ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সফলতা-ব্যর্থতা বিচারের ভার দেশবাসীর

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৮
সফলতা-ব্যর্থতা বিচারের ভার দেশবাসীর প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশে ভাষণ

ঢাকা: দেশ পরিচালনায় সফলতা ও ব্যর্থতা বিচারের ভার জনগণের হাতে ছেড়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি প্রাণপণ চেষ্টা করেছি।

বর্তমান সরকারের চার বছর পূর্তিতে শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এ কথা বলেন তিনি।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমার উপর যে বিশ্বাস ও আস্থা রেখেছিলেন, আমি প্রাণপণ চেষ্টা করেছি আপনাদের মর্যাদা রক্ষা করার।

কতটুকু সফল বা ব্যর্থ হয়েছি সে বিচার আপনারাই করবেন।  

জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ২০১৪ সালে আপনাদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আজকের এই দিনে আমি তৃতীয়বারের মত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলাম। আজ আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে হাজির হয়েছি।

টানা ৯ বছর এবং তিন মেয়াদে মোট ১৪ বছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব করছেন তিনি।  

৫ জানুয়ারিতে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোটের নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করা এবং নির্বাচন প্রতিহতের চেষ্টার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপি-জামায়াত জোট সারাদেশে নির্মম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছিল। নির্বাচনের দিন ৫৮২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেয়। হত্যা করে প্রিজাইডিং অফিসারসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৩ থেকে ২০১৫- এই তিন বছরে বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীদের হাতে প্রায় ৫০০ নিরীহ মানুষ নিহত এবং কয়েক হাজার মানুষ আহত হন। প্রায় সাড়ে ৩ হাজার গাড়ি, ২৯টি রেলগাড়ি ও ৯টি লঞ্চ পোড়ানো হয়। ৭০টি সরকারি অফিস ও স্থাপনা ভাংচুর এবং ৬টি ভূমি অফিসে আগুন দেওয়া হয়। মসজিদে আগুন দিয়ে পোড়ানো হয় পবিত্র কোরআন শরীফ। তাদের জিঘাংসার হাত থেকে রেহাই পায়নি রাস্তার গাছ এবং নিরীহ গবাদিপশু।

সরকারের উন্নয়নে ধারাবাহিকতা ছিলো মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে পেরেছি বলেই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পেরেছি। ৯ বছর একটানা জনসেবার সুযোগ পেয়েছি বলেই বাংলাদেশ উন্নত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী মন্দা থাকা সত্বেও আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছি। জনগণ এর সুফল ভোগ করছেন।

বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোন সরকার দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করেনি মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত ২১ বছর এবং ২০০১ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সাত বছর- এই ২৮ বছর বাংলাদেশের জনগণ বঞ্চিত থেকেছে।

বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সরকার আমলের সঙ্গে অন্য সরকারগুলোর সময়কার উন্নয়নের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন, বিশেষ করে বিগত বিএনপি সরকারের সঙ্গে।

যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধু খুনিদের বিচার এবং জঙ্গি দমনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকর করা হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। বিডিআর হত্যার বিচার হয়েছে। আমরা সফলতার সঙ্গে জঙ্গিবাদ দমন করেছি। জনসচেতনতা সৃষ্টি করে এ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।  আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে।  

বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, ৩০ লাখ শহিদ ও দুই লাখ নির্যাতিত মা-বোনসহ সকব মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সহযোগিতাকারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহতদের কথা স্মরণ করেন।

বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২৪ বছরের সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ তিনি প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।  

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সেই আকাঙ্খা পূরণ করাই আমার একমাত্র ব্রত। বাংলার মানুষ যেন অন্ন পায়, বস্ত্র পায়, উন্নত জীবনের অধিকারী হয় - জাতির পিতার এই উক্তি সর্বদা আমার হৃদয়ে অনুরণিত হয়। তাই সর্বদা আমার একটাই প্রচেষ্টা- কীভাবে বাংলাদেশের মানুষের জীবনকে অর্থবহ করব, স্বচ্ছল ও সুন্দর করে গড়ে তুলব।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মা, বাবা, তিন ভাই, ভ্রাতৃবধূদের এবং অন্যান্য আত্মীয় স্বজনসহ ১৮ জন সদস্যকে হারানোর কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, বিদেশের মাটিতে ছিলাম বলে দুই বোন বেঁচে যাই, কিন্তু দেশে ফিরতে পারিনি আমরা। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী শাসক আমাদের দেশে আসতে দেয়নি। সর্বহারা নিঃস্ব-রিক্ত হয়ে স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে ৬টি বছর বিদেশে কাটাতে হয়েছিল।

১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সব বাধা অতিক্রম করে দেশবাসীর সমর্থনে আমি দেশে ফিরতে সক্ষম হই। রিফিউজি হিসেবে আমাদের অমানবিক জীবনের অবসান ঘটে।

দেশে ফিরে একদিকে যেমন দলকে সংগঠিত করার কাজে মনোনিবেশ করি, অপরদিকে দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ক্ষমতা ক্যান্টনমেন্ট থেকে উদ্ধার করে জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতে চেষ্টা চালাই।  

৭৫ এর পর ৯৬ এ আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে, বন্ধুর পথ অতিক্রম করে ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আমরা সরকার গঠন করে দেশবাসীর সেবা করার সুযোগ পাই।

২০০১ সালের নির্বাচনে গভীর চক্রান্ত করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয়নি বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

বিগত বিএনপি আমলের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০০১ এরপর দেশবাসী দেখেছেন রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, অর্থ লুটপাট, হাওয়া ভবনের দৌরাত্ম্য। জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, বাংলা ভাইয়ের উত্থান, মানি লন্ডারিং, দুর্নীতি, ৬৩ জেলায় একসঙ্গে ৫০০ জায়গায় বোমা হামলা। ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের র‌্যালিতে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা করে  ২২ নেতাকর্মী হত্যা।

**জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৮
এমইউএম/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।