ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শীতেও কর্মমুখর গ্রামীণ জনপদের মানুষ

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৮
শীতেও কর্মমুখর গ্রামীণ জনপদের মানুষ শীতের সকালে বোঝা নিয়ে ছুটছেন কর্মব্যস্ত এক ব্যক্তি/ ছবি: আরিফ জাহান

গ্রামীণ জনপদ ঘুরে: গ্রামীণ পাকা সড়ক। সড়কের একপাশে শোভা পাচ্ছে একটি পুকুর। আরেক পাশে দাঁড়িয়ে আছে ঝাঁকড়া মাথার বটগাছ। তখন বিকেল গড়িয়েছে সবেমাত্র। কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে চারপাশ।

কনকনে শীতের হাওয়া যেন পোশাক ভেদ করে হাড়ে মরণ আঘাত হানছে। এতে পুরো শরীরটা যেন কুঁকড়ে বাঁকা হয়ে যায়।

তার মধ্যেই হালিমা নামে এক নারী দড়ি হাতে ষাঁড় নিয়ে বাড়ি ছুটছেন।

কাজের মানুষের যেন বসে থাকার কোনো উপায় নেই। ভোর হতে না হতেই তাদের গোয়াল ঘরে ছুটতে হয়। ঘর পরিষ্কার করতে হয়। এরমধ্যে তড়িঘড়ি করে রান্নার কাজটাও সেরে ফেলতে হয়। কোন রকম খাবার মুখে দিয়ে গরু নিয়ে ছুটতে হয় মাঠে।
গরু নিয়ে মাঠে যাচ্ছেন এক নারী/ ছবি: আরিফ জাহানশিশু, কিশোররাও মাঠে ছুটে বেড়ায় ছাগল-ভেড়া নিয়ে। কৃষক ছোটেন ফসলের মাঠে। তাদের কারো হাতে কোদাল-পাচুন আবার কারো কাঁধে ভাড় ও টুপরি (স্থানীয় ভাষায়) শোভা পায়। নারীদেরও সংসারের কাজ শেষে মাঠে ছোটখাটো নানা ধরনের কাজ করতে দেখা যায়।

সেই ফাঁকে পাতা বিহীন একটি গাছে দেখা গেলো পাখির ঝাঁক। ওরা গাছটির ডালপালায় আশ্রয় নিয়েছে। তীব্র ঠাণ্ডায় পালক দিয়ে শালিক, ফিঙে ও বুলবুলির দল শরীরটা ঢেকে শীত নিবারণের চেষ্টারত।  

নগর বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার অন্যতম একটি গ্রাম। গ্রামটিতে সরেজমিনে গিয়ে প্রচণ্ড শীতকে উপেক্ষা করেও গ্রামীণ মানুষের কর্মমুখর জীবনের এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।
পাতা ঝরার দিনে গাছের ডালে ডালে পাখির কুজন/ ছবি: আরিফ জাহানঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের নয়মাইল বাজার থেকে আঁকাবাঁকা পথ ধরে বেশ কয়েক কিলোমিটার পূর্বে গেলে নগর গ্রাম। এর আগে আরও বেশ কয়েকটি গ্রামের দেখা মিলবে। পাকা সড়কের পাশাপাশি দেখা মিলবে অনেক গ্রামীণ মেঠো পথের। পথের দু’পাশ দিয়ে দেখা যাবে সারিসারি গাছপালা। সিংহভাগ গাছের পাতা নেই। দেখা মিলবে বিস্তীর্ণ ফসল ভর্তি জমি। যা দু’চোখের দৃষ্টিসীমাকে ছাপিয়ে যায়।

মাইলের পর মাইল জমি ছেয়ে আছে সরিষা ফুলে। সরিষার জমির আইল হয়ে সাইকেল চালিয়ে ছুটে চলছে দুরন্ত এক কিশোর। তার মাথার ওপর দিয়ে অস্ত যাচ্ছে সূর্য। গৃহপালিত পশুর খাবার কেটে বস্তাভর্তি করে মাথায় নিয়ে ছুটছেন এক পুরুষ। কোন কিছু হাতে সরিষার ক্ষেত মাড়িয়ে এক নারীকে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে দেখা যাচ্ছে।

ময়না-সাবিনা নামের দুই বোন ভেড়া চড়াতে এসে সরিষা ক্ষেতে আনন্দে মাতোয়ারা। অভাবী পরিবারের সন্তান ওরা। তীব্র শীতেও তাদের পরনে তেমন ভারী পোশাক ছিলো না। একজন আরেকজনের নাকে-কানে সরিষা ফুল দিয়ে মাখামাখি করছিলো। নিজেদের মত করে ওরা সাজগোজ করছিলো।
সরিষা ক্ষেতের উপরে কুয়াশা ভেদ করে উঠছে সূর্য/ ছবি: আরিফ জাহানহালিমা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা দরিদ্র পরিবারের মানুষ। দারিদ্র্যতার কষাঘাতে জর্জরিত। তাই দিনের কাজ দিনেই করতে হয়। একদিনের কাজ ফেলে রাখলে ওই দিনটাই সংসারের জন্য ঘাটতি থাকলো। এ অবস্থায় শীতের কথা ভাবলে পেটে ভাত যাবে না। কষ্ট স্বীকার করেই বেঁচে থাকার লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে।

ইব্রাহিম হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, দেড় বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। জমি দেখভাল করতে হয় প্রত্যহ। শীতের চিন্তা করলে ফসল আর ঘরে উঠবে না। জমিতে অর্ধেক ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। তাই শীতের তীব্রতা উপেক্ষা করেই ক্ষেতে যেতে হয় প্রতিদিন।

আমির মন্ডল বাংলানিউজকে জানান, গ্রামের মানুষগুলোর সিংহভাগই নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির। কর্ম করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। তাদের কেউ জমি চাষ করেন। কেউবা গরু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস-মুরগি পালন করেন। আবার অনেকেই দিনমজুরের কাজ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৮
এমবিএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।