ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সচিবালয় গসিপ

কয়েক লক্ষ্যে, তক্কে তক্কে বাণিজ্যমন্ত্রী

সাজেদা সুইটি, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০১৫
কয়েক লক্ষ্যে, তক্কে তক্কে বাণিজ্যমন্ত্রী ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম (ফাইল ফটো)

ঢাকা: বেশ কিছু লক্ষ্যে তক্কে তক্কে এগোচ্ছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। নিজদেশের স্বার্থ ষোল আনাই বুঝে নিতে মন্ত্রিত্বের পুরো সময়টিতে ব্যস্ত রয়েছেন তিনি।

যতোবার বিদেশ সফর করেছেন, কোনোবারই খালি হাতে ফেরেননি দেশের মাটিতে।
 
বিদেশে রফতানি বাড়ানো ও যতোটা বেশি পারা যায়, ডিউটি ফ্রি সুবিধা বাগিয়ে নেওয়া এ ডাকসাইটে রাজনীতিবিদের প্রথম লক্ষ্য।
 
দ্বিতীয়টি হলো- বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশীদের কর্মসংস্থান বাড়ানো এবং সেসব দেশে যেসব শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়, সেগুলো বাংলাদেশীদের ক্ষেত্রে শিথিল করিয়ে নেওয়া।
 
বাণিজ্যমন্ত্রীর তৃতীয় লক্ষ্যটি হল- বিদেশে রফতানি সুবিধায় ‘রুলস অব অরিজিন’ শর্তের বিষয়টিও শিথিল করিয়ে নেওয়া।

যেমন- যে সুবিধাটি পেতে নিজেদের তুলায় নিজেরাই সুতা বুনে কাপড় তৈরি করতে হবে। সে সুবিধাটি প্রয়োজনে আমদানি করা তুলা বা সুতায় হলেও যেন আদায় করা যায়।
 
মন্ত্রীর এমন কর্মকাণ্ডের তথ্য জানাচ্ছেন তারই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
 
তারা বলছেন, ইতোমধ্যে মন্ত্রী যে রাষ্ট্রগুলোতে সফর করেছেন, বিভিন্ন চাওয়ার মধ্যে এ তিনটি প্রাধান্য পেয়েছে। বিনিয়োগ বাড়াতে মরিয়া দেখা গেছে তাকে। অন্যরাও এসব বিষয় এখন বুঝে গেছেন। যাদের আমন্ত্রণে তিনি যেখানে যাচ্ছেন, আমন্ত্রণকারী বা আয়োজকরাও জানেন- মন্ত্রীর চাওয়া জুড়ে রয়েছে বাংলাদেশের বাণিজ্যক্ষেত্র প্রসারের ফন্দি। তাই সময় নষ্ট না করে মূল প্রসঙ্গে আসেন দ্রুত তারা।
 
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের এসব আচরণের কথা গল্পচ্ছলেই জানাচ্ছিলেন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা।
 
নাম না প্রকাশের শর্তে তাদের এক কর্মকর্তা বললেন, ‘কিছু বিষয় মন্ত্রী মহোদয়কে বোঝানো যায় না। তিনি বলে বসেন, ‘আমি অত বুঝতে চাই না, এটা করতে হবে, ব্যস!’
 
‘মাঝে মাঝে উল্টো আমাদেরই আল্টিমেটাম দিয়ে দেন তিনি। বলেন- আগামী তিনদিনের মধ্যে ‘হয়ে গেছে’ শুনতে চাই। বাধ্য হয়ে আমরা যে কোনো উপায়ে কাজটি করে নেই’- হেসে হেসে বললেন তিনি।
 
অপর কর্মকর্তা বলেন, আগের বাণিজ্যমন্ত্রী (জিএম কাদের) আমলাদের সুবিধা-অসুবিধাগুলো কিছুটা বুঝতেন। কোনো কাজ ‘সম্ভব না’ বললে তিনি বোঝার চেষ্টা করতেন। কিন্তু এ মন্ত্রী (তোফায়েল আহমেদ) সেসব শুনতে রাজি নন। তার অভিধানে ‘অসম্ভব’ বলে কিছু রাখতে চান না। সব কাজেরই কোনো না কোনো উপায় থাকে বলে আমাদের শুনিয়ে দেন তিনি। ’
 
মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন মন্ত্রীর এসব আচরণের প্রশংসা করলেন।

তিনি মনে করেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে এমন দৃঢ়তা থাকতেই হবে। হাল ছেড়ে নয়, হাল ধরে তাদের নিয়ে এগোচ্ছেন মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

তাই এ মন্ত্রণালয় সাফল্যের মুখ দেখছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যান্য বেশ কিছু দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নত করতে ভূমিকা রেখেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
 
মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ বকশীর কাছে জানা গেল, ১৫-১৮ ডিসেম্বর কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ১০ম মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্স হবে। সেখানেও মন্ত্রী উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলোতে জোর দিতে ইতোমধ্যে বৈঠক সেরেছেন কর্মকর্তাদের সঙ্গে।
 
বৈঠক সূত্র জানায়, কেনিয়ায় আগামী সম্মেলন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বৈঠকে বলেছেন, আমরা সেখানে অংশ নেব, নেতৃত্ব দেবো। ওষুধ, সেবা, পণ্য বাজারজাতকরণ বিষয়ে আমাদের অবস্থান আরও ভালো করে আসবো।
 
প্রতিযোগিতার মনোভাব টের পাওয়া যায় মন্ত্রীর কথাতেও। তিনি বলেন, অনেক দেশ আমাদের সেভাবে গণ্য করতো না। আর আজ তারাই ঈর্ষা করছে।
 
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের রফতানি ৩২ বিলিয়ন ডলার, পাকিস্তানের ২৪ বিলিয়ন ডলার। আমাদের রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলার, পাকিস্তানের মাত্র ১৫ বিলিয়ন ডলার। এভাবে সব দিক থেকে আমরা তাদের চেয়ে এগিয়ে। আর এটাই অনেকের গাত্রদাহের কারণ। ’
 
‘২০০৯ সালে আমাদের রফতানি ছিল ১৫ বিলিয়ন ডলার, এখন ৩৫ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি ২১ শতাংশ, আমেরিকাতে ১৭ দশমিক ২৯ শতাংশ, তা জিএসপি সুবিধা ছাড়াই’- বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
 
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ইতালি ও জেনেভা সফরে গিয়েছিলেন তিনি। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে কী সুবিধা পাওয়া যাবে- সেসব সবিস্তারে জানিয়ে ইতালীয় ও সুইসদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করে আসেন।
 
আগস্টের শেষ সপ্তাহে মন্ত্রী গিয়েছিলেন সিঙ্গাপুর ও জার্মানি, নভেম্বরের প্রথমার্ধে লন্ডন। এ নিয়ে যে’কটি দেশেই গিয়েছেন তিনি, দেশ সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা দিয়ে এসেছেন বিদেশিদের; যাতে তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আকৃষ্ট হয়।
 
তবে এসব কৃতিত্ব একা নিচ্ছেন না তোফায়েল আহমেদ, মূল কৃতিত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।
 
বললেন,বাংলাদেশকে একসময় তলাবিহীন ঝুড়ি আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। সে সময় বাংলাদেশের মাত্র ২৫টি পণ্য পৃথিবীর ৬৮টি দেশে রফতানি হতো। মোট রফতানির পরিমাণ ছিল মাত্র ৩৪৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন ৭২৯টি পণ্য পৃথিবীর  ১৯২টি দেশে রফতানি করছে, রফতানি আয় এখন ৩১ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

আমাদের জিডিপিতে সার্ভিস সেক্টরের অবদান এখন ৪৯ দশমিক ৫ শতাংশ এবং শিল্প খাতে ৩০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
 
‘আগামী ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি। তখন দেশের  রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে  একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়তে কাজ করছে। ২০৪১ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের একটি উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে’- দৃঢ়কন্ঠে বলেন ‘জেদী ও জাঁদরেল’ বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৫
এসকেএস/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।