ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

গরিবের ফাইভ স্টার হোটেল!

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৬
গরিবের ফাইভ স্টার হোটেল! ছবি: সুমন শেখ, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: কবি রফিক আজাদের বিখ্যাত কবিতা ‘ভাত দে হারামজাদা’। কবি হয়তো খেঁটে খাওয়া মানুষের কথা ভেবেই লিখেছিলেন তার এই কবিতাটি।

নয়তো কেন ভাতের জন্য খেঁটে খাওয়া অসহায় মানুষের এত হাহাকার।

একমুঠো ভাত চাই তাদের, নয়তো সামনে যা পাবে কেঁড়েকুঁড়ে তা সবই করবে সাবাড়। আর এই সব ক্ষুধার্ত মানুষের পেটপুরে খাওয়ার জন্য রয়েছে গরিবের ফাইভ স্টার হোটেল।

শনিবার (২৯ অক্টোবর) দিবাগত রাত পৌনে ১টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ মোড় এবং পাবলিক লাইব্রেরির সামনে দেখা মিলল গরীবের এই ফাইভস্টার হোটেলের। আর সেই হোটেলে দলবেঁধে পেট পুরে খেতে আসা মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়।

অন্যদিকে রাজধানীতে যেকোনো হোটেলে পেট পুরে খেতে হলে সর্বনিম্ন না হলেও প্রয়োজন একশত থেকে দুইশত টাকা। কিন্তু গরিবের এই ফাইভস্টার হোটেলে মাত্র ১০ টাকা থেকে ৩০ টাকায় পেট পুরে খাওয়া যায়। তবে খাবারের মান নিয়ে নেই কারো কোনো মাথা ব্যথা। কেননা গরিবের কাছে এটা যে মানসম্মত খাবার।

শাহবাগের পাবলিক লাইব্রেরির সামনের ফুটপাতে হাড়ি নিয়ে উন্মুক্ত খাবারের পসরা বসিয়েছেন পিয়ারা বেগম (৪৬)। আর তাকে ঘিরে চারপাশে বসে খাবার খেয়ে চলেছেন কয়েকজন রিকশাচালক। বলা যায়, যারা পেট পুরে খাবার খেতে আসছেন তাদের মধ্যমনি তিনি। কেননা সবার হাতে তিনিই যে খাবার তুলে দিচ্ছেন।

কি কি বিক্রি করছেন জানতে চাইলে পিয়ারা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, হবদিন (প্রতিদিন) এক ধরনের খাবার বিক্রি করি না। একেক দিন এক এক ধরনের খাবার বিক্রি করি। তবে আজ (শনিবার রাতে) কচুর লতি, ডিম, ডাল ও মুরগির মাংস আছে। আর দাম ১০ টাকা থেকে ৩০ টাকা। সঙ্গে পেট পুরে খাওয়ার শতভাগ নিশ্চয়তা।

তিনি আরো বলেন, এখানকার মূল কাস্টমার তারা যারা রাতে রিকশা ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালায় । এরাই মূলত রাতে খাবার খেয়ে থাকে। তবে রাত যত গভীর হয় খাবারের চাহিদা ততই বাড়তে থাকে। দীর্ঘ দুই বছর ধরে তিনি রাতে এই খাবার বিক্রি করেন যোগ করেন তিনি।

এই খাবার কি আপনি রান্না করেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, না বাবাজি। এই খাবার আমরা রান্না করি না। এটা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের খাবার। যা অনুষ্ঠান শেষে থেকে যায় তাই আমরা নিয়ে আসি। আর প্রতিদিন রাত ১১টার পর আমরা এখানে গরীবের জন্য কম ট্যাকায় (টাকায়) বিক্রি করি।

তিনি আরো বলেন, দামেও যেমন হস্তা (সস্তা) তেমনি আবার খেয়েও সবাই মজা পায়।

পাশে পরম আনন্দে খাচ্ছেন রিকশাচালক মো.ছাদেকুল ইসলাম (৩২)। দুই বছর ধরে তিনি ঢাকায় রিকশা চালান। মাঝে মধ্যে তিনি এখানে খান। খাবার কেমন প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, ‘ ভাই এইহানে খাইয়া মজা আছে। আপনি খাবেন? ভাতের কোনো ঠিক নাই। যা পারেন তাই পেট পুইরা খাইতে পারেন। আর খাওয়নও মজা অয়। আমাগোর মত গরিবের লাইগা এইডাই যে ভাই ‘ফাইভ স্টার হোটেল’।

ছাদেকুল ইসলামের পাশে বসেই খাচ্ছেন নূর ইসলাম (৩৯)। তিনিও পেশায় রিকশা চালক। দীর্ঘ ছয় বছর ধরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় রিকশা চালান। আর এজন্য প্রায়ই রাতে তিনি পিয়ারা খালার খাবার খান। শুধু তাই নয়, এই খাবার মানসম্মত দাবি করে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা যারা রিকশা বা সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালাই তারা এইহ্যানে (এখানে) খাই। কারণ এইহানে খাইলে রিকশা হারানোরও ভয় থাকে না।

শুধু ছাদেকুল কিংবা নূর ইসলাম নয়। তাদের মত হাজারো নিম্নবিত্তরা পিয়ারা বেগমের খাবার খেয়ে প্রশান্তির ঢেকুর তোলেন। আর তাদের চোখে মুখে ফুটে উঠে তৃপ্তির ছোয়া।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৬
এসজে/বিএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।