ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

চকলেট, চিপস, দুধের প্যাকেট ও ল্যাপটপ ব্যাগে স্বর্ণ!

রহমত উল্যাহ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৬
চকলেট, চিপস, দুধের প্যাকেট ও ল্যাপটপ ব্যাগে স্বর্ণ!

বিমানবন্দর গ্রিন চ্যানেলে মালয়েশিয়া ফেরত চতুর দুই বন্ধু। সঙ্গে তাদের ৮টি ব্যাগ। স্বর্ণ আছে জিজ্ঞাসা করায় কর্মকর্তাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা। ব্যাগ খুলে হতবাক কাস্টমস কর্মকর্তারা!

ঢাকা: বিমানবন্দর গ্রিন চ্যানেলে মালয়েশিয়া ফেরত চতুর দুই বন্ধু। সঙ্গে তাদের ৮টি ব্যাগ।

স্বর্ণ আছে জিজ্ঞাসা করায় কর্মকর্তাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা। ব্যাগ খুলে হতবাক কাস্টমস কর্মকর্তারা!

পাওয়া গেল চকলেট, চিপস, দুধের গুঁড়া, বাচ্চাদের ডায়াপার আর ল্যাপটপ। সূত্র বলছে স্বর্ণ আছে, আপনারা বলছেন নেই? এমন প্রশ্নে কর্মকর্তাদের ওপর ক্ষুব্ধ ওই দুই প্রবাসী।

ব্যাগে প্রায় ৪ কেজি ওজনের চকলেটের প্যাকেট। সন্দেহ হওয়ায় দেওয়া হলো স্ক্যানিংয়ে। পাওয়া গেল স্বর্ণের অস্তিত্ব। চকলেট তো হালকা হবে, ওজন কেন প্রশ্ন জাগতেই একটি প্যাকেট খোলা হলো।

চকলেটের প্যাকেটের ভেতর স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় পাওয়া গেল ৪টি স্বর্ণের চেইন! প্রত্যেকটি প্যাকেটে এভাবে ৩ থেকে ৪টি চেইন পাওয়া গেল।

চকলেটের প্যাকেটে থাকলে দুধের প্যাকেটেও থাকবে না তা কী করে হয়! দুধের প্যাকেটে কিছুই নেই, বাচ্চাদের জন্য এনেছি- এসব বলে কাস্টমস কর্মকর্তাদের ফাঁকি দিতে চান দুই বন্ধু।

সন্দেহ হওয়ায় খোলা হল গুঁড়ো দুধের প্যাকেটও। এখানেও পাওয়া গেল স্বর্ণের বেশ কিছু চেইন। এবার চিপসের দিকে নজর দিতেই আবারও ধরিবাজি করেন দুই প্রবাসী। চিপস তো হালকা, প্যাকেট ভারী কেন?

স্ক্যান করার পর সেখানেও স্বর্ণের অস্তিত্ব পাওয়া গেল। টিউব আকৃতির দামি চিপসের প্যাকেটের ভেতর সাদা কাগজ আর স্কচটেপ মোড়ানো অবস্থায় পাওয়া গেল বেশ কয়েকটি স্বর্ণের চেইন, নুপূর আর রিং।

দুই বন্ধুর ব্যাগেই ছিল দুটি ল্যাপটপ। চকলেট, দুধ আর চিপসের প্যাকেটে স্বর্ণ থাকলে ল্যাপটপে কেন নয়? ল্যাপটপ স্ক্যানিং করে কিছুই পাওয়া গেল না। এবার ল্যাপটপের ব্যাগ স্ক্যান করা হলো।
মেশিন বলছে স্বর্ণ আছে, আবারও দুই বন্ধুর কর্মকর্তাদের সাথে বাকযুদ্ধ। সহজে স্বর্ণের দেখা পাওয়া গেল না। শেষে ব্যাগের ভেতর বিশেষভাবে সেলাই অবস্থায় পাওয়া গেল বেশ কিছু স্বর্ণের চেইন।

এভাবে মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) সকালে কুয়ালালামপুর ফেরত দুই যাত্রীর ব্যাগ থেকে ১৮৭টি স্বর্ণের চেইন, ৩টি রিং, ১টি নুপূরসহ মোট ৫৯৬ গ্রাম স্বর্ণালঙ্কার জব্দ করেছে ঢাকা কাস্টমস হাউজ।

ঢাকা কাস্টমস হাউজের যুগ্ম কমিশনার সোহেল রহমান অভিনব কৌশলে আনা স্বর্ণ জব্দের কাহিনী বাংলানিউজকে জানিয়েছেন।

তিনি জানান, সকাল ৭টা ১০ মিনিটে কুয়ালালামপুর থেকে বিজি৮৭ ফ্লাইট শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। ফ্লাইটটিতে রাজধানীর শ্যামপুর এলাকার মো. মজিবুর রহমান মোল্লা ও মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের মো. নুর আলম নামে দুই বন্ধু আসেনে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গ্রিন চ্যানেল পার হওয়ার সময় তাদের চালেঞ্জ করেন কাস্টমস কর্মকর্তারা। পরে তাদের সাথে থাকা ৮টি ব্যাগেজ কাউন্টারে এনে স্ক্যানিং করে এসব স্বর্ণ জব্দ করা হয়।

যুগ্ম কমিশনার সোহেল রহমান আরও জানান, দুই বন্ধু গত ছয় মাস আগে দেশে এসেছেন। তারা দু’জনই মালয়েশিয়ায় চাকরি করেন বলে জানিয়েছেন।

দুই প্রবাসীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। স্বর্ণ ছাড়াও তাদের কাছ থেকে ৭টি মোবাইল, ৭ কেজি ডায়াপার, ৪ কেজি চকলেট, ২৪ কেজি গুঁড়ো দুধ জব্দ করা হয়। স্বর্ণসহ জব্দকৃত পণ্যের মূল্য প্রায় ২৫ লাখ টাকা বলেও জানান কাস্টমসের ওই যুগ্ম কমিশনার।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৬
আরইউ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।