ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বিশ্বকে পরিচ্ছন্ন রাখার ব্রতে ঝাড়ু হাতে দুই নেপালি!  

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৭
বিশ্বকে পরিচ্ছন্ন রাখার ব্রতে ঝাড়ু হাতে দুই নেপালি!   প্রেসক্লাবের মূল ফটকে পরিচ্ছন্নতায় ব্যস্ত নেপালের দুই নাগরিক/ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: প্রেসক্লাবের মূল ফটকের সামনে এসে দাঁড়ালেন দু’জন ভিনদেশি নরনারী। তাদের পিঠে ব্যাগ। তা থেকে ফোল্ড করা ঝাড়ু বের করলেন। এরপর শুরু করলেন ঝাড়ু দেওয়া। সব ময়লা-আবর্জনা এক জায়গায় জড়ো করে তা ভরতে থাকলেন সঙ্গে করে নিয়ে আনা পলিথিন ব্যাগে। নির্বিকার চেহারায় দু’জনেই নিজেদের কাজটা করে যাচ্ছিলেন একমনে। স্মার্ট এই দুই ‘ঝাড়ুদার’কে দেখে উৎসুক জনতার ভিড় লেগে গেল। 

সোমবার (১১ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মুখে মাক্স পরা, ঝাড়ু হাতে এ দুই বিদেশিকে দেখা যায়।

তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তারা দুজনেই নেপালের নাগরিক।

পুরো বিশ্বকে পরিচ্ছন্ন আর জঞ্জালমুক্ত রাখার ব্রত নিয়েছেন তারা। সুশীলা মাহাসান ও রাজমান মানব নামে এই দুই নেপালি নরনারী ‘‘আমি না করলে কে?’’ স্লোগান ধারণ করে বিশ্বকে পরিচ্ছন্ন রাখার অভিযানে নেমেছেন।

নেপাল ও ভারতের কিছু অংশের পর গত ১১ দিন ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ঝাড়ু দিয়ে পরিচ্ছন্ন করার কাজে নেমেছেন তারা। এদেশে তিন মাস অবস্থান করবেন। এরপর রওনা হবেন শ্রীলঙ্কার উদ্দেশ্যে পরিবেশ রক্ষা ও জঞ্জালমুক্ত রাখার ব্রত নিয়ে পৃথিবীর পথে বেরিয়ে পড়া এই দুই সারথি।

জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘পর্বত দিবস’ উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছেন। সেখানেই শুরু করে দিলেন তাদের পরিচ্ছন্নতা অভিযান। যেখানে ময়লা পাচ্ছেন সেখানেই ঝাড়ু হাতে নেমে পড়ছেন তারা।

মৃত্যুর আগ পযর্ন্ত পৃথিবীর যে যে প্রান্তে যাওয়ার সুযোগ পাবেন, সেখানেই নিজেদের সাধ্যমতো পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাবেন বলে জানালেন সুশীলা।

নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডুর কাছে কীর্তিপুরে থাকেন সুশীলা আর রাজমান। সংসারের গাঁটছাড়া বাঁধলেও পরে সব চুকিয়ে পরিবেশ রক্ষার কাজে নেমে পড়েছেন রাজমান। তবে সুশীলা এখনও সংসারে পা বাড়াননি।  

সংসারবিমুখ এই দুই নরনারী নিজেদের মতো করে পরিবেশ রক্ষায় নীরব অন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। গোটা পৃথিবীটাকে নিজের বাসস্থান বা বাসভূমি বলেই মনে করেন রাজমান ও সুশীলা।  

তারা দু’জন হাতে ঝাড়ু তুলে নিয়েছেন দেখে ৮০ থেকে ১০০ জন নেপালি নাগরিক নিজ উদ্যোগে নেপাল পরিচ্ছন্নতার অভিযানে নেমেছেন বলে জানালেন রাজমান।  

রাজমান বলেন, নিজের দেশটাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা বিশ্বের সব নাগরিকের দায়িত্ব। ‘আমরা না করলে কে করবে? দেশ আমার, আমিই পরিষ্কার রাখবো। বিশ্বের সকল দেশের সকল নাগরিকের জন্যই আমাদের এই বার্তা। আমাদের দেখে সবাই যেন অনুপ্রাণিত হয় নিজের দেশকে পরিষ্কার রাখার ব্যাপারে।

রাজমান যখন কথা বলছিলেন তখন একমনে ঝাড়ু দিয়ে যাচ্ছিলেন সুশীলা।  

ইংরেজি দুর্বল বলে সুশীলা কথা বললেন হিন্দিতে ।

জানালেন, কৈশোরকাল থেকে পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত। বন্ধু রাজমানের ডাকে ঝাড়ু হাতে প্রথমে নেপালে পরিচ্ছন্নতা অভিযানে নামেন। পরিবেশে রক্ষার জন্য নিজের জীবন পযর্ন্ত বাজি রাখতে পেছপা হবেন না বলে জানালেন এই প্রত্যয়ী নারী।

৩০ নভেম্বর বাংলাদেশে এসেছেন রাজমান ও সুশীলা। এরপর থেকে রাত কাটাচ্ছেন রাস্তায়, ফুটপাতে।  

'আমাদের কোনো ঘরবাড়ি নেই, যেখানে যাব সেখানে ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করে ঘুমিয়ে রাত কাটাবো'  -বললেন রাজমান।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৭
এমসি/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।