ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বান্দরবানে ঐতিহ্যবাহী রাজপুণ্যাহ মেলা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৭
বান্দরবানে ঐতিহ্যবাহী রাজপুণ্যাহ মেলা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বান্দরবান: বান্দরবানে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে বোমাং সার্কেলের ১৪০তম ঐহিত্যবাহী রাজপুণ্যাহ (পইংজ্রা) মেলা শুরু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুর ২টায় শহরের রাজবাড়ি মাঠে ১৭তম বোমাং রাজা ইঞ্জিনিয়ার উ চ প্রু চৌধুরী অস্থায়ী রাজমঞ্চে হেডম্যান, কারবারী ও প্রজাদের কাছ থেকে রাজকীয় কায়দায় খাজনা আদায়ের মাধ্যমে মেলার উদ্বোধন করেন।

এসময় হাতে স্বর্ণখচিত তলোয়ার ও রাজকীয় পোশাকে রাজা উ চ প্রু মঞ্চে উঠার সঙ্গে সঙ্গে প্রজারা দাঁড়িয়ে রাজাকে সম্মান জানায়।

পরে সার্কেলের হেডম্যান, কারবারী, রোয়াজারা একে একে রাজাকে কুর্নিশ করে জুম খাজনা ও উপঢৌকন দেন।

মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈংসিং এমপি, অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. মো. আবদুর রাজ্জাক এমপি, চট্টগ্রাম সেনা রিজিয়নের জিওসি জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার, ৬৯ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল যুবায়ের সালেহীন, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা, বান্দরবান জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক, পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় প্রমুখ। এছাড়াও সেনাবাহিনী, বিজিবিসহ বিভিন্ন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।

রাজপরিবার সূত্রে জানা যায়, বোমাং সার্কেলের ১০৯টি মৌজার হেডম্যান কারবারীরা রাজপুণ্যাহ উপলক্ষে বান্দরবানে এসে পৌঁছেছেন। তারা বাৎসরিক খাজনার পাশাপাশি নানা রকম উপঢৌকন দেন রাজা বাহাদুরকে।

তিন দিনব্যাপী রাজপুণ্যাহ মেলায় প্রতিবারের মতো এবারও নানা বিনোদনের আয়োজন করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে সার্কাস, যাত্রাপালা, পুতুল নাচ, মৃত্যুকূপসহ নানা আয়োজন।

প্রতিবছর প্রায় ১৫ হাজার জুমিয়া পরিবারের কাছ থেকে নব্বই হাজার টাকা খাজনা আদায় করা হয়। তন্মধ্যে ৪২ শতাংশ রাজা, ২১ শতাংশ হেডম্যান ও ২৭ শতাংশ রাজস্ব সরকার পেয়ে থাকে।

আনন্দঘন পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে ঐতিহ্যবাহী রাজপুণ্যাহ মেলা আয়োজনে সবার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন রাজা।

এদিকে, রাজপুণ্যাহ দেখতে ভিড় জমিয়েছেন দেশি-বিদেশি অসংখ্যা পর্যটক। তিন দিনব্যাপী রাজপুণ্যাহ উপলক্ষে বোমাং রাজা প্রজাদের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে রাজপুণ্যাহ ঐতিহ্য বজায় রাখতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

১৪টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায় এবং প্রায় ১ হাজার ৭৬৪ বর্গমাইল এলাকার ১০৯টি মৌজা নিয়ে গঠিত বোমাং সার্কেল। ১৭২৭ সাল থেকে বোমাং রাজ প্রথা শুরু হলেও ১৮৭৫ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে বোমাং রাজারা ঐতিহ্যবাহী রাজপুণ্যাহ মেলার আয়োজন করে আসছেন।

বান্দরবানে প্রত্যেকটি মৌজার প্রতিটি পরিবার বছরে ৬ টাকা হারে খাজনা দেয়। আর তা থেকে সরকারের তহবিলে জমা হয় ২ দশমিক ২৫ পয়সা, ১ দশমিক ২৫ পয়সা পান মৌজার হেডম্যানরা। বাকি ২ দশমিক ৫০ পয়সা পান বোমাং রাজা। ১৮৭৫ সালে নবম বোমাং রাজা সা নাইঞো রাজকর আদায় উপলক্ষে সর্বপ্রথম রাজপুণ্যাহ অনুষ্ঠানের প্রচলন করেছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৭
আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।