ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

প্রতিবন্ধিতার কারণে শিশুকে শিক্ষা থেকে দূরে রাখা যাবে না

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১৬
প্রতিবন্ধিতার কারণে শিশুকে শিক্ষা থেকে দূরে রাখা যাবে না

শিক্ষা নীতিমালায় বাধ্যবাধকতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘প্রতিবন্ধিতার কারণে কোনো শিশুকে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে দূরে রাখা যাবে না’।

ঢাকা: শিক্ষা নীতিমালায় বাধ্যবাধকতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘প্রতিবন্ধিতার কারণে কোনো শিশুকে শিক্ষা কার্যক্রম থেকে দূরে রাখা যাবে না’।

অটিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের যারা বিখ্যাত হয়েছিলেন, তাদের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘প্রতিবন্ধীদের মাঝে অনেক মেধা লুকিয়ে থাকে।

সেই সুপ্ত মেধা বিকাশের সুযোগ করতে দিতে হবে’।

শনিবার (০৩ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ২৫তম আন্তর্জাতিক  ও ১৮তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবসের উদ্বোধনী  অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
 
প্রতিবন্ধী বা অটিস্টিকদের জন্য অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য, সমাজের সব স্তরের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা’।

প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘শিক্ষা খাতে প্রতিবন্ধীদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির ব্যবস্থা নিয়েছি। শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছি। নীতিমালায়ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সব ধরনের সুযোগ রাখা হয়েছে’।

সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ প্রথম উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, জনগণের সেবা করাই হচ্ছে সরকারের দায়িত্ব। সেখানে যারা প্রতিবন্ধী বা অটিস্টিক তাদের বিষয়টি অবশ্যই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাওয়া উচিত’।
 
‘সেই সময় থেকে প্রতিবন্ধীদের সহযোগিতার জন্য কাজ করছি’।

ব্যক্তিগত সম্পদও জনকল্যাণে দান করেছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সম্পদের সবই আমরা জনগণকে দান এবং একটি ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করি। এখান থেকে আমরা প্রতিবন্ধীদের লেখাপড়ার জন্যও সহায়তা দিয়ে থাকি’।

সাধারণ স্কুল-কলেজে প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ স্কুল নয়। সাধারণ স্কুলেও প্রতিবন্ধীদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।


তিনি বলেন, ‘সব সময় তাদের আলাদা রাখলে পুরোপুরি সুস্থ হবে না। সাধারণ ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে থাকলে, তাদের সঙ্গে মিশলে প্রতিবন্ধীরাও অনেকটা সুস্থ হয়ে যাবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ ধরনের ব্যবস্থা দেখেছি’।

প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে কাজ করতে বিত্তশালীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী মানুষের কল্যাণে কন্যা সায়মা হোসেন পুতুলের অবদানের কথাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, গ্লোবাল অটিজম পাবলিক হেলথ ইনিশিয়েটিভ ইন বাংলাদেশের জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান সায়মা হোসেনের প্রচেষ্টায় দেশ ও বিদেশে অটিজমের গুরুত্ব ও সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাকে ‘এক্সিলেন্স ইন পাবলিক হেলথ অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করেছে।

প্রধানমন্ত্রী জানান, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩ ও নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন-২০১৩ প্রণয়ন করা হয়েছে। ৬৪ জেলায় সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে ৬৪০ জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর জন্য বিনামূল্যে আবাসিক শিক্ষা, ১২টি দৃষ্টি ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী স্কুলে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থীর বিনামূল্যে থাকা-খাওয়ার সুযোগ-সুবিধাসহ বিশেষ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে ৬২টি বিশেষ স্কুল, যেখানে প্রায় ১০ হাজার অটিজম ও এনডিডি বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ছাত্র-ছাত্রী ও ৭০ হাজার প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে ৫০ কোটি টাকার উপবৃত্তি, বিনামূল্যে ব্রেইল বই ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ৩২টি মোবাইল থেরাপি ভ্যান, বিসিএসসহ প্রথম শ্রেণীর চাকরিতে ১ শতাংশ, ৩য় ও চতুর্থ শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে ১০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণসহ প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে সরকারের অন্যান্য পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

সরকারি চাকরিতে আওয়ামী লীগ সরকারই প্রথম প্রতিবন্ধী কোটা চালু করেছে বলেও জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের প্রতিবন্ধীরা ক্রিকেট খেলা থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রে অবদান রাখছেন। তারা স্বর্ণপদকও লাভ করেছেন’।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতার পর জাতির পিতা যে সংবিধান দিয়েছেন, সেখানে সমগ্র জাতির ভাগ্য উন্নয়নের দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই সংবিধানে প্রত্যেক মানুষের মৌলিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে’।

তিনি বলেন, ‘পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করি। তারপর থেকেই আমরা উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেছি’।

অনুষ্ঠান থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন প্রাঙ্গনে ‘প্রতিবন্ধিতা উন্নয়ন মেলা-২০১৬’ এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় অপর প্রান্তে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক।

সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নূরুজ্জামান আহমেদের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সর্ম্পকিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোজাম্মেল হোসেন, জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামের সভাপতি রজব আলী খান নজিব প্রমুখ।

স্বাগত বক্তব্য দেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব জিল্লার রহমান। রজব আলী খান সরকারি কাজে প্রতিবন্ধীদের সম্পৃক্তকরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির দাবি জানান।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর কল্যাণে অবদান রাখা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৬
এমইউএম/টিআই/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।