ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

দুর্ভোগের নাম ‘সাতক্ষীরা-মুন্সীগঞ্জ সড়ক’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১৬
দুর্ভোগের নাম ‘সাতক্ষীরা-মুন্সীগঞ্জ সড়ক’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সাতক্ষীরা-মুন্সীগঞ্জ সড়ক। প্রায় ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কটির বিভিন্ন স্থানে পিচ উঠে বেহাল দশার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে, ক্ষত-বিক্ষত এ সড়কটিতে চলাচলে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। 

সাতক্ষীরা: চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সাতক্ষীরা-মুন্সীগঞ্জ সড়ক। প্রায় ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কটির বিভিন্ন স্থানে পিচ উঠে বেহাল দশার সৃষ্টি হয়েছে।

ফলে, ক্ষত-বিক্ষত এ সড়কটিতে চলাচলে মারাত্মক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।  

সরেজমিনে দেখা যায়, সাতক্ষীরা-মুন্সীগঞ্জ সড়কের সর্বত্রই পিচ উঠে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। দেখে মনে হয় ‘চাবুকের আঘাতে’ ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে সড়কটি। এতে শুষ্ক মৌসুমে ধুলোয় আচ্ছন্ন থাকে গোটা সড়ক ও তার আশপাশের এলাকা। আর বর্ষায় পানি জমে কাদা হয়।  

সাতক্ষীরা-মুন্সীগঞ্জ সড়কের সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে বাকাল পর্যন্ত, আলিপুর থেকে নলতা পর্যন্ত, কালিগঞ্জ বাস টার্মিনাল এলাকা, শ্যামনগর বাসস্ট্যান্ড থেকে মুন্সীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল এমনকি হেঁটে চলাও দুস্কর হয়ে পড়েছে।  

এ সড়কে চলাচল করলে ধুলোয় সাদা হয়ে যায় মানুষের শরীর। ঝাঁকুনিতে স্বল্প গতিতে চলে যাত্রীবাহী বাস। অসুস্থ হয়ে পড়ে মানুষ। সময় মতো পৌঁছানো যায় না কোথাও। দু’ঘণ্টার পথ যেতে সময় লাগে চার ঘণ্টারও বেশি। অবর্ণনীয় কষ্ট ভোগ করে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয় সবাইকে। মাঝে মাঝে যাত্রীবাহী বাসসহ অন্যান্য যানবাহনের পাতি ভেঙে বিকল হয়ে পড়ে সড়কে। আর দুর্ঘটনা তো লেগেই থাকে।  

মাইক্রোবাস চালক কবীর উদ্দীন বাংলানিউজকে জানান, আগে সাতক্ষীরা থেকে মুন্সীগঞ্জে যেতে দু’ঘণ্টা সময় লাগতো। এখন আর হয় না। ঝাঁকুনিতে যাত্রীরা ক্লান্ত হয়ে পড়েন।  

বাস চালক আজিজুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, রাস্তার যে অবস্থা তাতে সাতক্ষীরা থেকে যাত্রা করে মুন্সীগঞ্জ তো দূরের কথা, কালিগঞ্জ পর্যন্ত পৌঁছানো যাবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় থাকতে হয়। রাস্তায় বাসের যন্ত্রাংশ খুলে পড়ে। কখনই সময় মতো পৌঁছানো যায় না। এজন্য সাতক্ষীরা থেকে মুন্সীগঞ্জ সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এখন কালিগঞ্জ থেকে বাস পরিবর্তন করতে হয়।  

শ্যামনগরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকের অ্যাম্বুলেন্স চালক আবু সাইদ বাংলানিউজকে জানান, রোগী নিয়ে সাতক্ষীরায় যাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। যে রাস্তা তাতে রোগী আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে।  

সাতক্ষীরা শহরের ইজিবাইক চালক জাহিদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, সাতক্ষীরা শহর থেকে বাকাল সড়কে যাওয়াই যায় না। প্রায় গাড়ি উল্টে চালকসহ যাত্রীরা আহত হন।  

সুন্দরবন এলাকার বাসিন্দা মনঞ্জয় মণ্ডল বাংলানিউজকে বলেন, আগে এখানে অনেক পর্যটক আসতো। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা এতোই নাজুক যে এখন আর কেউ আসতে চায় না।  

একটি বীজ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভ শাহীনুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, প্রতিদিন মোটরসাইকেলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাতক্ষীরা থেকে শ্যামনগরে আসতে হয়। আসার সময় ধুলোর কারণে আলাদা জামা-কাপড় সঙ্গে নিয়ে আসতে নয়। গন্তব্যে পৌঁছে পোশাক পাল্টে কাজ করতে হয়।

সাতক্ষীরা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, সাতক্ষীরা-মুন্সীগঞ্জ সড়ক পুনর্নির্মাণ করা দরকার। মাঝে মাঝে ইট পাথর ফেলে মেরামত করা হয়। কিন্তু দু’দিন না যেতেই আবার যা তাই হয়ে যায়।  

তিনি অভিযোগ করে বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় সাতক্ষীরার ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটন শিল্প ধ্বংসের পথে। এজন্য সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।  

এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুরুল করিম সাতক্ষীরা-মুন্সীগঞ্জ সড়কের বেহাল দশার কথা স্বীকার করে বাংলানিউজকে বলেন, খুলনা বিভাগের ১০টি জেলায় সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প ২য় পর্যায় শুরু হচ্ছে। এই প্রকল্পে সাতক্ষীরা-মুন্সীগঞ্জ সড়কটি অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে, সাময়িকভাবে চলাচলের উপযোগী করতে মেরামতের টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। খুব দ্রুত মেরামত কাজ শুরু হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৬
পিসি/
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।