ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

সত্যি সত্যিই ১০০ টাকায় পুলিশে চাকরি

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৬
সত্যি সত্যিই ১০০ টাকায় পুলিশে চাকরি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: সবার শীর্ষে থেকেও চাকরিতে যোগদান করলেন না তিনি। সেরা ১০ এর মধ্যে শীর্ষে থাকা আবেদনকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলো।

বলা হলো, চাকরিতে যোগদান করতে। কিন্তু তিনি নারাজ। উল্টো তার চাকরি না করার কারণ শুনেই তাজ্জব বনে গেলেন খোদ পুলিশ কর্মকর্তারা।

ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারেন নি। সাধারণ এক নাগরিকের হাতে নিজেরাই স্ক্রিনিং হচ্ছেন ‘সততার’ অন্য এক পরীক্ষায়!

১০০ টাকায় পুলিশে চাকরি! এ শিরোনামে গত ৯ সেপ্টেম্বর একটি সংবাদ প্রকাশ করেছিলো বাংলানিউজ।

তা কতটুকু সত্যি। পরখ করতেই তিনি আবেদন করেছিলেন। ব্যাংক ড্রাফট বাবদ খরচও করেছিলেন মাত্র ১০০ টাকা। লিখিত পরীক্ষা। মৌখিক পরীক্ষা। শারীরিক পরীক্ষা। পুলিশ ভেরিভিকেশন। সবকিছুতেই বিনা বাধায় উতরে গেলেন তিনি।

চাকরি পেতে কোথাও টাকা পয়সা দিতে হয় কিনা তারই উল্টো পরীক্ষা করছিলেন।

মেধা তালিকায় সবার শীর্ষে থাকা চাকরিচ্ছু প্রার্থীর মুখে এ কথা শুনে হতবাক খোদ পুলিশ কর্মকর্তারাই।

তিনি ওবায়দুর রহমান। ধামরাই চাউনা গ্রামের খোরশেদ আলম ও সালেহা বেগম দম্পতির ছেলে। এইচএসসির গণ্ডি পেরিয়ে সদ্য পা রেখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

‘এর মাধ্যমে যেমন নাগরিক সচেতনতা বেড়েছে। তেমনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওবায়দুর রহমানের মতো সাহসী নাগরিকদের অদৃশ্য মূল্যায়ন বা সততার পরীক্ষায় আমাদের উত্তীর্ণ হতে হচ্ছে’-বাংলানিউজকে এমনটিই বলছিলেন ঢাকার পুলিশ সুপার (এসপি) শাহ মিজান শাফিউর রহমান।

একটা সময়ে পুলিশে নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে কলঙ্কে ক্ষত-বিক্ষত ছিলো ঢাকা জেলা। অভিনব নানা কৌশল। কোটা আর মোটা অংকের অর্থের লেনদেনেই ছিলো যোগ্যতার মাপকাঠি।

পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর পরই নড়েচড়ে বসতেন দালাল থেকে শুরু করে একশ্রেণীর জনপ্রতিনিধি ও তদবিরবাজরা।

চার থেকে ছয় লাখ টাকা খরচ করলেই মিলতো পুলিশে চাকরি। ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা না হলেও সমস্যা নেই।

কাগজে কলমে প্রমাণের জন্য চুক্তিমাফিক দুই থেকে তিন শতাংশ জমি বা জায়গা কেনা হতো পুলিশে নিয়োগ পেতে ইচ্ছুক ব্যক্তি বা তার পরিবারের সদস্যদের নামে। সেখানে ছাপড়া ঘর তুলে প্রমাণ করা হতো স্থায়ী বাসিন্দা। আবার চাকরি পেলে পুলিশ ভেরিভিকেশনের পর যথারীতি প্রকৃত মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হতো সেই জমি। এ নিয়মেই বছরের পর বছর চলে আসছিলো নিয়োগ বাণিজ্য।

বাদ যাননি খোদ পুলিশ সদস্যরাও। কে নিয়োগ পেতে পারেন। কার শিক্ষাগত যোগ্যতা, শারীরিক গড়ন পুলিশে চাকরির জন্য কতটা উপযুক্ত, তা দেখে আগেভাগেই অর্থ হাতিয়ে নিতেন কতিপয় পুলিশ সদস্য। আবার চাকরি না হলে টাকাও ফিরিয়ে দিয়ে এক ধরনের আস্থা আর নির্ভরতার জমজমাট বাণিজ্যও খুলে বসেছিলেন তারা। এসব অপকর্ম করে এখন এলাকা ছাড়া ধামরাই উপজেলার সানোড়া গ্রামের রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে পুলিশ কনস্টেবল সুমন আহম্মেদ, সূতিপাড়া ইউনিয়নের বেলীশ্বর গ্রামের পুলিশের সুবেদার নেছার উদ্দিন ও রাজবাড়ী জেলার সদর থানার আতর আলী মণ্ডলের ছেলে ও ধামরাই উপজেলার গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের আবদুর রশিদের জামাতা পুলিশ কনস্টেবল ইমদাদুল হক ওরফে এনায়েত। বর্তমানে কর্মস্থল ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছেন তারা।

বার বার নোটিশ করার পরও কর্মস্থলে যোগদান করেননি এসব পুলিশ সদস্য। এখন তাদের বিরুদ্ধে চলছে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া।

গত ২০ জুলাই ঢাকার এসপি হিসেবে যোগ দেন ২০তম ব্যাচের কর্মকর্তা শাহ মিজান শাফিউর রহমান।

২০০১ সালে পুলিশে যোগদান করে দিনাজপুর জেলা, সিএমপি, র‌্যাব, এসবি ও যশোর জেলায় দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা এই কর্মকর্তার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে রয়েছে দু'বার জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে ‘জাতিসংঘ শান্তি পদক’ প্রাপ্তি।

পুলিশ সুপার হিসেবে লক্ষ্মীপুর জেলায় সন্ত্রাস ও গডফাদার দমনে অত্যন্ত দক্ষতা ও সফলতার স্বাক্ষর রাখা শাহ মিজান শাফিউর রহমান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগে উপপুলিশ কমিশনারের দায়িত্ব পালন করে এখন দেশের এক নম্বর জেলা ঢাকার এসপি।

যোগদানের পরপরই পুলিশের নিয়োগ বাণিজ্য চক্রের বিরুদ্ধে নানা হুঁশিয়ারি ও পদক্ষেপের বার্তা পৌঁছে দেন থানা থেকে গ্রামে গ্রামে। চলে মাইকিং। বলা হয়, আর যেন কেউ কোনো অসাধু চক্রের হাতে না পড়েন। কোনো তদবিরে নয়। পুলিশে চাকরি যোগ্যতাই হবে মেধা। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় একমাত্র যোগ্যদেরই নেওয়া হবে পুলিশে।

শাহ মিজান শাফিউর রহমান যোগদানের পরপরই মুখোমুখি হন বাংলানিউজের।

বাকি অংশ পড়তে ক্লিক করুন...

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।