ঢাকা: এক বছর আগে বসানো হয়েছিল ডাস্টবিন, পরিচ্ছন্ন ঢাকা গড়তে টিনশেডের সেই ডাস্টবিন ফলও দিচ্ছে। কুকুর-বিড়ালের উৎপাত আর পথচারীর পায়ে পায়ে কিংবা বাহনের চাকায় ঘুরে ময়লা-আবর্জনা দিয়ে অপরিচ্ছন্ন করছে না রাজপথ।
ময়লা রাখতে ‘সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন’ শুধু পানি দিয়ে পরিস্কার করা হলেও জীবাণুমুক্ত করতে দেওয়া হচ্ছে না ব্লিচিং পাউডার বা জীবাণুনাশক। আবার কোনোটিতে রয়েছে আলোকস্বল্পতা। আর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করছেন পরিচ্ছন্নকর্মীরা, ঝুঁকি থাকলেও এ নিয়ে সচেতনতা নেই তাদের।
রাজধানীর শ্যামলী পেরিয়ে কল্যাণপুর যেতেই রাস্তার পাশে উত্তর সিটি করপোরেশনের বসানো একটি ‘সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন’।
শনিবার (১০ ডিসেম্বর) ঘণ্টারও বেশি সময় সেখানে অবস্থান করে জানা যায় পরিচ্ছন্নকর্মী, ডাস্টবিন ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নের নানা তথ্য।
ভ্যান বোঝাই করে বাসা-বাড়ির ময়লা নিয়ে এসে নামাচ্ছিলেন আল-আমিন। খালি হাতে, নাক-মুখে কোনো মাস্ক ব্যবহার না করে ময়লা-আবর্জনা নামাচ্ছিলেন এই পরিচ্ছন্ন কর্মী। ধুলো উড়ছে, ভ্যাপসা গরমে উৎকট গন্ধে কাজের মাঝেই কথা বললেন আল-আমিন।
কোনো সমস্যা আছে কিনা- জানতে চাইলে বলেন, সমস্যা তো আছে। দু’টা লাইটের একটা নষ্ট, রাতে কাজ করতে সমস্যা হয়। বিকেলে শুধু পানি দিয়ে আমরাই ধুই। ব্লিচিং পাউডার নেই। মোটরের পাইপটাও নষ্ট, পানির জোর হয় না।
কথা বলতে বলতে আর একটি ভ্যান নিয়ে এলেন সিরাজ। ২৫ বছর ধরে ময়লা নিয়ে কাজ তার। শীত পড়লেও দুপুরের রোদে যানজটে পড়ে খানিকটা ঘেমে অস্থির ভাব তার।
‘এই দ্যাখেন না কতদূর ঘুরে আসতে হয়, ওপারে দারুস সালাম, এদিকে শ্যামলী। একটাই চাওয়া রাস্তার মাঝখানে একটু কেটে দিক। যানজট আর ভালো লাগে না’- এক নিঃশ্বাসেই ক্ষোভের সঙ্গে বললেন সিরাজ।
বাড়ি বাড়ি ময়লা নিয়ে বাড়িওয়ালের কাছে ৫০-১০০ টাকা এবং নিজ মহল্লার কমিটির কাছে দুই-থেকে আড়াই হাজার টাকা বেতন পান এসব পরিচ্ছন্নকর্মী।
স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে আল-আমিন বলেন, ময়লা নাড়া-চাড়া করতে অভ্যাস হয়ে গ্যাছে, এখন গন্ধ নাকে লাগে না। তবে অসুখ হলে ভুগতে হয়। গ্যাস্ট্রিক সব সময়ই লেগে থাকে।
আর আগে যেখানে খোলা জায়গায় ময়লা পড়তো এখন তা দেয়াল বন্দি হয়ে এক জায়গায়, এতে পরিবেশের উপকার হচ্ছে তা বোঝা গেল সিরাজের কথা থেকেই।
সকাল ১১টা থেকে ভ্যানে করে ময়লা আসা শুরু হয়, ১৮টি ভ্যানে আসে রাত ৮-৯টা পর্যন্ত। পরে তিনটি ট্যাংকে প্লাস্টিক ও পচনশীল বস্তুগুলো আলাদা করে ভরে ফেলা হয়। রাতে সেগুলো নিয়ে যাওয়া হয় গাবতলীর ময়লার ভাগাড়ে। এরপর পানি দিয়ে পরিস্কার করা হয়।
আল-আমিন ও সিরাজের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই এই ডাস্টবিনের দেখভালের দায়িত্বে থাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নকর্মী কাজী বাদশা উপস্থিত হলেন।
জীবাণুনাশক কিছু ব্যবহার না করার কথা অস্বীকার করে তিনি বললেন, না না, প্রতিদিনই দেওয়া হয়।
তবে সেখানে মোটর ও অন্যান্য জিনিসপত্র থাকলেও পাওয়া যায়নি ব্লিচিং পাউডার।
একটি লাইট ও মোটরের পাইপ ছেঁড়া-ফাটা থাকায় পরিস্কার-পরিচ্ছন্নের অসুবিধার কথা স্বীকার করেন সিটি করপোরেশনের এ কর্মী।
কুড়িলে গন্ধ থেকে মুক্তি
সকাল সোয়া ৯টায় কুড়িল বিশ্বরোড এলাকার টিনশেডের ডাস্টবিনটিতে গিয়ে দেখা গেলা দু’জন পরিচ্ছন্নকর্মী ভ্যান থেকে ময়লা নামাচ্ছেন। এদের একজন আকবর আলী জানালেন, আগে খোলা আকাশের নিচে ময়লা পড়ে থাকতো। গন্ধ ছড়াতো, এখন এলাকার মানুষের শাস্তি হয়েছে, রাস্তা-ঘাট পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন।
কুড়িলে পানের দোকানদার আলাউদ্দিন বলেন, এ জায়গায় গন্ধ লেগেই থাকতো। এখন মুক্তি মিলেছে।
ট্রাকে ময়লা তোলার পর মোটরের পানি দিয়ে পরিস্কার করা হলেও এখানেও জীবাণুনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে না বলে জানান পরিচ্ছন্নকর্মী আকবর আলী এবং সিটি করপোরেশনের ট্রাকচালক কামাল।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৬
এমআইএইচ/এসএইচ