ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কিশোর রমজান হত্যার ক্লু খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০১৭
কিশোর রমজান হত্যার ক্লু খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ উদ্ধার করা হচ্ছে কিশোর রমজানের লাশ

কক্সবাজার: লাশ উদ্ধারের তিনদিন পেরিয়ে গেলেও কিশোর রমজানের(১৪) হত্যার কোনো ক্লু খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ।

গত ৩ ডিসেম্বর বিকেলে সদর উপজেলার খুরুশকুলের তেতৈয়ার দক্ষিণপাড়া গ্রামের ধানক্ষেত থেকে মুখমন্ডল ও হাত পা ঝলসানো অবস্থায় রমজান আলী’র মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

নিহতের গলায় ছুরির আঘাতের চিহ্ন ও ডান হাত কব্জি কাটা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল।

তবে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত  ধারালো অস্ত্রটি। সেদিন ঘটনাস্থল থেকে কোন ধরনের আলামতও পায়নি পুলিশ। কে বা কারা, কি কারণে এমন পৈশাচিকভাবে কিশোর রমজান আলীকে হত্যা করেছে তার কোনও ক্লুও খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। তবে সদর থানা পুলিশ বলছে ঘটনাটি ক্লুহীন ও কোল্ড ব্লাডেড মার্ডার হলেও শিগগিরই হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।

খুরুশকুল ইউপি চেয়ারম্যান জসিমউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, নিহত রমজান আলী ৬ নং ওয়ার্ডের কালু মাঝির ছেলে। তার বাবা পেশায় জেলে। রমজানরা ৪ বোন ও ১ ভাই। সে অত্যন্ত সৎ ও ভাল ছেলে। তার বিরুদ্ধে কখনো কোন ধরনের অভিযোগ নেই। টমটম চালক রমজানের বিরদ্ধে কখনো গ্রাম্য সালিশও হয়নি।

তিনি আরো বলেন, ছেলেটির তেমন কোন বন্ধু-বান্ধবও ছিল না। আসলে আমরা এলাকাবাসীই ওই কিশোরের হত্যা নিয়ে এখনো অন্ধকারে রয়েছি। কে বা কারা কি কারণে এই হত্যা করেছে তা ধারণাই করতে পারছি না। তবে আমার ধারণা এই হত্যাকাণ্ডে প্রশিক্ষিত কিলার দ্বারা করা হয়েছে।

নিহতের বাবা কালু বাংলানিউজকে বলেন, আমার ছেলের সাথে কারো কোন বিরোধ ছিল না। তবে আমার বড় মেয়ের আগে একটি বিয়ে হয়েছিল। সেই ছেলে মাদকাসক্ত ও চরিত্রহীন হওয়ায় তার কাছে থেকে মেয়ের ডিভোর্স করাই। এ নিয়ে আমার মেয়ের সাবেক স্বামী শুক্কুরের সাথে পারিবারিকভাবে ঝগড়া ছিল। এ কারণে শুক্কুর ও তার এক বন্ধু মিলে আমার ছেলেকে খুন করেছে। আমি বাদী হয়ে ওই দুইজনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছি।

এ বিষয়ে হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, হত্যাকাণ্ডটি সুপরিকল্পিতভাবে ঘটনা হয়েছে। মৃতদেহটি রোববার উদ্ধার হলেও লাশের অবস্থা দেখে মনে হয়েছে এর দুদিন আগে তাকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর মৃতদেহটি যাতে চিহ্নিত করা না যায় সেজন্য দাহ্য পদার্থ দিয়ে লাশের মুখমন্ডল, হাত ও পা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যেখানে মৃতদেহ পাওয়া গেছে সেখানে হত্যা করা হয়নি। হত্যা করা হয়েছে অন্যত্র।

তিনি আরো বলেন,  বীভৎস ওই মৃতদেহ দেখে ধারণা করা হচ্ছে প্রতিশোধের নেশায় মত্ত হয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটনা হয়েছে। তবে নিহত কিশোরের সাথে কারো কোন ধরণের বিরোধ ছিল বলে পুলিশের তদন্তে পাওয়া যায়নি।

তবে হত্যাকারী যতই চালাক হোক আইনের হাত থেকে রক্ষা পাবে না এমনটা দাবি করে কক্সবাজার সদর থানার ওসি ( অপারেশন ) মাঈন উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আসলে এই হত্যাকাণ্ডটি মর্মান্তিক।   এমন হত্যার পেছনের রহস্য  খুঁজে পেতে একটু সময় লাগছে। কারণ নিহত কিশোর মুঠোফোন ব্যবহার করতো না। খুব ঠাণ্ডা মাথায় হত্যাকারীরা হত্যার আলামত নষ্ট করার চেষ্টা করেছে। এছাড়া হত্যার পর মুখমন্ডল ঝলসানোর জন্য ব্যবহৃত দাহ্য পদার্থটি কক্সবাজারে পাওয়া যায় না।

কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রনজিৎ বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে দুইজনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। পুলিশ সেই দুই আসামিসহ নানা বিষয় মাথায় রেখে কাজ করছে। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করতে একটু সময় লাগবে। নিহতের লাশ দেখে একটি ধারণাই পুলিশ করতে পেরেছে। প্রতিশোধের নেশায় মত্ত হয়েই খুনিরা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। এই খুনে ব্যবহৃত দাহ্য পদার্থটি সহজলভ্য নয়। এর ব্যবহার সম্পর্কে সাধারণ লোকজন তেমন জানেন না।

তিনি আরো বলেন, কোন পেশাদার গ্রুপ এই খুনের সাথে জড়িত কিনা ও তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে কি কি বিষয় নিয়ে পুলিশ কাজ করছে তা এই মুহূর্তে তদন্তের স্বার্থেই বলা সম্ভব নয়। অপেক্ষা করুন শিগগিরই আসামিদের কাঠগড়ায় দেখতে পাবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০১৭
টিটি/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।