ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘মা, বইনেরা কী বাঁচব না?’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০১৬
‘মা, বইনেরা কী বাঁচব না?’ ছবি- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর

আগুনে দগ্ধ শরীর নিয়ে হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন বড়বোন ফতেমা। শ্বাসনালী পুড়ে যাওয়ায় মুখে সার্বক্ষণিক লাগানো অক্সিজেন মাস্ক। বেডের পাশেই নির্বাক দাঁড়িয়ে ছোটবোন বাহাতুন।

ঢাকা: আগুনে দগ্ধ শরীর নিয়ে হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন বড়বোন ফতেমা। শ্বাসনালী পুড়ে যাওয়ায় মুখে সার্বক্ষণিক লাগানো অক্সিজেন মাস্ক।

বেডের পাশেই নির্বাক দাঁড়িয়ে ছোটবোন বাহাতুন। পাশের রুমেই মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে যাচ্ছেন আরেক বড়বোন লাভলি।

১০ বছর বয়সী বাহাতুন হয়তো বুঝতে পারছে বড়বোনের গায়ে আগুন লেগেছিল। দুর্ঘটনার এতোদিন পরেও বোনদের নির্বাক থাকার হিসেব কিছুতেই মেলাতে পারছে না শিশু বাহাতুন। কিছুক্ষণ পরপর এক বোনের কাছ থেকে আরেক বোনের কাছে ছুটে যাচ্ছে সে।  

আর শিশু বাহাতুন মাকে বার বার জিজ্ঞাসা করছে,  ‘মা, বইনেরা কী বাঁচব না?’

গত মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সাভারের আশুলিয়ার জিরাবো এলাকায় গ্যাস লাইটার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ৩৯ জন দগ্ধ হন। দগ্ধদের অনেকে মার গেছেন। এখনও ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) বার্ন ইউনিটে ১৬ জন চিকিৎসাধীন।

এদের মধ্যে কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা ফাতেমা আইসিইউতে ও তার বোন লাভলি এইচডিওতে চিকিৎসাধীন।

বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে গিয়ে দেখা যায়, ১০ নং বেডে চিকিৎসাধীন আছেন ফাতেমা। বেডের পাশেই দাঁড়িয়ে বড়বোনের অক্সিজেন মাস্কটি ধরে আছে বাহাতুন। চোখে-মুখে কিসের যেন আশঙ্কা।

ফাতেমার মা ফজিলা বেগম বাংলানিউজকে জানান, গত ৫ দিন ধরে লাভলি শুধু বলছে, ‘জ্বইলা যায়, পুইড়া যায়। ’

লাভলির তুলনায় ফাতেমার অবস্থা একটু ভালো জানিয়ে তিনি বলেন, কি কপাল আমার। দুই রুমে দুই মাইয়াই পুইড়া হাসপাতালে ভর্তি। দুই মাইয়ার কাছেই দৌড়াইয়া যাই।

তিনি জানান, দুই মাইয়া বাড়ি যাওয়ার জন্য পাগল হইয়া গেছে। মেয়েরা বলে ‘মা লও বাড়ি যাইগা, বাড়ি গেলে ভালা হইয়া যামু। ’

গত ঈদে বাড়ি গেছিলো উল্লেখ করে তিনি বলেন, কামাই করার লাগি মাইয়া দুইডা কাম করতে গেলো। গিয়া পুইড়া গেলো। মাইয়া দুইডারে যদি ভালা কইরা বাড়িত নিয়া যাইতে পারি।

কাঁদতে কাঁদতে মা ফজিলা বেগম বলেন, আমি জন্মের কাঙ্গালি। দুনিয়াত আমার ভাই বইন কেউ নাই। দোয়া কইরেন দুইডা মাইয়া যেন সুস্থ হয়।

ফজিলা বেগমের চার মেয়ের মধ্যে তিন মেয়ে জিরাবোতে একসঙ্গে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতো। বড় মেয়ে সোয়েটার ফ্যাক্টরিতে কাজ করে, আর ফাতেমা ও লাভলি ওই গ্যাসলাইট কারখানায় কাজ করতো।

চিকিৎসকরা জানান, ফাতেমার শ্বাসনালীর ২০ শতাংশ ও লাভলির ৩০ শতাংশ পুড়ে গেছে।

আইসিইউর দায়িত্বে থাকা ডা. জাহাঙ্গির বাংলানিউজকে বলেন, আইসিইউতে তিনজন ভর্তি আছে। তাদের অবস্থা আনসার্টেন। ফুসফুস ও শ্বাসনালী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কখন কি হয় বলা যায়না। সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তাদের ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছুই বলা যাচ্ছে না। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৬
পিএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।