ফরিদপুর: ১৯৯৯ সালে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কোদালিয়া, শহীদ নগর ও লস্করদিয়া ইউনিয়নের অনেকাংশ ভেঙে নগরকান্দা পৌরসভা গঠন করা হয়। এরপর ১৭ বছরেও নিজস্ব পৌরভবন বা ভবনের জন্য জমি নির্ধারণ কোনোটিই হয়নি।
ডাক বাংলোর জরাজীর্ণ ৪টি কক্ষবিশিষ্ট একতলা ভবনে শুরু থেকে এ পৌরসভার কার্যক্রম চলছে। জানা গেছে, ৩ হাজার টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল ভবনটির জন্য। কিন্তু ১৭ বছরেও কোনো টাকা পরিশোধ করা হয়নি।
শুধু তাই নয় ৭২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকার কথা এই তৃতীয় শ্রেণির পৌরসভায়। সেখানে ৫ জন স্থায়ী ও ৭ জন অস্থায়ী মোট ১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়েই চলছে পৌরসভার কার্যক্রম।
এ নিয়ে এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যে পৌরসভার নিজস্ব ভবনই নেই, সেখানকার পৌর নাগরিকরা কী সেবা পেতে পারে, তা সহজেই অনুমান করা যায়।
স্থানীয় ব্যবসায়ী রাজীব হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, পৌরসভায় যে ১২ জন কাজ করেন, তারা অনেক কষ্ট করে দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। কিন্তু সার্বিক কোনো উন্নয়ন বা নাগরিক সেবা যেভাবে পাওয়ার কথা, তার কিছুই হচ্ছে না।
প্রায় ১৯ হাজার পৌরবাসীর সাড়ে ৭ বর্গকিলোমিটার পৌর এলাকায় উন্নয়নের তেমন কোনো ছোঁয়াই লাগেনি। পৌর সুবিধার মধ্যে সড়ক বাতি ছাড়া আর কিছুই হয়নি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জরাজীর্ণ ভবনেই ঝুঁকি নিয়ে অফিস করছেন পৌর মেয়রসহ ৩ জন অস্থায়ী কর্মচারী। ভবনের ছাদে বিভিন্ন স্থান থেকে আস্তর খুলে পড়েছে।
পৌরসভার অফিস সহকারী সুমন, হাফিজুর রহমান ও ইলেকট্রিশিয়ান নাইমুর রহমান বলেন, ৭২ জনের কাজ আমাদের ১২ জনের করতে হয়। তাই কে কোন পদে আছি, সেটা বড় কথা নয়। যখন যেখানে কাজে লাগছে, তাই করতে হচ্ছে।
তারা আরও বলেন, নিজের চোখেই দেখেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কিভাবে এই ভবনে কাজ করছি। আমাদের একটা ভবন খুবই জরুরি। যে কোনো সময় এই ভবনে বিপদ ঘটতে পারে।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেনের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপির নেতারা ১৭ বছর ধরে এ পৌরসভার দায়িত্বে ছিলেন। দীর্ঘদিন দায়িত্বে থেকেও পৌরসভার কোনো উন্নয়ন না করে নিজেদের উন্নয়ন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও মেয়ররা। তাই পৌর নাগরিকরাও কোনো সেবা পাননি। আর পৌরসভারও কোনো উন্নয়ন হয়নি।
তিনি বলেন, ৬ মাস আগে অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা রায়হান উদ্দিন মেয়র হয়েছেন, তারপর থেকে কিছুটা উন্নয়ন শুরু হয়েছে। আশা করি, এই নির্বাচনেও বর্তমান মেয়র রায়হান উদ্দিন জিতবেন। তিনি জিততে পারলে এই এলাকায় সার্বিক উন্নয়ন হবে।
এ বিষয়ে রায়হান উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, পৌরসভার শুরুতে দু’জন প্রশাসক ও পরবর্তী সময়ে চারজন চেয়ারম্যান ও মেয়র ১৭ বছর এই পৌরসভায় দায়িত্ব পালন করেছেন। কেউই পৌরসভার উন্নয়নের কথা ভাবেননি।
তিনি আরও বলেন, গত ছয় মাস হলো আমি মেয়র হয়েছি। এরপর থেকে বিভিন্ন এলাকার রাস্তা-ঘাটসহ নানা উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। এই নির্বাচনের পর যে কোনো মূল্যে পৌরসভার জন্য জমি ও ভবন নির্মাণ করা হবে। প্রয়োজনে নিজের মালিকানাধীন জমির ওপর পৌর ভবন নির্মাণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৫
আরকেবি/আরএম