ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রাষ্ট্রপতির ভাষণের আলোচনায় মন নেই, খোশগল্পে এমপিরা

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৮
রাষ্ট্রপতির ভাষণের আলোচনায় মন নেই, খোশগল্পে এমপিরা জাতীয় সংসদ অধিবেশন (ফাইল ফটো)

ঢাকা: দেশের সর্বোচ্চ আইন প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান জাতীয় সংসদের অধিবেশন চলছিলো তখন। রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনা করছিলেন আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ডা. ইউনুস আলী। কিন্তু তার আলোচনায় যেন কারও মনোযোগ নেই। কেউ কেউ মত্ত জটলা বেধে খোশগল্পে, কেউ কেউ করছিলেন পায়চারি, আবার কেউ অধিবেশন ত্যাগ-যোগদানে সময় কাটাচ্ছিলেন।

আগের দিন অধিবেশন মুলতবি ঘোষণার সময় ডেপুটি স্পিকার সংসদ সদস্যদের রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনার সময় সংসদ ত্যাগের বিষয়ে সতর্ক করলেও সোমবার (১৫ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টার সময় ডা. ইউনুসের আলোচনাকালে ওই সতর্কতা মানার তাগিদ দেখা যায়নি কারও মধ্যে।

সরকারের বিগত দিনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও আগামী দিনের নির্দেশনা দিয়ে চলতি অধিবেশনের শুরুর দিন ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

চলতি ১৯তম অধিবেশন শুরু আগে স্পিকারের সভাপতিত্বে কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে নির্ধারিত হয়, রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ৪৫ ঘণ্টা আলোচনা হবে।  

রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনা শেষে বক্তব্যটি সংসদে গ্রহণ করার কথা। ভাষণের ওপর আলোচনায় প্রতিদিনই কয়েকজন করে সদস্যের নাম থাকে। রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে সংসদ সদস্যরা নিজ এলাকার সমস্যাও তুলে ধরার সুযোগ পেয়ে থাকেন।  

কিন্তু সোমবার সংসদের সাংবাদিক গ্যালারিতে বসে দেখা যায়, মন্ত্রী-এমপিরা ভাষণের ওপর আনীত বক্তব্যের আলোচনায় মনোযোগী না হয়ে খণ্ড খণ্ড জটলা বেধে গল্প করছেন।  

সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অধিবেশন ত্যাগ করার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিদিনই প্রায় এমন ঘটনা ঘটছে। সোমবারও প্রধানমন্ত্রী চলে যাওয়ার পর ট্রেজারি বেঞ্চের অধিকাংশ সদস্যই চলে যান। যারা ছিলেন তারাও মত্ত হন গল্পে।
 
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের পাশের চেয়ারে বসে গল্প করতে দেখা যায় হুইপ ইকবালুর রহিমকে। কিছুক্ষণ পরে সেখানে এসে যোগ দেন আব্দুর রহমান এবং আ খ ম জাহাঙ্গীর।
 
অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হককে দেখা যায় চেয়ার ঘুরিয়ে পেছনের সারিতে বসা নতুন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামালের সঙ্গে গল্প করতে। পাশে ছিলেন অধ্যাপক আলী আশরাফ ও রেজাউল করিম হীরা।
 
নিজের আসন ছেড়ে মাঝের সারিতে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের পাশে বসে গল্প করছিলেন সাবিনা আক্তার তুহিন, সঙ্গে ছিলেন আরেক সদস্য। জাহিদ আহসান রাসেল ও গোলাম রাব্বানীকেও দেখা যায় পাশাপাশি সিটে বসে  গল্প করতে।
 
সম্প্রতি স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া তাহজীব আলম সিদ্দিকীকে দেখা যায় সংসদের ভেতরে এপাশ-ওপাশ করতে। কিছুক্ষণ পর দেখা যায়, শেখ হেলাল উদ্দীনের কাছাকাছি একটি চেয়ারে বসতে। তবে সেখানে আগে থেকেই একজন গল্প করছিলেন। শেষ পর্যন্ত সুযোগ না হওয়ায় অধিবেশন থেকেই বেরিয়ে যান তাহজীব। ডা. ইউনুস আলীর বক্তব্যের সময় অধিবেশন ত্যাগ করেন রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক এবং নূরজাহান বেগমও।
 
নিজের আসন ছেড়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমামের পাশে বসে গল্প করতে দেখা যায় ওই দলের আরেক সদস্য ইয়াহিয়া চৌধুরীকে।  

অথচ কার্যপ্রণালী বিধিতে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়, কোনো সদস্য বক্তব্য দেওয়ার সময় সংসদের ভেতর দিয়ে চলাচল করা কিংবা পত্রিকা পড়া যাবে না।
 
এর আগে রোববার (১৪ জানুয়ারি) অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করার আগে ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া সংসদ সদস্যদের সর্তক করে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনার সময় আপনারা কেউ কেউ সংসদ ত্যাগ করছেন, যা দৃষ্টিকটূ ও কার্যপ্রণালী বিধির ব্যত্যয়। অনুগ্রহ করে আগামী দিনগুলোতে বিষয়টি অনুধাবন করে চলবেন। ’
 
বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) একটি গবেষণা প্রতিবেদন মতে, জাতীয় সংসদ পরিচালনায় প্রতিটি মিনিটে রাষ্ট্রের গড়ে খরচ হয় এক লাখ ৬২ হাজার ৪৩৪ টাকা।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৮
এসএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।