ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বাল্যবিয়ের খবর পেলেই ইউএনও’র হানা

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৬
বাল্যবিয়ের খবর পেলেই ইউএনও’র হানা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

অভাব যেন নিত্যদিনের সঙ্গী। যার ফলে পড়াশোনাও করতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে অল্প বয়সেই যেতে হচ্ছে শ্বশুর বাড়ি। আর মেয়ের সুখের জন্য অভাবী বাবা সংসারের শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে যৌতুকের টাকা যোগাড় করেন।

বগুড়া: অভাব যেন নিত্যদিনের সঙ্গী। যার ফলে পড়াশোনাও করতে পারছেন না।

বাধ্য হয়ে অল্প বয়সেই যেতে হচ্ছে শ্বশুর বাড়ি। আর মেয়ের সুখের জন্য অভাবী বাবা সংসারের শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে যৌতুকের টাকা যোগাড় করেন। তুলে দেন জামাইয়ের হাতে।
 
তাতেও শান্তি নেই। যৌতুকের লোভে জামাই হয়ে ওঠে বেপরোয়া। বেরিয়ে আসতে থাকে ভদ্রবেশী জামাইয়ের আসল রূপ। হাতের মেহেদীর রং মুছতে না মুছতেই গ্রাম্য সহজ সরল মেয়েটির ওপর নেমে আসে নানামুখী নির্যাতন। কখনো গরম লোহার ছ্যাকা কখনো বা বেধড়ক পিটুনি -চলতে থাকে দিনের পর দিন।
 
তবুও যৌতুক লোভী স্বামীর আরো টাকা চাই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এমন ঘটনার শিকার হচ্ছে কোমলমতি শিশু কিশোরীরা। অশিক্ষিত ও দরিদ্র অভিভাবকরা মেয়েকে বাল্যবিয়ে দিয়ে দায়মুক্ত হন। পরবর্তীতে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। অনেক শিক্ষিত ধনী পরিবারেও এমন ঘটনা ঘটছে অহরহ।
 
একশ্রেণ‍ীর বিবাহ রেজিস্টার, মৌলভী, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, গ্রাম্য মাতবর ও ঘটকরা এ কাজে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।
 
এদের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাফিউল ইসলাম। বাল্যবিয়ে ঠেকাতে পুরো উপজেলা চষে বেড়াচ্ছেন তিনি। খবর পেলেই বিয়ের আসরে ছুটে যাচ্ছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন। জেল-জরিমান‍া করছেন। রাতদিন এক করে বাল্যবিয়ে রোধে প্রশাসনের এই কর্মকর্তা সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
 
বাল্যবিয়ে ঠেকাতে গত পাঁচ মাসে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৪৭ জনকে জেল-জরিমান‍া করেছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাফিউল ইসলাম।
 
এ বিষয়ে রোববার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাফিউল ইসলামের। তিনি বলেন, বাল্যবিয়ে সামাজিক ব্যধিতে পরিণত হয়েছে। এতে অনেক শিশু কিশোরী অকালে ঝরে পড়ছে।
 
অসময়ে তাদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে হওয়ায় সন্তান জন্মের সময় অনেকের মৃত্যু হচ্ছে।
 
তিনি আরো বলেন, অশিক্ষিত ও দরিদ্র পরিবারে বাল্যবিয়ের ঘটনা বেশি ঘটছে। যৌতুকের টাকা দিতে গিয়ে পরিবারগুলো সর্বশান্ত হয়ে পড়ছে। যৌতুক পেতে মেয়েদের ‍ওপর বিভিন্নভাবে নির্যাতন করছে স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা।
 
এ কারণে নারী নির্যাতনের সংখ্যাও বাড়ছে। রাষ্ট্রীয় আইনেও বাল্যবিয়ে দেওয়া ও করা সমান অপরাধ। এ অপরাধ রোধে কোনো ছাড়া দেওয়া হবে না।
 
ইউএনও বলেন, এ উপজেলায় বাল্যবিয়ে ঠেকাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। খবর পেলেই বিয়ে বাড়িতে ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে অভিযান চালানো হচ্ছে। জেল-জরিমানা করা হচ্ছে। সর্বোপরি বাল্য বিয়ে নামক সামাজিক ব্যধি থেকে রক্ষা পেতে সমাজের সব শ্রেণির পেশার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে বলেও যোগ করেন।  
 
গত জুলাই মাসের শুরু থেকে চলতি মাসের শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) পর্যন্ত প্রায় পাঁচ মাসের ব্যবধানে ৩১টি বিয়ের আসরে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বাধীন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

অভিযানে বিবাহ রেজিস্টার, মৌলভী, বর, বর-কনের বাব-মা, স্বজন ও তাদের সহযোগীসহ মোট ৪৭জনের জেল-জরিমানা।   এছাড়া ২জন বিবাহ রেজিস্টারসহ ২৮ জনের ২০ দিন থেকে ৭ দিন মেয়াদে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। এছাড়া ১৯ জনের কাছ থেকে ২১ হাজার ৫শ’ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৬
এমবিএইচ/বিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।