহসিকতা নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমের অনুপ্রেরণা জোগাবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৫
এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।