ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

দেলদুয়ারে একই পরিবারের চারজন প্রতিবন্ধী

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০১৮
দেলদুয়ারে একই পরিবারের চারজন প্রতিবন্ধী দেলদুয়ারে একই পরিবারের চারজন প্রতিবন্ধী

টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী (বামন) গোপাল চন্দ্র সূত্রধর (৪৫)। তার তিন মেয়েও শারীরিক প্রতিবন্ধী। 

কাঠমিস্ত্রি গোপাল চন্দ্র প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও সন্তানরা সে ভাতা পাচ্ছে না। শারীরিক প্রতিবন্ধিতার কারণে ভারি কোনো কাজ করতেও পারেন না তিনি।

ফলে অভাব অনটনে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে।  
মৃত নিত্য চন্দ্র সূত্রধরের তিন মেয়ে ও পাঁচ ছেলের মধ্যে গোপাল চন্দ্র সপ্তম। পরিবারের সবাই স্বাভাবিক সুস্থ জীবন-যাপন করলেও তিনিই একমাত্র শারীরিক প্রতিবন্ধী। তিনি শুধু বেঁটেই নন, দু’হাত এবং দু’পাও বাঁকা। ১৪ বছর আগে তিনি বিয়ে করেছেন বাসাইল উপজেলার আইসড়া গ্রামের আন্না রাণী সূত্রধরকে।
তাদের প্রথম সন্তান রাত্রী সূত্রধর (১২) বাবার মতোই বামন। সে ছিলিমপুর এমএ করিম উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে। গোপাল ও আন্না রাণীর ঘরে দ্বিতীয়বার আসে জমজ দুই মেয়ে। রিনা ও বীণা সূত্রধর। তারাও বাবার মতো প্রতিবন্ধী। বর্তমানে তাদের বয়স সাত বছর। তার ছিলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী।  

ক্ষুদ্রাকৃতি ও হাত-পা বাঁকা হওয়ার কারণে ভারি কাজ করতে কষ্ট হয়। তাই কেউ তাকে কাজে নিতে চায় না। পিঁড়ি, টুল ও ছোটখাটো আসবাবপত্র তৈরি করে খুব সামন্য আয় করেন। আর স্ত্রী অন্যের বাড়িতে কাজ করে স্বামীকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেন। দু’জনে মিলে যা আয় করেন, তাতে খেয়ে না খেয়ে কোনোমতে চলছে সংসার। এভাবেই সন্তানদের নিয়ে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছেন গোপাল ও আন্না।  

আন্না রাণী সূত্রধর বলেন, আমরা খুব কষ্টে জীবন-যাপন করছি। আমাদের মেয়েরা প্রতিবন্ধী হলেও তাদের মনোবল অত্যন্ত শক্ত। বড় মেয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি বাবাকে কাজে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে।

প্রতিবন্ধী হলেও লেখাপড়ার প্রতি গোপাল সূত্রধরের তিন মেয়েরই আগ্রহ অনেক। তারা লেখাপড়া করে বড় মানুষ হতে চায়। কিন্তু অভাবের কারণে তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।  

গোপাল সূত্রধর বলেন, সামান্য যা আয় হয়, তা দিয়ে ঠিকমতো খাবারই জোটে না। তারপরও কষ্ট করে মেয়েদের লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এভাবে হয়তো বেশিদিন চলবে না।  

তিনি বলেন, আমি প্রতিবন্ধী কার্ড পেলেও মেয়েরা কেউ কোনো ভাতা পায় না। সরকারি বা বেরসকারি কোনো সংস্থা বৃত্তি দিলে আমার প্রতিবন্ধী মেয়েদের লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়া সহজ হতো।  

পিরোজপুর গ্রামের এইচএম তাওহীদ রুবেল জানান, গোপাল চন্দ্র প্রতিবন্ধী হলেও পরিশ্রমী। কারো কাছে হাত না পেতে কষ্ট করে ছোটখাটো আসবাবপত্র তৈরি করে জীবন যাপন করছেন।

দেলুয়ারের আটিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম মল্লিক বাংলানিউজকে জানান, প্রতিবন্ধী এই পরিবারটি যাতে সরকারি ও বেরসকারি পর্যায়ে সব ধরনের সহযোগিতা পায় সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৮
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।