ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

অনিয়ম, অসতর্কতা, অসচেতনতায় বাংলামোটরে যানজট

জান্নাতুল ফেরদৌসী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৬
অনিয়ম, অসতর্কতা, অসচেতনতায় বাংলামোটরে যানজট ছবি:শাকিল- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রাজধানীর বাংলামোটর মোড়। বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে হাতের লাঠিটা উঁচু করলেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্য উত্তম। কারওয়ানবাজার থেকে শাহবাগমুখী যানবাহনগুলোকে থামানোর সিগন্যাল দেওয়া।

ঢাকা: রাজধানীর বাংলামোটর মোড়। বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে হাতের লাঠিটা উঁচু করলেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্য উত্তম।

কারওয়ানবাজার থেকে শাহবাগমুখী যানবাহনগুলোকে থামানোর সিগন্যাল দেওয়া। কিন্তু তার আদেশ মানলো সামনের সারির মাত্র দু’টি বাস। বাকিরা রীতিমতো জোরপুর্বক অনিয়মে ব্যস্ত। একবার সিগন্যাল পার হলেই তো ধরার উপায় নেই!

এমন অনিয়ম ঘটতে ঘটতে হঠাৎ ঘটলো বিপত্তি। ইস্কাটন থেকে কারওয়ানবাজারমুখী সড়ক থেকে আসা রিকশা পড়লো বিহঙ্গ পরিবহনের সামনে। এ জট ঠিক হতে সময় লাগলো ২/৩ মিনিট।

ফলে বাংলামোটরের যানজট দীর্ঘ হয়ে চলে গেলো কারওয়ানবাজার পর্যন্ত।
 
এদিকে শাহবাগ থেকে কারওয়ানবাজারমুখী সড়কে চলছিল বিচিত্র সব অনিয়ম। ট্রাফিক সদস্য সোহেল হাত উঁচু করে রাখলেও এক লাইনে ৮-১০টি মোটরসাইকেল চালক অনায়াসে সিগন্যাল পার হচ্ছিলেন। দু’জন চালককে লাঠি দিয়ে বাড়িও দিলেন ট্রাফিক। কিন্তু তাতেও কাজ হলো না।
 
চিত্রগুলো বাংলামোট মোড়ের। সোমবার (২৮ নভেম্বর) কয়েক ঘণ্টার সরেজমিন পর্যবেক্ষণে জানা গেলো, এ দৃশ্য প্রতিদিনকার। বাংলামোটর মোড়ে দিনের বেশিরভাগ সময়ই লেগে থাকে যানজট।
 
চাকরিজীবী আনন্দ মণ্ডল দাঁড়িয়েছিলেন সিগন্যালের মুখেই। ‘এখানে দাঁড়ানো নিষেধ, তারপরেও কেন দাঁড়িয়েছেন’- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাজের তাড়া আছে। তাই আপাতত দাঁড়িয়েছি।
 
ইস্কাটন থেকে বেশ ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন  সৈকত। তিনি বললেন, ‘ফুট ওভারব্রিজে উঠতে সময় লাগে বেশ। একটু সময় কম লাগানোর জন্যই এভাবে পার হলাম’।
 
মুল সড়কের পুর্ব দিকে ‌ইস্কাটন রোড। সেখানেও মোড়ের শুরুতেই দাঁড়িয়ে আছে ১৫-১৬টি রিকশা। ফলে মগবাজার মোড়গামী বাসগুলোকে সেখানে জটে পড়তে হচ্ছে। উল্টো পাশের মাইটিভি মোড় সংলগ্ন সড়কের চিত্রও একই রকম। মোড়ের চারদিক থেকে সাধারণ মানুষের রাস্তা পারাপারের বিড়ম্বনা তো আছেই।
 
৮নং বাসের ড্রাইভার রুবেল বলেন, ‘সামনে মানুষ আইয়া পড়লে গাড়ি হঠাৎ কইরা বেরেক (ব্রেক) মারতে হয়। তহন পেছনের গাড়িগুলানও ঝামেলায় পইড়া যায়। এসকিডেন (এক্সিডেন্ট) হইলেও আমগো দোষ হয়’।
 
সতর্কতার পরও বাংলামোটরে যানজট। ট্রাফিক সদস্য সোহেলের মতে, ‘এর মূল কারণ, মানুষের মধ্যে ট্রাফিক আইন না মানার বদঅভ্যাস’।
 
তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন কম করে হলেও ৮ থেকে ১০টি মামলা করতে হয়। ক’জনকে আটকানো সম্ভব? না শোনেন বাস ড্রাইভাররা, না শোনেন সাধারণ মানুষ। সবাই আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত’।
 
কর্তব্যরত রমনার ট্রাফিক ইন্সপেক্টর রফিক বলেন, ‘ঢাকার যানজটের মূল কারণ, সব সড়কে বেশি যানবাহন চলাচল করা। বিশেষ করে প্রাইভেট কারের আধিক্য। ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করা, সময়ের আগে সিগন্যাল পার হওয়ার চর্চা, যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানো তো আছেই’।
 
ট্রাফিক রমনা জোনের সহকারী কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলামোটরের জন্য ট্রাফিক পুলিশ যথেষ্টই রয়েছে। কিন্তু যানজটের প্রধান কারণ, নিয়ম না মানা। বহুবার এখানে মোবাইল কোর্ট করেও ফুটওভার ব্রিজে রাস্তা পারাপার নিশ্চিত করা যায়নি। মূল সড়কে রিকশা না থাকলেও উল্টো পাশের দু’টি সড়কে রিকশা চলাচল করে। এসব রিকশা চালকরা নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করেন না। যত্রতত্র যাত্রী ওঠা-নামার বিষয়টিও অনেক সময় নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না’।
 
তারপরও যানজট শিথিলে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান ট্রাফিক পুলিশের এ কর্মকর্তা।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৬
জেডএফ/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।