ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘কারাবন্দি নেই, আছে শুধুই স্মৃতি’

শেখ জাহাঙ্গীর আলম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৬
‘কারাবন্দি নেই, আছে শুধুই স্মৃতি’

ঢাকা: পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোড়ে পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে এখন নেই কোনো বন্দি, তবে প্রতিটি সেলেই রয়েছে কয়েদিদের স্মৃতিচিহ্ন। কারাগারের প্রতিটা সেলের দেয়ালে লেখা রয়েছে বন্দিদের ভালবাসা-আবেগ অনুভূতিসহ বিভিন্ন স্মৃতিকথা।

 

শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) নাজিমউদ্দিন রোডে অবস্থিত পুরান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কয়েদিদের বিভিন্ন সেলে ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।

 

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ঠিকানা বদল হয়েছে। কেরাণীগঞ্জে নির্মিত নতুন কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে এখানকার সব বন্দিদের। দীর্ঘ ২২৮ বছরের পুরোনো কারাগারটি বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহাসিক ঘটনার প্রামাণ্য দলিল।
এ কারাগারেই কেটেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের বেশ কয়েকটি বছর। এখানেই সংঘটিত হয়েছে জাতীয় চারনেতার নির্মম হত্যাযজ্ঞ।

বন্দিস্থানান্তরের পর এখানে বিরাজ করছে সুনশান নীরবতা। কারাফটকের ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়লো ঝর্নাধারা। ফটকের ভেতরে বাম পাশে রয়েছে বন্দিদের সাক্ষাৎ কক্ষ এবং ডান পাশে নারী কয়েদীদের ওয়ার্ড।

নারী ওয়ার্ডের সামনেই রাস্তা দিয়ে একটু সামনে এগিয়ে গেলেই সুরমা ভবন। ওই রাস্তার দু’পাশে তাকালেই চোখে পড়বে বিভিন্ন দেয়ালিকা। যেখানে লেখা রয়েছে বিখ্যাত মনিষীদের নানা উক্তি। নারী ওয়ার্ডের ফটকে তারা ঝুললেও বাম পাশে দেয়ালে লেখা রয়েছে ‘বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর অর্ধেক তার নারী, অর্ধেক তার নর’ এর ঠিক ডান পাশেই লেখা রয়েছে ‘নারীকে তার প্রাপ্ত দিলে দেশ ও দশের সুফল মিলে’।
এর একটু সামনে গেলেই চোখে পড়বে চারটি দেয়ালিকা। এর একটিতে লেখা রয়েছে ‘একটি আলোর কণা পেলে লক্ষ প্রদ্বীপ জ্বলে একটি মানুষ, মানুষ হলে বিশ্ব জগত চলে’।

কারাগারের ভেতরের প্রতিটি দেয়ালেই এভাবে লেখা রয়েছে বিভিন্ন মনিষীর উক্তি।

কারা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক কর্নেল ইকবাল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, মানুষ বন্দি থাকলে তার স্বাভাবিক চিন্তা-চেতনায় বাধাগ্রস্ত হয়। বন্দিরা যাতে স্বাভাবিক চিন্তা চেতনায় থাকতে পারে তার জন্যই এসব উক্তি লেখা হয়েছিলো।

রাস্তার বাম পাশ দিয়ে গেলে দেখা যাবে লাল রঙের সুরমা ভবন। আর সোজা তাকালেই চোখে পড়বে শাহী কারা রান্নাঘর।

কারারক্ষীরা জানায়, এ সুরমা ভবনে কম বয়সী বন্দিদের রাখা হতো। যারা ১৮ বছর অথবা তার কম। প্রক্রিয়া শেষে এখান থেকে তাদের পাঠানো হতো কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র কারাগারে।

ভবনটির সামনে বিশাল খালি জায়গা রয়েছে। বন্দিরা এ খালি জায়গায় হাঁটা-চলা করতো।

সুরমা ভবনে থাকা সেলের ভেতরের দেয়ালে বিভিন্ন লেখা ও চিত্র আঁকা রয়েছে। শহীদ মিনার, নৌকা, গাছ, হৃদয় আকৃতির চিহ্ন। সেখানে লেখা আছে ‘ভালবাসা শুধু কষ্ট’ এর ওপরে হৃদয়ে ভেতরে আছে ‘আর+এস’। এর ঠিক পাশে দেয়ালেই আঁকা হয়েছে গাছ। গাছের পাশেই লেখা রয়েছে বিভিন্ন জায়গার নাম ‘কালশী, পল্লবী’। এর পাশে নৌকা ও শহীদ মিনারের ছবি আঁকা।

বন্দিরা এগুলো এঁকে জানান দিয়েছে তারা বাংলাদেশের ইতিহাসকে মনে রেখেছে। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা রয়েছে তাদের।

এর পাশের সেলের পশ্চিম দেয়ালে আঁকা রয়েছে কাবা শরীফের ছবি। সেখানে মুসলমান বন্দিরা নামাজ আদায় করতেন। আর সামনে মেঝেটাও অনেক পরিষ্কার দেখা গেছে।
কারারক্ষী সাদিকুল বাংলানিউজকে জানায়, এগুলো বন্দিরা এঁকেছে। সেলে বন্দি থেকে তাদের মনের কথাগুলো এ দেয়ালে ছেপে গেছে। এ চিত্রগুলো দেখে বোঝা যায়, বন্দিদের মনের কথা।

কারা ফটকের সামনের রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলে ডান পাশে বন্দিদের যমুনা ভবন। এর বাম পাশের রাস্তা ধরে গেলেই দেখা যাবে জাতীয় চার নেতার কারা স্মৃতি জাদুঘর। যমুনা ভবনের থেকে বাম পাশে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারা স্মৃতি জাদুঘর।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৬
এসজেএ/ওএইচ/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।