ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

মধ্যরাতে স্বামীর খোঁজে থানায় পারুল!

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০১৬
মধ্যরাতে স্বামীর খোঁজে থানায় পারুল! ছবি: জিএম মুজিবুর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টা। রাজধানীর রমনা থানায় ডিউটি অফিসারের সামনে সোফায় অসহায় ভঙ্গিতে বসে বোরখা পড়া অল্প বয়সী এক নারী। তার চোখে-মুখে স্পষ্ট উৎকণ্ঠা।

ঢাকা: বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টা। রাজধানীর রমনা থানায় ডিউটি অফিসারের সামনে সোফায় অসহায় ভঙ্গিতে বসে বোরখা পড়া অল্প বয়সী এক নারী।

তার চোখে-মুখে স্পষ্ট উৎকণ্ঠা।

এতো রাতে থানায় কি কাজে জানতে চাইলে, কারণটা বলবে কিনা, প্রথমে এক দ্বিধা-দ্বন্দে পড়ে। পরক্ষণে বলে উঠে,‘মাদারীপুর, শিবচর থাইক্যা স্বামীর খোঁজে আইছি ! স্বামী ভাসুরের কাছে আছে, কিন্তু ভাসুর কিছু কয় না। চোখের সামনে দরজা লাগায় দিছে। আপনেরা কিছু করতে পারবেন আমার স্বামীরে খুইজ্যা দিতে। ’

এতো রাতে স্বামীর খোঁজে অল্প বয়সী নারী মাদারীপুর থেকে একা থানায়, প্রথমে একটু খটকা লাগলেও পড়ে বিষয়টি পরিষ্কার হয় পারুল আক্তারের সঙ্গে কথা বলে।

প‍ারুল (২১ বছর)। দেড় বছর আগে ভালোবেসে বিয়ে করেন মনির হোসেনকে। শ্বশুর বাড়ির লোকজনের অমতে বিয়ের কারণে শুরু থেকেই তার সংসারে অশান্তি। অশান্তির মাঝেই কেটে যায় পারুলের দেড় বছর। এরেই মধ্যে অন্ত:সত্ত্বা হয়ে পড়েছে সে। কিন্তু অশান্তি আর থামে না। এখন স্বামীও তার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তাই তো রাত বিরাতে বেড়িয়েছেন স্বামী মনির হোসেনের খোঁজে। ’

 

পারুল বাংলানিউজে বলেন, ‘বিয়ের পর থাইক্যাই সংসারে ঝগড়া-ঝাটি। হেরা যৌতুক চায়। বাবার বাড়ি থেকে জমি বেঁইচ্যা ৪ ল‍াখ টাকা দিছি। কিন্তু এরপরও হয় না। কয়েকদিন আগে শ্বশুর বাড়িতে ঝগড়া হয়। উপজেলা চেয়ারম্যান মিট-মাট করি স্বামীর হাতে তুলে দেন। কিন্তু স্বামী তিন দিন আগে আমারে শ্বশুর বাড়িত থুইয়্যা পালায় আইছে, আর আমারে শাশুড়ি বের করে দিয়েছে’।

পারুলের ধারণা, মনির হোসেন চাচাতো ভাস‍ুর বজলুরের কাছে রয়েছে।

পারুলের ভাষ্যে, বজলু মনিরকে গাড়ির চালকের চাকরি দিয়েছে। এজন্য পারুল শিবচর থেকে রওনা হয়ে ঢাকায় এসে বজলুর বাসায় যায়। বজলু তাকে মনির নেই বলে চোখের সামনে দরজা লাগিয়ে দেয়। ফলে বাধ্য হয়ে স্বামীকে ফিরে পেতে পারুল রমনা থানায় এসেছে।

রমনা থানার ডিউটি অফিসার এসআই মাসুদ বাংলানিউজকে বলেন, ওনার (পারুল) কাহিনী শুনলাম। আমাদের পক্ষে থেকে যা করার সাধ্যমত করছি। বেশি রাতে আসায়, আমরা একজন মহিলা পুলিশ নিয়ে এসেছি। উনি বলছে, তার স্বামী নাকি ঢাকায় ভাসুরের কাছে রয়েছে। তাকে আমরা ফোন দিয়েছিলাম সে তো বলে দিয়েছে তার স্বামী ওর  কাছে নাই।

এ অবস্থায় সকাল পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করে তাকে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করে দিতে পারি। বাড়িতে গিয়ে কয়েকদিন অপেক্ষা করুক-তার স্বামী ফেরত না আসলে স্থানীয় থানায় শ্বশুর বাড়ির লোকদের জড়িয়ে নির্যাতনের দায়ে পারিবারিক আইনে মামলা করে দিতে পারে । যেহেতু অন্ত:স্বত্তা সুবিধাও পাবে। এছাড়া উনি (পারুল) যদি যেতে রাজি হয় তাহলে ঢাকায় ভিকটিম সেন্টারেও দিতে পারি-বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।

 

কান্না ভেজা চোখে পারুল বলেন, তার বাবার বাড়ি মানিকগঞ্জ। বাবা মারা গেছেন অনেক আগেই। মায়ের কাছ জমি বেঁচে যৌতুকের  টাকা আনার পর স্বামী মনির তাকে আর দেখতে পারে না। শুধু মায়ের কথায় চলে। এখন পেটের সন্তান নিয়ে আমি কার কাছে যাব? ওদিকে তার মায়েরও অভাবের সংসার।

ভালোবেসে বিয়ে করে পারুল আজ অসহায়, তাই মধ্যরাতে ভয়-ডর রেখে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন। যদি ভালোবাসার মানুষটিকে খুঁজে পায়। আবার যদি তাকে সংসারে ফিরে নেয়-এই ভরসায়।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১৬
এমসি/বিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।