ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বক্তাবলী দিবস মঙ্গলবার

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৬
বক্তাবলী দিবস মঙ্গলবার

 মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাসে একাত্তরের ২৯ নভেম্বর দিনটি নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্যে বেদনাবিধুর একটি দিন। ওইদিন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার দুর্গম চরাঞ্চল বুড়িগঙ্গা নদীর বক্তাবলীতে হত্যাযজ্ঞ চালায় পাক হানাদার বাহিনী। 

নারায়ণগঞ্জ:  মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাসে একাত্তরের ২৯ নভেম্বর দিনটি নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্যে বেদনাবিধুর একটি দিন। ওইদিন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার দুর্গম চরাঞ্চল বুড়িগঙ্গা নদীর বক্তাবলীতে হত্যাযজ্ঞ চালায় পাক হানাদার বাহিনী।

 

স্বাধীনতা যুদ্ধে নারায়ণগঞ্জে একসঙ্গে এত প্রাণের বিয়োগের ঘটনা দ্বিতীয়টি আর নেই। স্বজন হারানোর ব্যাথা ও কষ্ট নিয়ে শ্রদ্ধার সঙ্গে প্রতিবছরই পালিত হয় এই দিবসটি।  

স্থানীয়রা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। কিন্তু স্বাধীনতার এতবছর পরও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।  

জানা গেছে, একাত্তরের ২৯ নভেম্বর সকালে মুক্তিযোদ্ধাদের উপুর্যপরি আক্রমনের মুখে পাক হানাদাররা পিছু হঠতে শুরু করে। এ সময় রাজাকার, আল বদর, শামস বাহিনীর পরামর্শে ১৩৯ জন নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে ধরে এনে লাইন ধরিয়ে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে তারা।  
এতে নিহত হন শাহিদ, ফারুক, অহিদ, মনির, শাহ আলম, রহমতউল্ল্যাহ, শামসুল, আলম, সালামত, খন্দকার, সুফিয়া, আম্বিয়া, খোদেজা সহ ১৩৯ জন।  

পিছু হটার সময় হানাদার বাহিনী পেট্রোল ও গান পাউডার দিয়ে পুড়িয়ে দেয় বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী পাড় সংলগ্ন বক্তাবলী, রাজাপুর ডিগ্রির চর, মুক্তাকান্দি, গঙ্গানগর, রাম নগর, গোপাল নগর, রাধানগর সহ ২২ টি গ্রাম।  

স্বাধীনতার পরবর্তী ৪৪ বছর ধরে এখন পর্যন্ত বক্তাবলী দিবস পালন করে আসছেন নারায়ণগঞ্জবাসী। এদিন জেলার সব স্তরের মুক্তিযোদ্ধারাও বিভিন্ন সময়ে বক্তব্য আর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বর্ণনা করেছেন সেই নির্মম ঘটনা।

২৯ নভেম্বরের ঘটনার দিন প্রসঙ্গে তৎকালীন ডেপুটি কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা তমিজউদ্দিন রিজভী বাংলানিউজকে জানান, প্রশিক্ষণ শেষ করে বক্তাবলী ও এর আশপাশ গ্রামে অবস্থান নিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। ওই সময় বক্তাবলী গ্রামে এক থেকে দেড়শ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।  

‘নদী বেষ্টিত দুর্গম চরাঞ্চল হওয়ায় এলাকাটিকে নিরাপদ মনে করতেন মুক্তিযোদ্ধারা। সেখানে অবস্থান করেই মূলত বিভিন্ন স্থানে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অপারেশন করার পরিকল্পনা করতেন তারা। ওই এলাকাতে তখন কমান্ডার ছিলেন সিরাজুল ইসলাম। ’

তিনি বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত যুগ্ম আহ্বায়ক মফিজুল ইসলাম, বিলুপ্ত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর আজহার হোসেন, আবদুর রব, মাহফুজুর রহমান, স ম নুরুল ইসলামসহ আরও অনেকে তখন বক্তাবলীতে ছিলেন। ঘটনার দিন ছিল প্রচণ্ড শীত। সকাল থেকেই ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন ছিলো পুরো এলাকা।  

‘ভোরের দিকে হঠাৎ করেই পাক বাহিনী গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। অপ্রস্তুত মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা জবাব দেন। সম্মুখ যুদ্ধে মুন্সীগঞ্জ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ব্যাটালিয়ন বক্তাবলীতে এসে এখানকার মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দিলে তাদের শক্তি বৃদ্ধি পায়। ’

তমিজউদ্দিন রিজভী বলেন, এভাবে পাক বাহিনীর সঙ্গে প্রায় চার ঘণ্টা একটানা যুদ্ধ চলে। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা মোক্তারকান্দি কবরস্থানের সামনে কয়েকজন রাজাকারকে ধরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেন। মুক্তিযোদ্ধাদের উপুর্যপরি আক্রমনের মুখে পাক হানাদাররা পিছু হঠতে শুরু করে।  

‘এরপরও পিছু হটার সময় রাজাকার, আল বদর, শামস বাহিনীর পরামর্শে ১৩৯ জন নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে ধরে এনে লাইন ধরিয়ে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে হানাদাররা,’ বলেন তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৬ 
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।