ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে তিস্তার কাঁটা সরবে?

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১৬
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে তিস্তার কাঁটা সরবে? ফাইল ফটো

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৭ ডিসেম্বর দুই ‍দিনের সফরে নয়াদিল্লি যাচ্ছেন। ২০১০ সালের ১০ জানুয়ারি দ্বিপক্ষীয় সফরে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন। তারপরে বিভিন্ন কারণে তিনি ভারত সফরে গেলেও সেগুলো দ্বিপক্ষীয় সফর ছিল না।

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৭ ডিসেম্বর দুই ‍দিনের সফরে নয়াদিল্লি যাচ্ছেন। ২০১০ সালের ১০ জানুয়ারি দ্বিপক্ষীয় সফরে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর করেন।

তারপরে বিভিন্ন কারণে তিনি ভারত সফরে গেলেও সেগুলো দ্বিপক্ষীয় সফর ছিল না। স্বাভাবিকভাবে তাঁর এবারের সফরটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে।

শেখ হাসিনার ২০১০ সালের সফরে দুই দেশের মধ্যে ৫০টি যৌথ ইস্তেহার ঘোষণা হয়। এসব যৌথ ইস্তেহারের ওপর ভিত্তি করে গত ৬ বছর ধরে একটি একটি করে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সীমান্ত সমস্যার মত জটিল সমস্যার সমাধানও হয়ে গেছে। কিন্তু একটি ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে টানাপোড়ন রয়েই গেছে। সেটি হল তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর না হওয়া।

শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরে তিস্তা চুক্তির স্বাক্ষরের পথের বাধা দূর হবে এমনটিই আশা করা হচ্ছে। যদিও এবারের ভারত সফরে মূল লক্ষ্য ৭১  সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে  আত্মহুতি দেওয়া ভারতীয় শহিদদের পরিবারগুলোর প্রতি বিশেষ সম্মান জানানো। তারপরেও মনে করা হচ্ছে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি এবার হতে যাচ্ছে।

এ নিয়ে নয়াদিল্লিও বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছে এবং একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান খোঁজার চেষ্টা করছে বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী সঞ্জীব কুমার বালিয়ান গত ২ ডিসেম্বর শুক্রবার লোকসভায় বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, ভারত সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি করার বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে। এ চুক্তিতে সব পক্ষেরই স্বার্থরক্ষা হয় সেভাবেই কাজ করা হচ্ছে।

এর আগে ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংহের ঢাকা সফরকালে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর স্থগিত হয়ে যায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় শেষ মূহুর্তে বেঁকে বসার কারণে। এ উপলক্ষে তার ঢাকায় আসার কথা থাকলেও মমতা সেবার ড. মনমোহনের সঙ্গে ঢাকা না এসে উল্টো চুক্তি স্বাক্ষরের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। সেবার দু’পক্ষই চুক্তিটির সব খুঁটিনাটি  তরিঁ করেই রেখেছিল।

কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বাধার কারণে আর স্বাক্ষরিত হতে পারেনি। এখন মমতাকে রাজি করাতে পারলেই এ চুক্তি বাস্তবায়ন হবে। অবশ্য গতবছর বাংলাদেশ সফরে এসে মমতা এ ব্যাপারে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে গেছেন। মমতা সেবার  ঢাকায় এসে বলেছিলেন, ‘আমার ওপর বিশ্বাস রাখুন। ’

তবে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট নিয়ে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তা নিয়ে মোদি ও মমতা এখন বিপরীতমুখী অবস্থানে। তারপরে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দলমত নির্বিশেষে সমর্থন করার নজির রয়েছে ভারতীয় রাজনীতিকদের। শুধু ৭১ এ-ই নয়, সাম্প্রতিকালে সীমান্তচুক্তিটির পক্ষে  লোকসভায় সর্বসম্মত  অবস্থানই এর বড় নজির।  

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পরে সীমান্তচুক্তি চুক্তি স্বাক্ষর ও বাস্তবায়ন হয়। ২০১৫ সালের ৬ জুন বাংলাদেশ সফরে এলে এ চুক্তি স্বাক্ষর হয়। সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী এ সফর সম্পর্কে বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরে এ চুক্তি বাস্তবায়ন হবে বলে আমি আশা প্রকাশ করছি। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাম্প্রতিককালে সর্বোচ্চ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিস্তা নিয়ে চাপ অব্যাহত রাখতে হবে। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পন্ন পদ্মানদীর পানিবন্টন চুক্তির ৯ ধারায় বলা হয়েছে, শুধু গঙ্গা নয় অন্য কোনো নদীর পানিও প্রত্যাহার করা যাবে না। ’

তিনি বলেন, ‘ভারতে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে আমাদের কিছুই বলার নেই। এ চুক্তির বিষয়ে  রাজনীতি বাধা হবার কারণ নয়। ভারতের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ইস্যুটি প্রায় অর্ধ যুগ ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ নিপুণভাবে সমাধান করে যাচ্ছে। তারপরে বাংলাদেশে জন্য ন্যায্য এমন কিছু ভারত আর দূরে ঠেলে রাখতে পারবে না বলে আমি মনে করি। ’   

পানিবিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত জানান, ‘তিস্তা নদী একেবারে শুকিয়ে গেলে নদীর ইকো-সিস্টেম নষ্ট হয়ে ধীরে ধীরে নদী মরে যাবে। উজানের পানি প্রত্যাহারের জেরে আসলে নদীটি মরতে বসেছে। অতিসত্বর  দুই দেশের রাজনীতিকদের  এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ’


তিনি বলেন, ‘প্রচুর অর্থ খরচ করে তিস্তা ব্যারেজ নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু পানির অভাবে এ ব্যারেজ কাজ করবে না। বাংলাদেশ তিস্তা নদীর পানির একটি অংশ পাওয়ার অধিকার রাখে। ২০১৫ সালে জাতিসংঘ প্রণীত ১৫ বছর মেয়াদী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এর অন্যতম ৬ নং অনুচ্ছেদটি হল আন্ত:দেশীয় নদীরগুলোর  পানির অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে। ’

সাবেক রাষ্ট্রদূত আশফাকুর রহমান বলেন, ‘ভারত কোনো প্রকার চুক্তি ছাড়া তিস্তা নদীর পানি প্রত্যাহার করতে পারে না। তবে প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফরে এই চুক্তির স্বাক্ষর হলে পানিবণ্টনের ক্ষেত্রে  ন্যায্যতা নিশ্চিত। এজন্য আমাদের পক্ষ  থেকে প্রতিনিয়ত ধারালো পদক্ষেপ নিতে হবে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারতকে আমাদের পক্ষ থেকে বলতে হবে, গত কয়েক বছর আমরা ট্রানজিট, বাণিজ্য ও নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে তোমাদের বিভিন্ন সহযোগিতা দিয়ে আসছি বন্ধুত্বের নজির হিসেবে।   এখন তিস্তার কাঁটা সরালেই এ বন্ধুত্ব  আরো বিকশিত হতে পারে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১৬
কেজেড/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।