ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ইব্রাহিমের সাধের ছাগল ও পশু হাসপাতালের চিকিৎসা (ভিডিও)

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৬
ইব্রাহিমের সাধের ছাগল ও পশু হাসপাতালের চিকিৎসা (ভিডিও) ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: জিনজিরার ইব্রাহিম আলী (৬৫)। চিকিৎসার জন্য নিজের পালিত সাদা-কালো রংয়ের একটি ছোট খাসি ছাগলকে নিয়ে এসেছেন নগরীর বঙ্গবাজারে অবস্থিত সরকারি কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতালে।


কিন্তু হাসপাতালে এসে বিধিবাম। কোনো ধরনের চিকিৎসাই পেলো না ইব্রাহিমের সাধের খাসি ছাগলটি।
ইব্রাহিম আলী জানালেন, দুইদিন ধরে বদহজমের সঙ্গে পাতলা পায়খানাও হচ্ছে ছাগলটির। বলা চলে পোষা প্রাণীটি এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।  

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালের ভেতরে জায়গা হয়নি, আঙ্গিনায় ভ্যানের উপরেই ছাগলটির শরীরে স্যালাইন দিচ্ছেন ইব্রাহিম নিজেই। সঙ্গে কিছু ওষুধও কিনেছেন বাইরের ফার্মেসি থেকে। তবে হাসপাতাল থেকে কোনো ধরনের ওষুধ পাননি তিনি। চাঁনখারপুল থেকে ৭৫ টাকা দিয়ে স্যালাইন ছাড়াও ১৫০ টাকার অন্যান্য ওষুধ কিনেছেন ইব্রাহিম।

হাসপাতালে ভর্তি করাতে চাইলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছাগলটিকে ভর্তি করতে রাজি হননি।  

ইব্রাহিম বলেন, হাসপাতাল কিছু দেয়নি। ১৭৫ ট্যাকার ওষুধ ও ৭৫ ট্যাকার পানি (স্যালাইন) কিনছি। সব ওষুধ চাঁনখারপুল থাইকা কিনছি। হাসপাতাল বলে একপদ (ওষুধ) আছে আর নাই। খাসিটারে ভর্তি করতে চাইছি। ওরা (ডাক্তার) বলে ভর্তি করা যাবে না, যার যার ছাগল বাড়িতে লইয়া যান গা। এখন ছাগল নিয়ে জিনজিরা যামু গা। হাসপাতালে আইসা তো কোনো সমাধান পাইলাম না। ’

গরু, ছাগল সহ অন্যান্য পোষা প্রাণীদের চিকিৎসা করাতে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই হাসপাতালে আসেন অনেকে। অথচ মোট ৩.৪ একর জমির ওপর অবস্থিত ৩ তলা বিশিষ্ট হাসপাতালটিতে এসে কোনো চিকিৎসা সেবাই পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।


 
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালটির প্যাশেন্ট শেড, পোস্ট মর্টেম শেড, অপারেশন থিয়েটারের অবস্থাও বেহাল।  স্থাপনায় নেই কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনাও। একজন চিফ ভেটেরিনারি অফিসার, একজন ভেটেরিনারি অফিসার, দুইজন অতিরিক্ত ভেটেরিনারি অফিসার, সাতজন ভেটেরিনারি সার্জন, একজন এনেসথেসিওলজিস্ট, একজন রেডিওলজিস্ট, একজন ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট, কম্পাউন্ডার, ড্রেসার এবং এক্স-রে অপারেটর মিলিয়ে ১৬টি পদ  থাকার কথা হাসপাতালটিতে। কিন্তু বর্তমানে মাত্র ১০ জন স্টাফ দিয়ে চলছে হাসপাতালটি। ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট, রেডিওলজিস্ট, এক্স-রে অপারেটর ও আল্ট্রাসনোগ্রাফির পদ খালি রয়েছে।

শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এবং অন্যান্য দিন দুপুর দুইটা পর্যন্ত নামমাত্র খোলা থাকে হাসপাতালটি। চিকিৎসা দেয়ার তেমন কোনো গরজ না থাকায় ইব্রাহিমের মতো গৃহপালিত ও পোষা প্রাণী নিয়ে এখানে আসা সবাইকে নিরাশ হয়ে ফিরতে হয়।  

