ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

এটি সোনাগাজীর মতিগঞ্জ উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৬
এটি সোনাগাজীর মতিগঞ্জ উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ফেনী: ভবনটি পরিত্যক্ত। চারপাশের দেওয়াল বিবর্ণ হয়েছে শ্যাওলায়।

ইট-সিমেন্টের ফাঁক গলে জন্মেছে পরগাছা। বিভিন্ন রকমের ছোট ছোট গাছে বাগানে রুপ নিয়েছে ভবনটির গোড়ার দিকটাও। ভেতরে পানি নেই, নেই দরজা-জানালার হদিস। পলেস্তারা খসে পড়ে হরহামেশা। আছে পোকা-মাকড় ও চামচিকার দৌরাত্ম্য। বৃষ্টির পানি ছাদ চুইয়ে ঢোকে ভেতরে। রাতে মাদকসেবীদের নিরাপদ আশ্রয়ও এটি। বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। নেই টয়লেটও।

যেখানে প্রবেশ করলে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়ার উপক্রম। অথচ দীর্ঘদিন ধরে এই ভবনটিতেই চলছে চিকিৎসাসেবা।

এটি ফেনীর উপকূলীয় সোনাগাজীর মতিগঞ্জের প্রান্তিক জনপদের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র। এ উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি নিজেই ‘স্বাস্থ্যহীনতায়’ ভুগে মৃতপ্রায়।

উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে গিয়ে দেখা যায়, উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিত্যক্ত ভবনের নিচতলার একটি কক্ষে বসে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার। এ প্রতিষ্ঠানে ৪টি পদের মধ্যে বর্তমানে একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সেকমো) কর্মরত। ফলে, রোগী দেখাসহ সব কাজ একা করতে তাকে হিমশিম খেতে হয়।

স্থানীয়রা জানান, এটি একটি ‘ভ্রাম্যমাণ’ উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র। গত ৮৬ বছরেও এটি তার আপন ঠিকানা খুঁজে পায়নি। কয়েক বছর একটি ভবনে অবস্থানের পর আবার স্থানান্তর হতে হয়। এভাবেই চলছে। তবে, যতবারই স্থান পরিবর্তন হয়েছে। প্রতিবারই পরিত্যক্ত ভবনেই ঠাঁই হয়েছে। এ উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি কখনো নতুন ভবন বা স্থায়ী ঠিকানা পাবে কিনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ কেউ বলতে পারে না।

স্থানীয় যুবক কবির আহম্মদ জানান, এ স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র আশ্রয়স্থল।

উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মো. আবুল হাসান বাংলানিউজকে জানান, মতিগঞ্জ উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজন চিকিৎসা কর্মকর্তা (এমও), একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সেকমো), একজন ফার্মাসিস্ট ও একজন এমএলএসএস’সহ ৪টি পদ রয়েছে। পাঁচ মাস আগে একমাত্র চিকিৎসা কর্মকর্তা অন্যত্র বদলি হয়ে গেছেন। ফার্মাসিস্ট এবং এমএলএসএস পদ দুটি দীর্ঘদিন শূন্য। ফলে কেন্দ্রের ভেতরটার পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা রক্ষাসহ সব কাজ একাই করতে হয় তাকে। তিনি জানান, মতিগঞ্জ উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নিজস্ব কোনো ভূমি নেই। কখনো কোনো ভূমি ছিল কিনা তিনি জানেন না। কোনো দলিলপত্রও পাওয়া যায়নি।

বর্তমানে যে ভবনের নিচতলায় বসে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র হিসেবে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে- সেটি সোনাগাজী উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তাদের বাসভবন ছিল। প্রায় ২০ বছর আগে এ ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। সম্পূর্ণ ব্যবহার অনুপযোগী হওয়া সত্ত্বেও অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে সেখানে স্বাস্থ্যসেবার কাজ চলছে।

তিনি জানান, পুরনো কাগজপত্র থেকে জানা যায়- সোনাগাজীর মতিগঞ্জ উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি ১৯৩১ সালে স্থাপিত হয়।

তখন মতিগঞ্জ বাজারের দক্ষিণ পাশে ইউনিয়ন কাউন্সিলের প্রেসিডেন্টের দেওয়া একটি বেসরকারি ঘরে বসে এলাকাবাসীর স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া শুরু হয়। পরবর্তীতে সেটি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ভবনের একটি কক্ষে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে কয়েক বছর থাকার পর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি মতিগঞ্জ আর এম কে উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের একটি কক্ষে স্থানান্তর করা হয়।

আশ্রয়কেন্দ্রটি এক পর্যায়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। তারপর ১৯৯৫ সাল থেকে বর্তমান পরিত্যক্ত ভবনে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার কাজ চলছে। প্রতিদিন শতাধিক রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে কেন্দ্রে যান।

সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. নুরুল আলম বাংলানিউজকে জানান, বর্তমান এ ভবনটি এতই জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। যেকোনা সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সমস্যার বিষয়টি সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বহুবার জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে সিভিল সার্জন হাসান ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হয়েছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ারও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৬
পিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।