ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ঠাকুরগাঁও হানাদার মুক্ত দিবস শনিবার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১৬
ঠাকুরগাঁও হানাদার মুক্ত দিবস শনিবার ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তানের হানাদার মুক্ত হয় ঠাকুরগাঁও জেলা। দিনটি পালনে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ দিনব্যাপী কর্মীসূচি গ্রহণ করেছে। 

ঠাকুরগাঁও: ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তানের হানাদার মুক্ত হয় ঠাকুরগাঁও জেলা। দিনটি পালনে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ দিনব্যাপী কর্মীসূচি গ্রহণ করেছে।

 

তবে, জেলা ভিক্তিক মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার দাবি বর্তমান প্রজন্মের। দেশ হানাদার  মুক্ত হলেও এদেশীয় রাজাকার মুক্ত না হওয়ার ক্ষোভ  মুক্তিযোদ্ধাদের।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ এই কালো রাতে পাকিসেনারা ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলাদেশি মানুষের ওপর। তাদের প্রতিরোধ করতে সারাদেশসহ ঠাকুরগাঁওবাসীও গড়ে তুলেছিল দুর্বার আন্দোলন।  

প্রায় ৮ মাস যুদ্ধের পর ২৯ নভেম্বর পঞ্চগড় হাতছাড়া হওয়ার পর ঠাকুরগাঁওয়ে ঘাঁটি স্থাপন করে পাকিস্তানি বাহিনী। ৩০ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা ভুল্লী ব্রিজ উড়িয়ে দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। পহেলা নভেম্বর কমান্ডার মাহাবুব আলমের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ঠাকুরগাঁওয়ে অগ্রসর হয়।

২ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে পিছু হটতে বাধ্য হয় পাকিস্তানি বাহিনী। ৩ ডিসেম্বর বিজয়ের বেশে ঠাকুরগাঁওয়ে ঢোকেন মুক্তিযোদ্ধারা। স্বদেশের পতাকা উড়িয়ে ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ ধ্বনিতে আনন্দ উল্লাস করে এলাকার মুক্তিকামী মানুষ।

সদর উপজেলার জাঠিভাঙ্গা গ্রামের মুক্তিযুদ্ধা আব্দুল করিম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশ হানাদার মুক্ত হয়েছে, কিন্তু এদেশীয় রাজাকার মুক্ত হয়নি। তাই সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথাচাড়া দিচ্ছে বারবার। এদের প্রতিহত করতে এখনি সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।  

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক বলেন- বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবসগুলোর মতো মুক্ত দিবসও সরকারিভাবে পালন করা প্রয়োজন। তা না হলে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস পরবর্তী প্রজন্ম জানতে পারবে না। এছাড়াও স্থানীয় ভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা প্রয়োজন। তা না হলে একসময় ইতিহাস বিকৃত হতে পারে।

ঠাকুরগাঁও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার বদরুদ্দোজা বদর বাংলানিউজকে বলেন, অরক্ষিত বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। এছাড়াও স্থানীয় রাজাকারদের তালিকা হয়েছে, তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবি করা হয়েছে। পাশাপাশি শহীদ পরিবারের সদস্যরা এখনো নানা সমস্যায় জর্জরিত তাদের পুনর্বাসনেরও দাবি তোলা হয়।

দিনটি পালন উপলক্ষে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ গ্রহণ করেছে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি। সকালে দিনটির কর্মসুচি উদ্বোধন করবেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আকবর হোসেন। পরে শহরে বের হবে মুক্তির শোভাযাত্রা। বিকেলে শহীদ মিনারে মুক্তিযুদ্দের আলোক চিত্র প্রদর্শনী, আলোচনা সভা, মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারে সম্মাননা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

মুক্ত দিবস পালন কমিটির আহ্বায়ক কমল কুমার রায় বাংলানিউজকে বলেন, ঠাকুরগাঁও পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত দিবস পালন উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারও দিনব্যাপী কর্মসুচি গ্রহণ করা হয়েছে। জেলার মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সহযোগিতা পাওয়া গেছে।

স্থানীয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস লিপিবদ্ধ করার পাশাপাশি স্থানীয় যুদ্ধাপরাধীদের তালিকা করে বিচারের আওতায় আনার দাবি উঠেছে। এছাড়া গণকবর চিহ্নিতকরণ ও অরক্ষিত গণকরব সংরক্ষণের দাবিও জানিয়েছে জাঠিভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা জামাল উদ্দিন, সোহবাব মিয়া।  

তবে, গণকবরগুলো সংরক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে জেলা প্রশাসন সচেষ্ট আছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল।

মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কাছে তুলে ধরতে এ ধরনের দিবসগুলো পালনে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন বলে মনে করেন এলাকাবাসী।

বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৬
পিসি/
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।