গরু-ছাগল-ভেড়া ছাড়াও অন্যান্য পোষা প্রাণীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোনো সেবা নেই হাসপাতালটিতে। নগরীর আজিমপুর থেকে নিজের শখের কুকুরটিকে চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে এনেছেন সাইমুম ইসলাম। অথচ হাসপাতালে কুকুরের রোগ সনাক্তকরণের জন্য কোনো যন্ত্রপাতি নেই। এমনকি কুকুরের সব ধরনের ওষুধও বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনতে হয়।  

সাইমুম বাংলানিউজকে বলেন, কুকুরের জন্য এই হাসপাতালে একটি ওষুধও দেয়া হচ্ছে না। সব ওষুধ বাইরে থেকে কেনার জন্য রেফার করা হচ্ছে। এমনকি কুকুরের আলট্রাসনো করাবো সেই ব্যবস্থাও নেই। ডাক্তার বলে হঠাৎ করে মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে। হাসপাতালে কিছুই নেই! আছে শুধু রড সিমেন্টের তৈরি কয়েকটি রুম। ’

শুক্রবার সকালে মাত্র একজন চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা চলে হাসপাতালটি। হাসপাতালে কথা হয় কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. নিলাদ্রী শিকদারের সঙ্গে। চিকিৎসা সেবা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গরু ও ছাগলের পাতলা পায়খানা, বদ হজম ও রুচি বৃদ্ধির ওষুধ শুধু ফ্রি দেয়া হয়। বাকি ওষুধগুলো বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনতে হয়। ’
 
হাসপাতাল সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আল্ট্রাসনো মেশিন, এক্সরে মেশিন ছাড়াও কোনো অক্সিজেন সিলিন্ডার নেই। ওটি রুমও রয়েছে নামেমাত্র। ৪ থেকে ৫ মাস আগে নষ্ট হয়ে অকেজো হয়ে পড়ে আছে আল্ট্রাসনো মেশিনটি। পোষা প্রাণীর ভর্তির কোনো ব্যবস্থা নেই এখানে। বলা চলে গরু ও ছাগলের পাতলা পায়খানা ও রুচি বাড়ানোর ওষুধ দেয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ এখানকার চিকিৎসা।    

গৃহপালিত ও পোষা পশুর পাশাপাশি শখের পোষা পাখির চিকিৎসার জন্যও হাসপাতালটিতে নেই তেমন কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, মানুষের রোগের ওষুধ এবং এসব পোষা প্রাণীর ওষুধ প্রায় একই ধরণের। যে কারণে কোনো ওষুধ রাখা হয় না। তাছাড়া এসব পোষা প্রাণীর ওষুধও অনেক দামি।

হাসপাতালের প্রধান ভেটেরিনারি চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ আব্দুল হালিম বলেন, আমরা যেভাবে ওষুধ বরাদ্দ পাই সেই অনুযায়ী চিকিৎসা দিয়ে থাকি। গরু ও ছাগলের জন্য কিছু ওষুধ বিনা মূল্যে দিয়ে থাকি। তবে পোষা প্রাণী বিশেষ করে কুকুর, বিড়াল ও নানা প্রজাতির পাখির জন্য কোনো ওষুধ দেয়ার ব্যবস্থা আমাদের কাছে নেই। কারণ এসব পোষা প্রাণীর ওষুধ ও মানুষের ওষুধের ধরন একই। আমাদের ভেটেরিনারি হাসপাতালে মানুষের ওষুধ রাখার কোনো বিধান নেই। ’

তিনি আরও বলেন, আল্ট্রাসনো মেশিনটা ৪-৫ মাস ধরে নষ্ট। তবে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই কিনে ফেলবো। ’
কর্মী সংকট প্রসঙ্গে ডা. হালিম বলেন, ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিস্ট, রেডিওলজিস্ট, এক্স-রে অপারেটর ও আল্ট্রাসনোগ্রাফি অপারেটরের পদ খালি রয়েছে। ’
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৬
এমআইএস/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।